নিজস্ব প্রতিবেদক- মাদক ব্যবসায় বাধা দেওয়ার জের ধরে রাজবাড়ী জেলার গোয়ালন্দ উপজেলার ছোট ভাকলা ইউনিয়ন পরিষদের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের মেম্বার ও ভাগলপুর গ্রামের বাসিন্দা তোরাপ আলী খানের ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দেওয়া, এমনকি তাকে হত্যার হুমকী দিচ্ছে এলাকার চিহ্নিত ও জেলা পুলিশের তালিকাভুক্ত মাদক সম্রাট, চরমপন্থী নেতা জলিল (জুইল্যা) (৫৫) বাহিনী।
এরই ধারাবাহিকতায় গতকাল ২রা মে বিকেলে মাদক সম্রাট জলিল ও তার বাহিনী মেম্বার তোরাপ আলী ও তার স্ত্রী অসুস্থ শাশুরীকে দেখে ফেরার পথে জনসম্মুখেই তাদের উপর হামলা করে। তারা তাৎক্ষনিক বিষয়টি রাজবাড়ী জেলা পুলিশ সুপার আসমা সিদ্দিকা মিলি (বিপিএম) কে অবহিত করলে তিনি গোয়ালন্দ ঘাট থানায় লিখিত অভিযোগ করার পরামর্শ দিলে মেম্বার তোরাপ আলী খান বাদী হয়ে থানায় একটি লিখিত অভিযোগ করেন। গোয়ালন্দ ঘাট থানার জিডি নং-৫০। এ ঘটনায় আরও ক্ষিপ্ত হয়ে উঠেছে জলিল ও তার বাহিনী।
এ প্রসঙ্গে ভুক্তভোগী ও হামলার শিকার ইউপি সদস্য তোরাপ আলী খান বলেন, গতকাল আমি ও আমার থানায় অভিযোগ করে ফেরার সময় আবার পথরোধ করে আমার পরিবারসহ আমাকে হত্যার পাশাপাশি বাড়িঘর জ্বালিয়ে দেবার হুমকি দিয়েছে তারা। অন্যথায় বাড়িঘর বিক্রি করে এলাকা ছেড়ে চলে যেতে হুমকী দিচ্ছে বারবার।
তিনি বলেন, গোয়ালন্দের চাঞ্চল্যকর ডিম্পল (২৮) হত্যা মামলার মূল হোতা মাদক সম্রাট জলিলের ভাগিনা ও বিশাল মাদক ব্যবসা নিয়ন্ত্রনে তার প্রধান সেনাপতি সেলিম শেখ (৩৭) কে গত ৮ই মার্চ রাতে রাজবাড়ী ডিবি পুলিশ গ্রেফতার করে। গত বছরের ৭ই মার্চ জলিল, তার ছেলে আলিম, জাহাঙ্গীর, মিঠু, টিটু আমার বাড়িতে হামলা করে ব্যাপক ভাংচুর করেছিল। এর আগেও একাধিকবার তারা কয়েকদফা আমার বাড়িতে হামলা করেছিল। আমি ইউপি সদস্য হিসেবে মাদক ব্যবসায় বাধা দেওয়াই আমার মূল অপরাধ।
জানা যায়, গত ২০১৫ সালের ৪ অক্টোবর সন্ধ্যায় মাদক ব্যবসায় বাধা দেওয়ায় একই গ্রামের এমদাদুল (ডিম্পল ২৫) নামের একজন যুবককে ধরে আজিবরের ইটভাটা এলাকার আজাহার প্রামানিকের পতিত জমির মধ্যে নিয়ে এলোপাতারীভাবে কুপিয়ে ও গলা কেটে হত্যা করে জলিলের ছেলে জাহাঙ্গীর, টিটু ও ভাগিনা সেলিম। প্রায় দেড় বছর পলাতক থাকার পর গত ৮ই মার্চ রাতে রাজবাড়ীর ডিবি পুলিশ সেলিমকে গ্রেফতার করে ৯ই মার্চ আদালতে পাঠালে সে স্বীকারোক্তিমুলক জবানবন্দী প্রদান করায় জবাববন্দী শেষে বিজ্ঞ আদালত তাকে জেল হাজতে প্রেরণ করলে কয়েক মাস পর জামিনে বেড়িয়ে এসে আরও বেপরোয়া হয়ে উঠেছে।
