একবছর ঝুলে থাকার পর অবশেষে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য সোমবার (৮ আগস্ট) মন্ত্রিসভায় উঠছে ‘সড়ক পরিবহন আইন’। গতবছর আইনটির খসড়া মন্ত্রিসভার বৈঠকে অনুমোদন পেলেও শ্রমিক সংগঠনগুলোর আপত্তি ও কর্মসূচির হুমকির মুখে আর বেশিদূর এগোয়নি। কিন্তু গত ২৯ জুলাই রাজধানীতে সড়ক দুর্ঘটনায় রমিজউদ্দিন ক্যান্টমেন্ট কলেজের দুই শিক্ষার্থী নিহত হওয়ার পর প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে আইনটি আবারও মন্ত্রিসভায় তোলা হচ্ছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র নিশ্চিত করেছে।
জানা গেছে, ‘সড়ক পরিবহন আইন-২০১৮’ শিরোনামের আইনটি খসড়ায় গাড়ি দিয়ে মানুষ হত্যা করলে মৃত্যুদণ্ড এবং আহত করার দায়ে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের বিধানের প্রস্তাব করা হয়েছে। তবে বেপরোয়াভাবে গাড়ি চালিয়ে মৃত্যু ঘটালে তার শাস্তি হবে ৩ বছরের কারাদণ্ড। এছাড়া লাইসেন্স নেওয়ার ক্ষেত্রে চালকদের শিক্ষাগত যোগ্যতা বেঁধে দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি উল্টো পথে বা ফুটপাত দিয়ে গাড়ি চালালোর ক্ষেত্রে শাস্তি হিসেবে জেল-জরিমানার প্রস্তাব করা হয়েছে।
আইন মন্ত্রণালয়ের সূত্র জানায়, নতুন এই আইনে দুর্ঘটনার জন্য দণ্ডবিধি অনুযায়ী শাস্তির বিধান রাখা হয়েছে। সে ক্ষেত্রে সড়কে গাড়ি চালাতে গিয়ে মানুষ হত্যা করলে ৩০২ ধারা অনুযায়ী শাস্তি হবে মৃত্যুদণ্ড। আহত করলে শাস্তি হবে ৩০৪ ধারা অনুযায়ী যাবজ্জীবন কারাদণ্ড। বেপরোয়া গাড়ি চালানোর পরিপ্রেক্ষিতে মানুষের মৃত্য হলে এরও শাস্তি হবে মৃত্যদণ্ড।
এছাড়া রাস্তায় পাল্লা দিয়ে গাড়ি চালানোর ফলে দুর্ঘটনা ঘটলে এর শাস্তি হবে তিন বছরের কারাদণ্ড বা ২৫ লাখ টাকা জরিমানা বা উভয়দণ্ড। তবে রাস্তায় পাল্লা দিয়ে গাড়ি চালাতে গিয়ে কোনও দুর্ঘটনা না ঘটলেও তার জন্য সর্বোচ্চ ২ বছরের কারাদণ্ড বা ২ লাখ টানা জরিমানা বা উভয় দণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে। এছাড়া, ফিটনেস বিহীন গাড়ি চালানোর উদ্দেশ্যে রাস্তায় নামালে তার শাস্তির বিধান রাখা হয়েছে একবছরের জেল বা একলাখ টাকা জরিমানা বা উভয়দণ্ড।
নতুন এই আইনে মোটরযানের মালিকেরও শাস্তির বিধান রাখা হয়েছে। এ প্রসঙ্গে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বাংলা ট্রিবিউনকে জানিয়েছেন, ‘সড়কের শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে সরকার এ উদ্যোগ নিয়েছে। সুষ্ঠু সড়ক পরিবহন ব্যবস্থায় যা করা প্রয়োজন, আইনে তাই রাখা হয়েছে।’
সড়ক পরিবহন মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, নতুন এই আইনে পেশাদার অপেশাদার উভয় চালকের জন্য শিক্ষাগত যোগ্যতা ও ড্রাইভিং লাইসেন্স গ্রহণ বাধাতামূলক করে দেওয়া হয়েছে। গাড়ি চালনার জন্য লাইসেন্স পেতে হলে সে ক্ষেত্রে চালকের সর্বনিম্ন শিক্ষাগত যোগ্যতা হবে ৮ম শ্রেণি। আর চালকের হেলপারের শিক্ষাগত যোগ্যতা হতে হবে ৫ম শ্রেণি। এর ব্যত্যয় হলে শাস্তির বিধান রাখা হয়েছে ৬ মাসের কারাদণ্ড বা ৫০ হাজার টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ড। পাশাপাশি এই ক্ষেত্রে বিনা পরোয়ানায় চালককে গ্রেফতার করার বিধানও রাখা হয়েছে।
সূত্র জানায়, ড্রাইভিং লাইসেন্সে ১১টি বিশেষ পয়েন্ট রাখা হয়েছে। বিভিন্ন অপরাধে সেই পয়েন্টগুলো কাটা হবে। একসময় পয়েন্ট কাটতে কাটতে যদি তা শূন্যের কোটায় চলে আসে, তাহলে অটোমেটিকভাবেই লাইসেন্স বাতিল হয়ে যাবে। এছাড়া নতুন এই আইনে মোটরযান চলাচলে সাধারণ অপরাধ হিসেবে ২৫টি নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। নির্দেশনায় নেশাজাতীয় দ্রব্য সেবন করে গাড়ি চালানো নিষিদ্ধ করা হয়েছে। চালকের সহকারী দিয়ে গাড়ি চালানো নিষিদ্ধ করা হয়েছে। মোবইল ফোনে কথা বলতে বলতে গাড়ি চালানো যাবে না। নারী, শিশু, প্রতবন্ধী ও বয়োজ্যেষ্ঠ যাত্রীদের জন্য আসন সংরক্ষিত আসনে যাত্রী বসা নিষিদ্ধ করা হয়েছে। কেউ এই নির্দেশনাগুলো অমান্য করলে ১ থেকে ৩ মাসের জেল বা ৩৫ হাজার টাকা জরিমানা বা উভয়দণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে নতুন আইনে।
সবকিছু ঠিক থকলে কাল সোমবার (০৬ আগস্ট) অনুষ্ঠিতব্য মন্ত্রিসভার নিয়মিত বৈঠকে চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়া হবে। এর পর তা উপস্থাপন করা হবে সংসদের পরবর্তী অধিবেশনে।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘নতুন আইনটি পাস হলে সড়কে শৃঙ্খলা ফিরবে। এছাড়া, মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রীও শক্তিশালী হবেন।’