গুজবে কান না দিতে দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘আধুনিক প্রযুক্তির শিক্ষার জন্য ডিজিটাল বাংলাদেশ করে দিয়েছি। অশ্লীল কথা, মিথ্যা কথা আর গুজব ছড়ানোর জন্য নয়। আর যাই হোক প্রযুক্তির ব্যবহার করে গুজব ছড়ানো কখনও সহ্য করা যায় না। কাজেই সবাইকে বলবো কেউ গুজবে কান দেবেন না। এগুলো থেকে বিরত থাকতে হবে।’
রবিবার (১২ আগস্ট) রাজধানীর ঢাকা এয়ারপোর্ট মহাসড়কে শহীদ রজিম উদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট স্কুল অ্যান্ড কলেজ পয়েন্টে আন্ডারপাস নির্মাণ কাজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন উপলক্ষে অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।
শহীদ রজিম উদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট স্কুল অ্যান্ড কলেজের দুই শিক্ষার্থীর সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যুর পর প্রধানমন্ত্রী তার অঙ্গীকার অনুযায়ী এই আন্ডারপাস নির্মাণের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। গত ২৯ জুলাই জাবালে নূর পরিবহনের একটি বাস একই কোম্পানির আরেকটি বাসের সঙ্গে যাত্রী উঠা-নামা নিয়ে প্রতিযোগিতাকালে ধাক্কায় শহীদ রমিজ উদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট স্কুল অ্যান্ড কলেজের দুই শিক্ষার্থী দিয়া খানম মীম এবং আবদুল করিম রাজিব ঘটনাস্থলেই নিহত হয়। যার প্রতিবাদে শিক্ষার্থীরা রাজপথে নেমে এলে সারা দেশে এক সপ্তাহের বেশি সময় ধরে অচলবস্থার সৃষ্টি হয়।
রমিজ উদ্দিন স্কুল অ্যান্ড কলেজের দুইজন শিক্ষার্থীর মৃত্যুর ঘটনা প্রসঙ্গ টেনে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ওই চালক সম্পূর্ণ নিয়ম ভেঙ্গে বাস চালাচ্ছিল, যার কারণে দুটো প্রাণ ঝরে গেল। এই দুর্ঘটনাটা কোনদিনই ক্ষমা করা যায় না। এটা ক্ষমার অযোগ্য। এদেরকে আমরা ক্ষমা করবো না। এই ধরনের দুর্ঘটনায় যারা জড়িত তাদের উপযুক্ত শাস্তি দেওয়া হবে।’
শিক্ষার্থীদের আন্দোলন প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘শিক্ষার্থীরা যখন রাস্তায় নেবে এলো। তাদের নিরাপত্তার ব্যবস্থা করলাম। আমরা ধৈর্য সহকারে পরিস্থিতি মোকাবিলা করলাম। অপমানিত হয়েও সকলে আমার কথায় ধৈর্য ধরেছে। কিন্তু তৃতীয় দিনের পরে দেখা গেল প্রচুর শিক্ষার্থী। অবাক লাগলো তাদের অনেকে রাস্তায় দাড়িয়ে সার্ট পরিবর্তন করে স্কুল ড্রেস পরে ছাত্র হয়ে যাচ্ছে। ব্যাগের ভেতর থেকে তারা চাইনিল কুড়াল, পাথর নানা ধরনের জিনিসপত্র বের করছে। প্রশ্ন হলো এরা তাহলে কারা? তারা তো স্কুল ছাত্র হতে পারে না। তখনই আমি চিন্তিত হয়ে পড়লাম। পরে ওইদিন সকালে আমি অন্য একটি অনুষ্ঠানের ভিডিও কনফারেন্সের সময় ছাত্রছাত্রীদের ঘরে ফিরে যেতে আহ্বান জানালাম। শিক্ষক- অভিভাবককে আহবান জানালাম। এই জন্য যে এর মধ্যে তৃতীয় পক্ষ ঢুকে পড়েছে।তারা ছাত্রছাত্রীদের ক্ষতি করে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য হাসিল করতে পারে। তখন তারা আমার ডাকে সাড়া দিয়ে ঘরে ফিরে যায়। এজন্য আমি সবাইকে ধন্যবাদ জানাই।’
প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ‘আওয়ামী লীগ অফিসে আক্রমণ হলো। সেখান থেকে আমার নেতাকর্মীরা ফোন করে জানালেন তারা টিকতে পারছেন না। আমি বললাম ধৈর্য ধরো। পরে দেখলাম এরা তো ছাত্র না। ছাত্র নামধারী কিছু লোক। দর্জির দোকানে খবর নিয়ে জানা গেল সেখানে প্রচুর পরিমাণে স্কুল ড্রেস তৈরি হচ্ছে আর ফেক আইডি কার্ড তৈরি হচ্ছে।’
সরকার প্রধান বলেন, ‘ছাত্র নামধারী যারা ঢুকলো তারা অনুপ্রবেশকারী। তাদের উদ্দেশ্যটা খারাপ ছিলো। কোনও কোনও মহল ফেসবুকসহ সোশ্যাল মিডিয়াতে গুজব ছড়াতে শুরু করলো। আওয়ামী লীগ অফিসে মেরে লাশই রেখে দেওয়ার গুজব ছড়ানো হলো।এই গুজবটা কারা ছড়ালো?’
