নির্যাতন, নিপীড়ন কিংবা সংঘর্ষের জেরে আহত হওয়ার পর মামলা করার একটা নিয়ম রয়েছে। তা হল, মামলার জন্য যে মেডিকেল সার্টিফিকেট প্রয়োজন পড়ে, চিকিৎসা কর্তৃপক্ষ তাৎক্ষণিকভাবে তা দেয় না। এজন্য সরকারি হাসপাতালের ‘পুলিশ কেস’ সিল মারা প্রেসক্রিপশন দেখাতে হয় থানায়। মামলা করার পর পুলিশ হাসপাতাল থেকে আহত ব্যক্তির মেডিকেল সার্টিফিকেট সংগ্রহ করে থাকে।
আইনের এই সুযোগটিই নিচ্ছে একটি অসাধু চক্র ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে (ঢামেক)। অভিযোগ রয়েছে, কেউ হামলা-নির্যাতন-নিপীড়নের শিকার হয়ে এখানে চিকিৎসা করাতে এলে ‘পুলিশ কেস’ সিলের জন্য তাকে টাকা দিতে বাধ্য করা হয়। এই টাকার পরিমাণ ২০০ থেকে ৫০০ টাকা।
টাকাটা নিয়ে থাকে ‘পুলিশ কেস’ সিল রাখা কাউন্টারের কর্তব্যরত ব্যক্তিরা। অথচ এ ধরনের টাকা আদায়ের কোনো আইন বা নিয়ম নেই। আইন না থাকলেও কেউ টাকা প্রদানে অসম্মতি জানালে তাকে ধমক দিয়ে বিদায় করা হয়। অনিয়মের এখানেই শেষ নয়।
ঢামেক হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে হলে ১০ টাকা দিয়ে টিকিট কাটার নিয়ম থাকলেও নেয়া হয় সর্বনিু ১৫ টাকা, এরপর জরুরি বিভাগে ভর্তির জন্য ১৫ টাকার টিকিটের জন্য দিতে হয় সর্বনিু ২০ টাকা। এমনকি রোগীর সাহায্যকারী হিসেবে দর্শনার্থী পাসের জন্য যেখানে ফেরতযোগ্য ২০০ টাকা দিতে হয়, সেখানে আদায় করা হচ্ছে ২২০ টাকা এবং ফেরত দেয়ার সময় ওই টাকা থেকে ২০ টাকা কেটে নেয়া হয়।
ঢামেক হাসপাতালের চিকিৎসায় এতক্ষণ যা বলা হল, তা নিঃসন্দেহে অনাচার। টাকার অঙ্ক কম হলেও দুর্নীতি দুর্নীতিই। তাছাড়া এই হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে যান সাধারণত নিম্ন আয়ের রোগী। তাদের কাছ থেকে নিয়মবহির্ভূতভাবে টাকা আদায় নিঃসন্দেহে গুরুতর অপরাধ। এই অপরাধ কে দূর করবে? টাকার অঙ্ক কম বলেই হয়তো ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ বিষয়টিতে গা করছে না।
অথবা হতে পারে, অন্যায়ভাবে টাকা আদায়ের সঙ্গে যারা জড়িত, তারা একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট আর তাই তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া যাচ্ছে না। আমরা মনে করি, এই অন্যায়ের সুরাহা হওয়া দরকার। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ যদি এই অনাচার দূর করতে এগিয়ে না আসে, তাহলে দুর্নীতি দমন কমিশন বিষয়টিকে তদন্ত করতে পারে। ভুক্তভোগীদেরও একই কথা। তারাও বলছেন, দুর্নীতি দমন কমিশনই পারে অতিরিক্ত টাকা আদায়ের অন্যায় রোধে পদক্ষেপ নিতে। আমরাও সেটাই বলছি।