সঙ্কট মেটাতে বিশেষ বিসিএস’র মাধ্যমে সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে এক হাজার ৩৭৮ জন সহকারী শিক্ষক নিয়োগ দেবে সরকার। এ লক্ষ্যে সম্প্রতি সরকারি কর্ম কমিশনে (পিএসসি) প্রস্তাব পাঠিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ। এছাড়া ৩৫তম ও ৩৬তম বিসিএস থেকে আরও ৯৬১ জন শিক্ষক নিয়োগের প্রক্রিয়া রয়েছে। এসব শিক্ষক নিয়োগ সম্পন্ন হলে ২০১৯ সাল পর্যন্ত সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে কোনও শিক্ষক সঙ্কট থাকবে না। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব মো. সোহরাব হোসাইন বলেন, ‘পিএসসিতে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। পিএসসি বিশেষ বিসিএস’র মাধ্যমে শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষা নিয়ে তাদের সুপারিশ করবে। সুপারিশের ভিত্তিতে সহকারী শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হবে।’
সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক সঙ্কট নিরসনে এর আগে সরাসরি শিক্ষক নিয়োগের প্রস্তাব দেয় মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতর (মাউশি)। গত ১০ এপ্রিল অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ড. মো. মাহাবুবুর রহমান মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিবের কাছে এই প্রস্তাব করেন। প্রস্তাবে এক হাজার ৩৭৮ জন শিক্ষকের জরুরি নিয়োগ চায় মহাপরিচালক।
ওই প্রস্তাবে আরও বলা হয়, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতরের আওতাধীন ৩৪৩টি সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের দুই হাজার ২৬৩ জন সহকারী শিক্ষককের পদ শূন্য রয়েছে। পদ শূন্য থাকায় সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শ্রেণি কার্যক্রম ব্যহত হচ্ছে। শিক্ষক সঙ্কটের বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনায় নিয়ে জরুরিভিত্তিতে নিয়োগ দেওয়া প্রয়োজন।
তবে সরাসরি নিয়োগ দেওয়ার ওই প্রস্তাবের পর গত জুলাইতে দশম গ্রেডে এক হাজার ৩৭৮ জন সহকারী শিক্ষক নিয়োগের জন্য পিএসসির কাছে প্রস্তাব পাঠায় মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ।
মাউশির গত এপ্রিলের তথ্য অনুযায়ী, সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের বাংলা বিষয়ে মোট এক হাজার ৬৫৬ পদের বিপরীতে কর্মরত সহকারী শিক্ষক এক হাজার ২৯৩ জন, শূন্য পদ ৩৬৩টি। ইংরেজি বিষয়ে সৃষ্ট পদ এক হাজার ৬৫৬টি, এর বিপরীতে কর্মরত সহকারী শিক্ষক এক হাজার ২৯৩ জন, শূন্য পদ ৩৬৩টি। গণিতে সহকারী শিক্ষকের সৃষ্ট পদ এক হাজার ২৪২টি, এরমধ্যে কর্মরত সহকারী শিক্ষক ৯৭০ জন, শূন্য পদ ২৭২টি। সামাজিক বিজ্ঞানের সৃষ্ট পদ ৮২৮টি, এরমধ্যে কর্মরত সহকারী শিক্ষক ৬৪৭ জন, শূন্য পদ ১৮১টি। ভৌতবিজ্ঞানে সৃষ্ট পদ ৮২৮টি, এরমধ্যে কর্মরত সহকারী শিক্ষক ৬৪৭ জন, শূন্য পদ ১৮১টি। ব্যবসায় শিক্ষায় সৃষ্ট পদ ৮২৮টি, এরমধ্যে কর্মরত সহকারী শিক্ষক ৬৪৭ জন, শূন্য পদ ১৮১টি। ভূগোলে সৃষ্ট পদ ৪১৪টি, এরমধ্যে কর্মরত সহকারী শিক্ষক ৩২৪ জন, শূন্য পদ ৯০টি। চারুও কারুকলা বিষয়ে সৃষ্ট পদ ৪১৪টি, কর্মরত সহকারী শিক্ষক ৩২৪ জন, শূন্য পদ ৯০টি। শারীরিক শিক্ষা বিষয়ে সৃষ্ট পদ ৪১৪টি, এরমধ্যে কর্মরত শিক্ষক ৩২৪ জন, শূন্য পদ ৯০টি। ইসলাম ধর্মে সৃষ্ট পদ ৮২৮টি, এরমধ্যে কর্মরত সহকারী শিক্ষক ৬৪৭ জন, শূন্য পদ ১৮১টি। আর কৃষি শিক্ষা বিষয়ে সৃষ্ট পদ ৪১৪টি, এরমধ্যে কর্মরত শিক্ষক ৩২৪ জন, শূন্য পদ ৯০টি। এছাড়া আগামী ২০১৯ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত আরও ৭৫ জন শিক্ষক অবসরে যাবেন।
মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, শূন্যপদের বিপরীতে ৩৫তম বিসিএস থেকে নিয়োগের প্রক্রিয়ায় রয়েছে ৬১০ জন এবং ৩৬তম বিসিএস থেকে ৩৫১ জন। আর মাউশির প্রস্তাব দেওয়া বিশেষ বিসিএস থেকে নিয়োগ দেওয়া হবে এক হাজার ৩৭৮ জন। ২০১৯ সালের মধ্যে অবসরে যাওয়া ধরে মোট পদের বিপরীতে নিয়োগ দেওয়া হবে দুই হাজার ৩৩৯ জন সহকারী শিক্ষক।
শিক্ষক সংকট মোকাবিলায় এ নিয়োগের বিষয়ে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব মো. সোহরাব হোসাইন বলেন, ‘২০১৯ সাল পর্যন্ত শিক্ষকের চাহিদা অনুযায়ী শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে।’