অজ্ঞাত স্থানে ‘বিশ্রাম নিচ্ছেন’ জাতীয় পার্টির (জাপা) চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। গত শনিবার রাতে সম্মিলিত সামরিক হাসপাতাল (সিএমএইচ) থেকে ছাড়া পেয়ে বারিধারার প্রেসিডেন্ট পার্কের বাসভবনে ফেরেননি তিনি। এরশাদ হঠাৎ আড়ালে যাওয়ায় রাজনৈতিক গুঞ্জন সৃষ্টি হয়েছে।
জাপা নেতারা প্রকাশ্যে বলছেন, ৮৮ বছর বয়সী এরশাদ অসুস্থ নন। তবে দলীয় সূত্র জাগো বাংলা ২৪ ডটকমকে নিশ্চিত করেছে অবস্থা গুরুতর না হলেও বার্ধক্যজনিত নানান সমস্যায় ভুগছেন তিনি। ভোটের আগে দলীয় কর্মীদের মনোবল ধরে রাখতে এরশাদের অসুস্থতার খবর গোপন রাখা হয়েছে। রাজধানীর গুলশানে নিজ বাড়িতে বিশ্রামে আছেন এরশাদ। তাকে চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুরে নেওয়ার প্রস্তুতি রয়েছে।
ক্ষণে ক্ষণে মত বদলের কারণে রাজনীতির বিতর্কিত চরিত্র সাবেক রাষ্ট্রপতি এরশাদ। ৩০ ডিসেম্বরের একাদশ সংসদ নির্বাচন আওয়ামী লীগের সঙ্গে জোট করে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার ঘোষণা দিলেও এরশাদ শেষ পর্যন্ত কী করবেন, তা নিয়ে সংশয় রয়েছে অনেকের।
বিএনপির সঙ্গে জোট করেও ২০০১ সালের নির্বাচনের আগে চার দল ছাড়েন এরশাদ। আবার বিএনপির সঙ্গে আলাপ চালিয়েও ২০০৬ সালে ভোটের আগে যোগ দেন আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোটে। তিন দিন ‘আত্মগোপনে’ থাকার পর ওই বছরের ১৮ ডিসেম্বর পল্টনে আওয়ামী লীগের মহাসমাবেশে যোগ দিয়ে রাজনীতিতে আলোচনার জন্ম দেন তিনি।
২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের আগের কয়েক মাসে এরশাদের ভূমিকা ছিল নাটকীয়তায় পূর্ণ। ২০১৩ সালের ২৫ অক্টোবর তিনি মহাজোট ছাড়েন। নির্বাচনকালীন সরকারে যোগ না দেওয়ার ঘোষণা দেন। কিন্তু পরের মাসেই নির্বাচনকালীন সরকারে যোগ দিয়ে ভোটে অংশ নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। কিন্তু ১৫ দিনের মধ্যে মত বদলে নির্বাচনকালীন সরকার থেকে দলীয় মন্ত্রীদের পদত্যাগ করে ভোট বর্জনের নির্দেশ দেন।।
নির্বাচন বর্জনকারী এরশাদকে ২০১৩ সালের ১৭ ডিসেম্বর সিএমএইচে ‘ভর্তি’ করে র্যাব। জাপার একাংশ রওশন এরশাদের নেতৃত্বে বিএনপিবিহীন নির্বাচনে অংশ নেয়। ৫ জানুয়ারির নির্বাচন শেষে ১২ জানুয়ারি পর্যন্ত সিএমএইচে ‘চিকিৎসাধীন’ ছিলেন এরশাদ। হাসপাতাল থেকে এসে সংসদ সদস্যের শপথ নেন। প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূত হয়ে বাসায় ফেরেন।
