তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়্যিপ এরদোগান নতুন করে প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব নেয়ার পর ১০০ দিনের কর্মপরিকল্পনা ঘোষণা করেছেন। নতুন মন্ত্রিসভার জন্য শুক্রবার তিনি এ ঘোষণা দেন। তুরস্কের রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম আনাদলু এজেন্সি এ খবর প্রকাশ করেছে।
১০০ দিনের পরিকল্পনার মধ্যে মোট ১০০০ প্রকল্প রয়েছে। এর মধ্যে ৪৮টি প্রকল্প দেশটির প্রতিরক্ষাবিষয়ক। এসব প্রকল্প নিয়ে কোনো পুনর্মূল্যায়ন করা হবে না এবং ১০০ দিনের মধ্যে তা বাস্তবায়ন করা হবে।
এছাড়া আগামী ২০১৯ সাল থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত কৌশলগত পরিকল্পনা প্রণয়নের কাজ করছে এরদোগান সরকার। চলতি বছরের নভেম্বরের মধ্যেই এ পরিকল্পনার কাজ চূড়ান্ত করা হবে।
শুক্রবার প্রেসিডেন্টশিয়াল কমপ্লেক্সে কর্মপরিকল্পনা ঘোষণার সময় এরদোগান বলেন,আগামী ১০০ দিনে এক হাজার প্রকল্পের কাজ শেষ করা হবে। এর মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ ৪০০টি প্রকল্পের নাম ঘোষণা করেন তিনি।
বিচারব্যবস্থা বিষয়ে এরদোগান ফেতুল্লাহ গুলেনের সন্ত্রাসী সংগঠনকে উদ্ধৃত করে বলেন, ফেতো আমাদের বিচারব্যবস্থার যে ক্ষতি করেছে তা ঠিক করতে দীর্ঘপথ অতিক্রম করতে হবে।
বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থানরত তুর্কি নেতা ফেতুল্লাহ গুলেন ও তার সংগঠন ফেতো ২০১৬ সালের ১৫ জুলাই দেশটিতে ব্যর্থ সেনা অভ্যুত্থান ঘটায়। ওই ঘটনায় ২৫১ জন নিহত ও ২ হাজার ২০০ জন আহত হয়েছিল।
এরদোগান আরও বলেছেন, কার্যকর পরিকল্পনা প্রণয়নের সঙ্গে সঙ্গে ‘ইস্তাম্বুল ক্যানাল’ তৈরির পরিবেশগত প্রভাব মূল্যায়ন করা এবং জরিপ কাজ চালানো হবে।
এরদোগানের ১০০ দিনের পরিকল্পনার মধ্যে রয়েছে-
পররাষ্ট্রনীতি: ১০০ দিনের মধ্যে দূতাবাস সংখ্যা ১৬৩ থেকে বাড়িয়ে ২৪০টি করা এবং ইরাকের মসুল ও বসরায় পুনরায় দূতাবাস স্থাপন করা। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্কের বিষয়ে তুর্কি প্রেসিডেন্ট বলেন, আমরা আশা করব মানবিজে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে যৌথ কার্যক্রম প্রভাবিত হবে না। অন্যান্য বিষয়ে আমাদের মধ্যে যতই বিরোধ থাকুক না কেন আমরা মানবিজে একসঙ্গে কাজ করব।
যুক্তরাষ্ট্র ও তুর্কির মধ্যে মানবিজ নিয়ে বোঝাপড়ায় উভয়পক্ষ নজর দিচ্ছে পিকেকে সংশ্লিষ্ট ওয়াইপিজে সন্ত্রাসী গ্রুপকে সিরিয়ার শহর থেকে প্রত্যাহার করে সেখানকার পরিবেশ স্থিতিশীল করা।
তুরস্ক আশা করছে, আড়াই লাখ সিরিয়ানকে তাদের দেশের নিরাপদ অবস্থানে ফেরত পাঠাবে। উল্লেখ্য, তুরস্ক বিপুলসংখ্যক সিরিয়ানকে তাদের দেশে শরণার্থী হিসেবে আশ্রয় দিয়েছে।
ফিলিস্তিনের প্রতি তুরস্কের সমর্থন অব্যাহত থাকবে বলে প্রেসিডেন্ট পুনরায় অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন।
অর্থনীতি ও জ্বালানি: এরদোগান বলেন, আমরা অর্থনৈতিক যুদ্ধে অবতীর্ণ হয়েছি। তবে উদ্বিগ্ন হবেন না। আমরা এটা জয় করব।
এরদোগান তুর্কি নাগরিকদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, বিদেশি মুদ্রা ও সোনার পরিবর্তে তুর্কি মুদ্রা লিরা ব্যবহার করতে হবে।
নতুন যুগে চীন, মেক্সিকো, রাশিয়া ও ইন্ডিয়ার বাজার তুরস্কের রফতানির ক্ষেত্রে প্রাধান্য পাবে বলে প্রেসিডেন্ট মন্তব্য করেন।
বিদ্যুতের চাহিদা পূরণের বিষয়ে এরদোগান নিউক্লিয়ার এনার্জির কথা বলেন। তিনি বলেন, একটি নিউক্লিয়ার পাওয়ার প্লান্ট চলমান রয়েছে এবং আরও দুটি নির্মাণের পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে।
গবেষণা ও উন্নয়নের জন্য তুরস্ক আরও গবেষণা প্রতিষ্ঠান স্থাপন করবে। নতুন প্রজন্মের জন্য সফটওয়্যার, আইটি, স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও চলচ্ছিত্র তৈরিতে মুক্ত অঞ্চল তৈরি করা হবে।
সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রজেক্ট হিসেবে এরদোগান অক্টোবর ২৯ তারিখে উদ্বোধন হতে যাওয়া ইস্তাম্বুলের নতুন বিমানবন্দরের কথা বলেন। এই বিমানবন্দর পৃথিবীর তৃতীয় বৃহত্তম বিমানবন্দর হতে যাচ্ছে। প্রথম ধাপে এটি বছরে ৯ কোটি যাত্রীকে সেবা দিতে সক্ষম হবে।
তুর্কি প্রেসিডেন্ট ঘোষণা করেন, ইন্টারনেট সেবার জন্য ৫-জি ও আরও উন্নত দেশীয় প্রযুক্তি চালু করা হবে।