সম্প্রতি গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) ১৯৭২ সংশোধনের খসড়ার চূড়ান্ত অনুমোদন পাওয়ার পর নির্বাচন কমিশন গাইবান্ধার মতো ভোট বাতিলের ক্ষমতা হারাতে যাচ্ছে বলে আলোচনা তৈরি হয়। তবে এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশনার (ইসি) রাশেদা সুলতানা মনে করেন, ভোট বাতিলের ক্ষমতা হারায়নি নির্বাচন কমিশন।
রোববার (২১ মে) রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে সাংবাদিকদের প্রশ্নে ইসি রাশেদা সুলতানা এ মন্তব্য করেন।
রাশেদা সুলতানা বলেন, ‘নতুন আইনে ফলাফল ঘোষণার পরও একই ক্ষমতা চেয়েছিল ইসি। সেটা সম্ভবত সরকার দিচ্ছে না। তবে কেন্দ্রের ভোটের ফল প্রকাশের পরও বাতিল করতে পারবে কমিশন। সুতরাং খসড়ায় নির্বাচন চলাকালীন ভোট বাতিলের ক্ষমতা খর্ব করা হয়নি। গাইবান্ধার মতো ভোট চলাকালীন নির্বাচন বাতিলের ক্ষমতা আগের মতোই থাকছে। তবে ফল ঘোষণার পরও পুরো আসনের ভোট বাতিলের ক্ষমতা দিলে সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য আরও সহায়ক হতো।’
তিনি বলেন, ‘গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশে (আরপিও) নির্বাচন বন্ধ করার জন্য প্রধান অনুচ্ছেদ যেটা, সেটা কিন্তু ৯১-এর ‘ক’। একটা নির্বাচনে তিনটা পর্যায়। প্রথম হলো নির্বাচন পূর্ব, আরেকটা হলো নির্বাচন চলাকালীন, একটা নির্বাচনের পরবর্তী, এই তিনটা ধাপের মধ্যে ৯১-এর ‘ক’ যেটা আছে সেটা কিন্তু নির্বাচন পূর্ব পর্যন্ত, নির্বাচন চলা পর্যন্ত। ওইখানে কমিশনের একটা ক্ষমতা দেওয়া আছে। সেই ক্ষমতায় কমিশন কোনোরকম অনিয়ম বা কারচুপি যেটাই হোক, নির্বাচন কমিশনের নজরে এলে যদি দেখে এরকম, তাহলে নির্বাচন বন্ধ করে দিতে পারে। এইটা তো আছেই আইনে, এক্সিসটিং।’
সাবেক এই জেলা জজ বলেন, ‘আমরা যেটা এখানে এসে দেখলাম, নির্বাচনের ফলাফলের তিনটা পর্যায়। আপনারা জানেন যে, সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তারা কেন্দ্রে কেন্দ্রে একটা রেজাল্ট দেন, এই রেজাল্ট চারটা কপি করা হয়। একটা প্রার্থীদের জন্য, একটা সাঁটানোর জন্য, একটা রিটার্নিং কর্মকর্তার জন্য, আরেকটা কপি করতে হয়। এগুলো করার পর সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা ফলাফল ঘোষণা করে রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে পাঠান। কিন্তু তিনি কেন্দ্রে নয় অন্যখানে থাকেন। এরপর তিনিও ফলাফল ঘোষণা করেন। সেই রেজাল্ট কিন্তু প্রাইমারি রেজাল্ট। ওইটা চূড়ান্ত না। ওইটার ওপর কিন্তু কে জিতল তার কার্যক্রম শুরু হবে না। শুরু হবে কখন, যখন কমিশন থেকে গেজেট হবে।’
ইসি রাশেদা বলেন, ‘রিটার্নিং কর্মকর্তা ফলাফল ঘোষণার পর এবং কমিশনে ফলাফল পাঠানোর সময় কিন্তু অনেক সময় অভিযোগ আসে। কিন্তু এই সময়টার মধ্যে কোনো অভিযোগ আসলে কমিশনের হাতে কোনো ক্ষমতা নাই। সেই অভিযোগের বিষয়ে কমিশন কিছু করতে পারে না। তাকে গেজেটটা করে দিতে হয়। যদি বড় ধরনের কোনো অভিযোগ থাকে, যে সত্যিকার অর্থেই বড় কোনো অনিয়ম ঘটে গেছে, সেটা রেখেই যদি একটা গেজেট করে দেয়া হয়, তখন কিন্তু যারা অভিযোগ তোলেন তাদের একটা কষ্ট থেকেই যায়। কমিশনের প্রতি একটা অনাস্থা থেকেই যায়, যে আমরা একটা অভিযোগ দিলাম, কমিশন যাচাই-বাছাই কিছু না করে রিটার্নিং কর্মকর্তা যে রেজাল্ট দিলো সেটাই তারা বাস্তবায়ন করে ফেলল। একটা ক্ষোভ তৈরি হয়।’
তিনি বলেন, ‘বিভ্রান্তি যেটা হয়েছে, অনেকে মনে করছেন যে, ৯১(ক)-তে যে ক্ষমতাটা ছিল, ভোট চলাকালীন নির্বাচন বন্ধ করে দেওয়ার, যে সুযোগটা সেটা বোধ হয় খর্ব হয়েছে, বিষয়টা তা নয়। আমি যতটুকু বুঝি, ওইটা তো হবেই না। কেননা, আমরা তো সেটা চাই-ই নাই। সেখানে প্রস্তাবনা হলো- ৯(ক)-এর সঙ্গে ‘ক(ক)’ বলে আরেকটা উপ-অনুচ্ছেদ যোগ করে দেওয়া। রিটার্নিং অফিসার ফলাফল প্রকাশের পর থেকে গেজেট হওয়ার আগ পর্যন্ত সময়টা অনিয়ম হলে যেন ব্যবস্থা নেওয়া যায়, সেই ক্ষমতাটা চাওয়া হয়েছে।’
গাইবান্ধার মতো ভোট বন্ধ করতে পারবেন কিনা, এমন প্রশ্নের জবাবে এই নির্বাচন কমিশনার বলেন, ‘আমি যতটুকু বুঝি যে, আমরা পারবো। কারণ, আমরা ৯১(ক) নিয়ে কোনো প্রস্তাবনাই দেইনি। যেটা প্রস্তাবনায় যায় নাই, সেটা তো বাতিল হওয়ার কোনো কারণ আছে বলে মনে হয় না।’