সম্প্রতি এই হত্যা মামলার অন্যতম আসামী জলিলের ছেলে জাহাঙ্গীরও কয়েক মাস কারাভোগ শেষে গত সপ্তাহে জামিনে বেড়িয়ে এসে এলাকায় ত্রাস সৃষ্টি ও মেম্বারসহ এলাকার অনেককেই বিভিন্ন হুমকী দিচ্ছে।
তার কয়েকদিন আগে একরাতে ছোট ভাগলপুর গ্রামের মাইনদ্দিন নামের এক যুবককে হত্যার উদ্দেশ্য এলোপাতারি কোপালেও তাৎক্ষনিক গ্রামবাসী মূমুর্ষ অবস্থায় তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠালে কপালের জোরে সে বেচে যায়। কিছুদিন আগে মাদক সম্রাট জলিলের আপন ভাতিজা সুজন তার মাদক ব্যবসার প্রতিবাদ করলে তাকেও হত্যার চেষ্টা করে তারা।
এবিষয়ে সুজনের বাবা, জলিলের আপব ভাই বাবলু সেক জানান, আমার ভাই মাদক ব্যবসা করে তা গোটা জেলা বাসীই জানে। সেদিন আমার ছেলে সুজন তাদেরকে বলে যে তোরা মাদক ব্যবসা করলে এলাকার লোকজন আমাদেরকে ঘৃনার চোখে দেখে। আমরা এখন বড় হয়েছি। মানুষ নানা রকমের বাজে কথাবার্তা বলাবিল করে তাতে কি আমাদের সম্মান থাকে? তোরা মাদক ব্যবসা ছেড়ে না দিলে আমরা মানুষের মাঝে সম্মানের সাথে চলতে পারিনা।
এ ঘটনায় ক্ষিপ্ত জলিল, জলিলের ছেলে মিঠু, টিটু, আলিম ও ভাগিনা সেলিম মিলে তাদের বাড়ির সামনের দোকানে আমার ছেলে সুজনকে মেরে ফেলার চেষ্টা করে। আমরা খবর পেয়ে তাৎক্ষনিক ঘটনাস্থলে পৌছে রক্তাক্ত সুজনকে অচেতন ও মূমুর্ষ অবস্থায় উদ্ধার করে হাসপাতালে নিলে তার মাথায় প্রায় ৩০ টি সেলাই দেয় ডাক্তার। এমনকি হাসপাতাল থেকে ফেরার পর তাকে আবার হত্যার হুমকী দিচ্ছে জলিল বাহিনী।
গত সপ্তাহে একই কারনে গ্রামের রবিউল ও সুজাত নামের দুই যুবককে মেরে রক্তাক্ত করেছে তারা। তাদের একমাত্র অপরাধ মাদক ব্যবসায়ের প্রতিবাদ করা। তার মাস খানেক আগে ছোট ভাগলপুর গ্রামে ইছহাকের ছেলে রুবেল ও গোপালের ছেলে সুজন নামে অপর দুই যুবককে মেরে রক্তাক্ত করে। সর্বশেষ তারা গতকাল ফের হামলা করে ইউপি সদস্য তোরাপ আলী খান ও তার স্ত্রীর উপর।
এ প্রসঙ্গে রাজবাড়ীর নিষ্ঠাবান ও দায়িত্বশীল জেলা প্রশাসক শওকত আলীর বক্তব্য জানতে চাইলে তিনি বলেন, বিষয়টি আমাকে অবগত করার জন্যে ধন্যবাদ। আমি যতদিন এই জেলায় ডিসি হিসেবে আছি, ততদিন কোন মাদক ব্যবসায়ী কিংবা সন্ত্রাসীই জেলায় শান্তিতে থাকতে পারবে না। আমি ঘটনাটির সুষ্ঠু তদন্ত করে যথাযথ আইনগত ব্যবস্থা গ্রহনে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দিচ্ছি।