আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী যেন ‘গায়েবি ও মিথ্যা’ মামলার আসামিদের গ্রেফতার না করে সেজন্য নির্বাচন কমিশনের (ইসি) হস্তক্ষেপ চেয়েছে বিএনপি। দুই সহস্রাধিক মামলার একটি তালিকা দিয়ে এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে প্রধান নির্বাচন কমিশনারের (সিইসি) কাছে অনুরোধ জানিয়েছে দলটি। এর আগে একই তালিকা প্রধানমন্ত্রী বরাবরও পাঠিয়েছিল তারা। বিএনপির চিঠির আলোকে নেতাকর্মীদের হয়রানিমূলক মামলা থেকে বিরত থাকতে পুলিশ প্রশাসনকে নির্দেশ দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন নির্বাচন কমিশনার রফিকুল ইসলাম।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর স্বাক্ষরিত চিঠির সঙ্গে মামলার তালিকা নিয়ে রোববার বিএনপির কেন্দ্রীয় মামলা ও তথ্য সংগ্রহকারী কর্মকর্তা সালাহউদ্দিন খানের নেতৃত্বে ইসিতে আসে দুই সদস্যের প্রতিনিধি দল। চিঠিতে ১ সেপ্টেম্বর থেকে এ পর্যন্ত বিএনপি নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে দুই হাজার ৪৮টি মামলা হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে। ৪৮৭ জনকে এসব মামলায় আসামি করা হয়েছে। এ ছাড়া একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর থেকে ৭৭৩ জনকে গ্রেফতার করার পাশাপাশি আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর বিরুদ্ধে বাড়ি বাড়ি তল্লাশি ও হুমকির অভিযোগও করেছে দলটি। চিঠিতে এসব বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ করেছেন বিএনপি মহাসচিব।
চিঠিতে বলা হয়, গত ৭ নভেম্বর এক হাজার ৪৬টি ও পরে ১৩ নভেম্বর এক হাজার দুটি মামলার তথ্য প্রধানমন্ত্রীর কাছে জানানো হয়। তারপর এখনও মামলা প্রত্যাহার ও গ্রেফতার নেতাকর্মীদের অব্যাহতি দেওয়ার কোনো তথ্য তাদের জানানো হয়নি। এ অবস্থায় বিএনপি বিষয়টিতে ইসির হস্তক্ষেপ কামনা করছে।
বিএনপির সহ-দপ্তর সম্পাদক তাইফুল ইসলাম টিপু স্বাক্ষরিত আরেকটি চিঠিতে জানানো হয়, ২০০৯ সাল থেকে এ বছরের ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত মোট মিথ্যা মামলার সংখ্যা ৯০ হাজার ৩৪০টি, আসামির সংখ্যা ২৫ লাখ ৭০ হাজার ৫৪৭ জন, জেলহাজতে থাকা আসামির সংখ্যা ৭৫ হাজার ৯২৫ জন, মোট নিহত এক হাজার ৫১২ জন নেতাকর্মীর মধ্যে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে হত্যার শিকার হয়েছেন ৭৮২ জন, বিভিন্ন দলের ‘গুম হওয়া’ এক হাজার ২০৪ জন নেতাকর্মীর মধ্যে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর হেফাজত থেকে গ্রেফতার দেখানো হয় ৭৮১ জনকে। বিএনপির গুম ছিল ৪২৩ জন। ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বিএনপির ৭২ জন নেতাকর্মী গুম রয়েছেন এবং গুরুতর জখম ও আহত হয়েছেন ১০ হাজার ১২৬ জন। এর আগে ৮ নভেম্বর ইসিতে পাঠানো বিএনপি মহাসচিবের আরেকটি চিঠিতে দাবি করা হয়েছে, নির্বাচনের পুনঃতফসিলের পর সারাদেশে ৪৭২ জন নেতাকর্মীকে মিথ্যা ও গায়েবি মামলায় গ্রেফতার করা হয়েছে। নাম-পরিচয়সহ গ্রেফতার নেতাকর্মীদের একটি তালিকাও ওই চিঠির সঙ্গে দেওয়া হয়।
এদিকে বিএনপির জমা দেওয়া মামলা ও গ্রেফতারের তালিকা প্রসঙ্গে রোববার সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে নির্বাচন কমিশনার রফিকুল ইসলাম বলেন, তালিকাটি তিনি দেখেননি। সত্যিকার অর্থে যদি কোনো হয়রানিমূলক মামলা হয়ে থাকে, তাহলে তারা অবশ্যই পুলিশ প্রশাসনকে নির্দেশনা দেবেন যেন হয়রানিমূলক মামলা না করা হয়।