রাজনৈতিক অঙ্গনে জোরালোভাবে চলছে নির্বাচন পেছানোর আলোচনা। শোনা যাচ্ছে, নির্বাচন এক সপ্তাহের মতো পেছানো হতে পারে। সেক্ষেত্রে ৩০ ডিসেম্বর ভোটের তারিখ নির্ধারণ হওয়ার বিষয়টি ব্যাপকভাবে আলোচিত হচ্ছে। তবে নির্বাচন পেছাতে বর্তমান তফসিল বাতিল করে নতুন তফসিল দেওয়া হবে, নাকি বিদ্যমান তফসিল বহাল রেখে সময় বাড়ানো হবে, সেটা স্পষ্ট নয়। এদিকে কমিশন বলেছে— সব রাজনৈতিক দল নির্বাচন পেছাতে রাজি হলে তাদের আপত্তি নেই।
সোমবার (১২ নভেম্বর) এ বিষয়ে ইসির সিদ্ধান্ত জানা যেতে পারে, এমন ইঙ্গিত দিয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার কেএম নূরুল হুদা।
প্রসঙ্গত, নির্বাচন কমিশন গত ৮ নভেম্বর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করে। ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ সময় ১৯ নভেম্বর, প্রার্থিতা বাছাই ২২ নভেম্বর ও প্রত্যাহারের শেষ সময় ২৯ নভেম্বর এবং ভোটগ্রহণ ২৩ ডিসেম্বর।
তফসিল ঘোষণার পর থেকেই জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট, বাম গণতান্ত্রিক জোটসহ একাধিক রাজনৈতিক দল ও জোট এর বিরোধিতা করছে। এসব দল ও জোট সব দলের অংশগ্রহণ ও লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত করতে নির্বাচনের তারিখ পেছানোর দাবি করেছে। এদের কেউ কেউ বর্তমান তফসিল বাতিল ও নতুন করে তফসিল দিতে বলেছে। আবার কেউ কেউ পুনঃতফসিল দিয়ে মনোনয়নপত্র জমা ও ভোটের তারিখ পেছাতে বলছে।
রবিবার (১১ নভেম্বর) সংবাদ সম্মেলন করে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণের ঘোষণা দিয়েছে। ইতোপূর্বে এই জোট বর্তমান সরকারের মেয়াদের শেষে ভোটের দাবি তুললেও এখন সেই দাবি থেকে সরে এসেছে। এক্ষেত্রে তারা বর্তমান তফসিল বাতিল করে ভোটের তারিখ একমাস পেছাতে বলছে। প্রেসক্লারে এক সংবাদ সম্মেলনে ঐক্যফ্রন্টের অন্যতম শীর্ষ নেতা ড. কামাল হোসেন বলেন, ‘আমরা নির্বাচনের বর্তমান তফসিল বাতিল করে একমাস পিছিয়ে দিয়ে নতুন তফসিল ঘোষণার দাবি করছি। সে ক্ষেত্রেও বর্তমান সংসদের মেয়াদকালে এই নির্বাচন করা সম্ভব হবে।’
এদিকে, রবিবার নির্বাচন কমিশনে চিঠি দিয়ে বিএনপি, যুক্তফ্রন্টসহ একাধিক দল নির্বাচনের তারিখ পেছানোর দাবি জানিয়েছে। বিএনপি তার চিঠিতে নতুন করে তফসিল দিয়ে নির্বাচন একমাস পেছানোর কথা বলেছে।
নির্বাচনের তফসিল পেছাবে— এমন প্রত্যাশায় রবিবার শেষ দিনেও বাম গণতান্ত্রিক জোট তাদের জোটের শরিকরা কোনও প্রতীকে ভোট করবে সেই তথ্য কমিশনকে জানায়নি। এ বিষয়ে জানতে চাইলে কমিউনিস্ট পার্টির সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম জাগো বাংলা ২৪ ডট কমকে বলেন, ‘আমরা আগেই বলেছি, পুনঃতফসিল দিতে হবে। নির্বাচনের তারিখ পেছাতে হবে। আমরা সেই অপেক্ষায় আছি।’
জাতীয় ঐক্যজোটসহ বিভিন্ন দল ও জোটের নির্বাচনের তারিখ পেছানোর দাবির জবাবে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, নির্বাচন পেছানোর ব্যাপারে দাবি থাকলে, তা নির্বাচন কমিশনের এখতিয়ার। কমিশন যদি সময় বাড়াতে চায়, সেখানে আওয়ামী লীগের কোনও আপত্তি থাকবে না। জাতীয় পার্টির মহাসচিব এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদারও একই ধরনের মন্তব্য করেছেন।
এদিকে, নির্বাচন পেছানোর বিষয়ে রবিবার (১১ নভেম্বর) রংপুরে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে কমিশনার রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘তফসিল পেছানো হবে কিনা, তা সবাই বসে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’
একই দিনে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কেএম নূরুল হুদা বলেন, ‘কোন কোন দল বা জোট নির্বাচন পেছানোর কথা বলেছে, সেই তথ্য আমার দফতরে এখনও আসেনি। নির্বাচন পেছানো হবে কিনা আগামী কাল (সোমবার) তা জানা যাবে।’
কমিশন সূত্রে জানা গেছে, সরকারি দলসহ সব রাজনৈতিক দল একমত হলে নির্বাচনের তফসিল পেছাতে তাদের কোনও ধরনের আপত্তি থাকবে না। তফসিল পেছাতে বেশিরভাগ দলের আগ্রহ ও দাবি আসায় কমিশন এরইমধ্যে প্রাথমিক প্রস্তুতিও শুরু করেছে। জানা গেছে, কমিশনের নীতিগত অবস্থান— তারা এ বছরের বাইরে যাবে না। কাজেই তারা যেটা করবে এর মধ্যেই। এক্ষেত্রে তফসিল একসপ্তাহ পিছিয়ে ভোটের তারিখ ৩০ ডিসেম্বর নির্ধারিত হতে পারে। আর ভোটের তারিখ পেছানো হলে মনোনয়নপত্র জমা, বাছাই ও প্রত্যাহার সব ক্ষেত্রেই পরিবর্তন আসবে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে কমিশনার রফিকুল ইসলাম জাগো বাংলা ২৪ ডট কমকে বলেন, ‘ভোটের তারিখ পেছানোর বিষয়ে কমিশনে এখনও কোনও তথ্য নেই। তবে আমরা আগেই বলেছি, সব রাজনৈতিক দল চাইলে ভোটের তারিখ পেছাতে আমাদের কোনও আপত্তি থাকবে না। যদি সে ধরনের পরিস্থিতি সামনে আসে, তাহলে আমরা বসে সিদ্ধান্ত নেবো।’