কক্সবাজারের রোহিঙ্গা ক্যাম্প কি অপরাধ জগতে পরিণত হয়েছে? তা না হলে এখানে এ পর্যন্ত ২১ জন রোহিঙ্গা হত্যাকাণ্ডের শিকার হল কীভাবে? এ ছাড়া অতি সম্প্রতি তিনজন সম্ভ্রান্ত কমিউনিটি লিডারকেও হত্যা করা হয়েছে। অঘটন রয়েছে আরও অনেক।
চলতি বছরের আগস্ট পর্যন্ত এক হাজারেরও বেশি রোহিঙ্গাকে হত্যা, ধর্ষণ, মাদক ও মানব পাচারসহ নানা অপরাধে জড়িত থাকার অভিযোগে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। পুলিশ কর্তৃপক্ষ এমনও বলছে, রোহিঙ্গা নারীদের অনেককেই অসামাজিক কাজে লিপ্ত করতে বিক্রি করে দেয়া হচ্ছে।
রোহিঙ্গা ক্যাম্পে নানা ধরনের অপরাধ সংঘটিত হতে পারে, এ ধরনের আশঙ্কা করে আসছিলেন অনেকেই। বস্তুত রোহিঙ্গারা তাদের স্বভূমি থেকে উচ্ছেদ হয়ে বাংলাদেশে এক প্রকার নিঃস্ব হয়েই প্রবেশ করেছে।
বলা হয়ে থাকে, হাংরি বেলি মানুষকে অ্যাংরি করে তোলে অর্থাৎ ক্ষুধার পেট যার, সে খাদ্যের আশায় উন্মত্ত হয়ে পড়তে পারে। রোহিঙ্গারা তাদের মৌলিক চাহিদাগুলো থেকে বঞ্চিত অবস্থায় এসেছে বাংলাদেশে।
রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে তাদের অন্ন-বস্ত্রের জোগান দেয়া হচ্ছে বটে, তবে তাদের অনেকেই মনে করতে পারে প্রাপ্ত সুবিধা তাদের জন্য যথেষ্ট নয়। এ অভাববোধ থেকেই তারা অপরাধে জড়িয়ে পড়বে বলে আশঙ্কা করা হয়েছিল। সেই আশঙ্কাই সত্যে পরিণত হয়েছে।
জাতিগত নির্মূল অভিযানের ফলে গত বছরের আগস্ট থেকে মিয়ানমারের ৭ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে। এর আগেও এখানে অবস্থান করছিল ৩ লাখের বেশি রোহিঙ্গা। এত বিপুল সংখ্যাক রোহিঙ্গাকে নিয়ম-শৃঙ্খলার মধ্যে রাখা কঠিন কাজ বটে।
এটা ঠিক, রোহিঙ্গাদের সবাই অপরাধকর্মে লিপ্ত নয়। তবে যে পরিমাণে অপরাধ সংঘটিত হচ্ছে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে, তাতে সাধারণ নির্দোষ রোহিঙ্গাদের মধ্যে এক ধরনের ভয়ের সংস্কৃতির জন্ম হয়েছে। তাদের কেউ কেউ সংবাদমাধ্যমে তাদের ভয়ের কথা জানাচ্ছেনও। বিশেষ করে তরুণীরা ধর্ষণের আতঙ্কে সন্ত্রস্ত অবস্থায় রয়েছে।
রোহিঙ্গা ক্যাম্পকে কীভাবে অপরাধমুক্ত রাখা যায়- এটা এখন এক বড় প্রশ্ন। কক্সবাজারে আশ্রয় নেয়া ১০ লাখের বেশি রোহিঙ্গার জনজীবনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্বে রয়েছেন মাত্র ১ হাজার পুলিশ সদস্য। এ জনবল নিঃসন্দেহে প্রয়োজনের তুলনায় কম।
সুবিশাল মানবগোষ্ঠীর মাঝে অপরাধ নিয়ন্ত্রণে আরও পুলিশ ফোর্সের প্রয়োজন রয়েছে। কর্তৃপক্ষ এ প্রয়োজন মেটানোর ব্যবস্থা কববে- এটা এক স্বাভাবিক চাওয়া। এ ছাড়া রোহিঙ্গা ক্যাম্পে সার্বক্ষণিক গোয়েন্দা নজরদারিরও প্রয়োজন রয়েছে। আমরা আশা করব, রোহিঙ্গা ক্যাম্পের সব ধরনের অপরাধ দমনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তাদের দক্ষতার পরিচয় দেবে।