গত ৫ নভেম্বর গণভবনে সংলাপে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাপা চেয়ারম্যানকে বলেন, আর ডিগবাজি না দিতে। তবে নির্বাচনের আগে এরশাদের অসুস্থতা এবং তিনি বাসায় না থাকায় নতুন গুঞ্জন সৃষ্টি হয়েছে। এরশাদ মহাজোট ছাড়তে পারেন এমন গুঞ্জনও ছড়িয়েছে। ৭৬ আসনে মহাজোটের মনোনয়ন চেয়েছে জাপা। আওয়ামী লীগ ৩০টির বেশি আসন ছাড়তে রাজি নয়। প্রত্যাশিত আসন না পেলে এরশাদ বিএনপির নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐক্যফ্রন্টে যেতে পারেন, এমন গুঞ্জনও রয়েছে।
এরশাদের ছোট ভাই জাপার কো-চেয়ারম্যান জিএম কাদের এসবকে গুজব বলে নাকচ করে দিয়েছেন। তিনি জাগো বাংলা ২৪ ডটকমকে বলেন, এসব গুঞ্জন শতভাগ মিথ্যা। দলের শত শত মনোনয়নপ্রত্যাশী এরশাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে প্রতিদিন তার বারিধারার বাসায় ভিড় করছেন। তাই তিনি বিশ্রাম নিতে পারছেন না। অন্য একটি বাসায় বিশ্রাম নিচ্ছেন।
জিএম কাদেরের দেওয়া তথ্যকে সঠিক বলেছেন মহাসচিব এ বি এম রুহুল আমিন হাওলাদার। তিনি জাগো বাংলা ২৪ ডটকমকে বলেন, জাপা চেয়ারম্যান অসুস্থ না হলেও বার্ধক্যজনিত কিছু স্বাভাবিক শারীরিক সমস্যায় ভুগছেন তিনি। তার বিশ্রাম প্রয়োজন। বারিধারার বাসায় বিশ্রাম নিতে না পারায় ঢাকায় তার অন্য একটি বাড়িতে বিশ্রাম নিচ্ছেন।
তবে বাড়ির ঠিকানা বলতে রাজি হননি জাপা মহাসচিব। তার দাবি, এরশাদের ‘অসুস্থতা ও বিশ্রামে’র পেছনে অন্য কারণ নেই। গতবারের নির্বাচনের আগের ঘটনাক্রমের সঙ্গে এরশাদের এবারের বিশ্রামের মিল আছে কি-না? এ প্রশ্নে রুহুল আমিন হাওলাদার বলেন, ‘এবার তেমন কিছু না। আসলেই তার বিশ্রাম প্রয়োজন। এতে কোনো রাজনীতি নেই।’
জাপা সূত্র জানায়, সিএমএইচের চিকিৎসকরা সাবেক সেনাশাসক এরশাদকে বিশ্রামে থাকার পরামর্শ দিয়েছেন। গতকাল রোববার বারিধারায় এরশাদের বাসভবনে নেতাকর্মীদের ভিড় দেখা যায়। বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা জাপার মনোনয়নপ্রত্যাশীরা তার সাক্ষাৎ না পেয়ে বিভ্রান্তিতে পড়েন। এরশাদের একজন ব্যক্তিগত কর্মকর্তা জাগো বাংলা ২৪ ডটকমকে জানিয়েছেন, সাক্ষাৎপ্রত্যাশীদের ভিড় এড়াতেই বাড়ি ছেড়েছেন এরশাদ।
গত বৃহস্পতিবার রাতে সাবেক সেনাপ্রধান এরশাদকে সিএমএইচে নেওয়া হয়। চিকিৎসা শেষে শনিবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে তিনি হাসপাতাল ছাড়েন বলে জানিয়েছেন এরশাদের ব্যক্তিগত সচিব মেজর (অব.) খালেদ আকতার। গত সেপ্টেম্বর ও অক্টোবরে দুই দফা সিঙ্গাপুরে চিকিৎসা নেন এরশাদ। রাজনৈতিক কর্মসূচিতেও তিনি আগের মতো নিয়মিত নন। গত ২০ অক্টোবর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে মহাসমাবেশে এরশাদ চেয়ারে বসে বক্তৃতা করেন।