বাঙালিরা হুজুকে মাতেন মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ তো আমি করে দিয়েছি। জিডিটাল বাংলাদেশ করেছি সুশিক্ষার জন্য, আধুনিক শিক্ষার জন্য। অশ্লীল কথা, মিথ্যা কথা আর গুজব ছড়ানোর জন্য নয়। সবার হাতে এখন মোবাইল ফোন। আধুনিক প্রযুক্তির ফোর জি এসে গেছে। একটা মোবাইল ফোনের মাধ্যমে সবই করা যায়। এই সুযোগটা আমরা করে দিয়েছি। কিন্তু এই প্রযুক্তির ব্যবহার করে মিথ্যা কথা বলে-গুজব ছড়িয়ে একটি অশান্ত পরিবেশ সৃষ্টি করা হচ্ছে। এমনকি অনেক বয়স্ক লোকও করছে।এমনও অনেক লোক আছে যাদের ভালো কাজের জন্য আমি পুরস্কার দিয়েছি। অথচ তারাও গুজব ছড়াতে শুরু করলো। আর যাইহোক এগুলো তো কখনও সহ্য করা যায় না। কাজেই কেউ দয়া করে গুজবে কান দেবে না। এগুলো থেকে বিরত থাকতে হবে। চিলে কান নিয়েছে শুনে চিলের পেছনে ছুটবেন এটা যেন না হয়। কানে হাতটা দিয়ে দেখুন সেটা আছে কি না।’
নিরাপদ সড়ক নিশ্চিত করতে অনুষ্ঠানে উপস্থিত হয়েছেন মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘ আমরা রাজনীতির একমাত্র লক্ষ্য মানুষের সুন্দর জীবন দান করা এবং উন্নত বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলা। দেশকে গড়ে তুলতে ও এগিয়ে নিতে আমরা সেই চেষ্টা অব্যহত রেখেছি।’
পথচারী ও গাড়িচালকদের উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, ‘ফুটওভার ব্রিজ রেখে রাস্তার ওপর দিয়ে বেআইনিভাবে রাস্তা পার হওয়া, এটা তো গ্রহণযোগ্য নয়। সবাইকে ট্রফিক রুল মেনে চলতে হবে। নির্ধারিত জায়গা ছাড়া অন্য কোথাও থেকে রাস্তা পার হওয়া মোটেও ঠিক নয়। চালকদের বলবো স্টোপেজের বাইরে কোথাও যত্রতত্র গাড়ি থামানো যাবে না। এটা হলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তাদের ফাইন করতে হবে। লাইসেন্স ক্যানসেল করতে হবে।’ ওভারট্রাকিংসহ অন্যকোনও অনিয়ম বরদাস্ত করা হবে না বলে তিনি গাড়ি চালকদের হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন।
সরকার প্রধান বলেন, ‘প্রত্যোক আন্ডারপাসের ভেতরে গোপনে ক্যামেরা বসাতে হবে। পর্যাপ্ত লাইটের ব্যবস্থা থাকতে হবে। এটি পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। আমলাদের বলবো- কোনও সমস্যা থাকলে আমাকে সরাসরি বলবেন। আমি সঙ্গে সঙ্গে সমাধান করে দেবো।’
রমিজ উদ্দিন স্কুল অ্যান্ড কলেজে বাস উপহার দেওয়ার প্রসঙ্গ টেনে সরকার প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘অন্যান্য স্কুলের বাস দরকার হলে তা সমাধান করে দেবো। স্কুল ছুটির সময় ও শুরুর সময় একজন ট্রাফিক নিয়োজিত থাকবে। প্লাকার্ড নিয়ে থাকবে। শিক্ষার্থীদের নিরাপদে রাস্তা পার হওয়ার ব্যবস্থা করবেন। আর যেখানে ফুটওভার ব্রিজ দরকার, আন্ডারপাস দরকার বা জেব্রা ক্রসিং দরকার করে দেওয়া হবে।’
অনুষ্ঠানে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘শেখ হাসিনা নেক্সট ইলেকশনের প্রধানমন্ত্রী নন, তিনি নেক্সট জেনারেশেনের প্রধানমন্ত্রী।’ তিনি বলেন, ‘ঢাকা চট্টগ্রাম মহাসড়কে আমরা ৩৪টি ফুটওভার ব্রিজ তৈরি করেছি। কিন্তু দুঃখের বিষয়ে এর মধ্যে ৪টিও ব্যবহারও হয় না। পাশেই ফুটওভার ব্রিজ থাকতে পথচারীরা সেটা ব্যবহার না করে রাস্তা দিয়ে পার হন।’
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন শিক্ষা মন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ ও সেনাবাহিনীর প্রধান লে. জেনারেল আজিজ আহমদ। অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা এইচ টি ইমাম, তিনবাহিনীর প্রধান, স্বরাষ্ট্র ও সড়ক পরিবহন মন্ত্রণালয়ের সচিবসহ সামরিক-বেসামরিক কর্মকর্তারা এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানে জানানো হয়, এইআন্ডারপাস নির্মাণে বিদ্যমান সড়কে যান চলাচলে কোনও ধরনের বিঘ্ন ঘটবে না। এই আন্ডারপাস থেকে পথচারীর পাশাপাশি সাইকেল আরোহীরা ও হুইল চেয়ারে করে অসুস্থ বা প্রতিবন্ধীরা রাস্তা পার হতে পারবেন। সড়ক পরিবহন মন্ত্রণালয়ের অর্থায়নে সেনাবাহিনী এই প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে।