এবার রাজধানীর সাভারে গতকাল রবিবার প্রকাশ্য রাস্তায় মাদ্রাসা শিক্ষার্থীদের সাথে নিয়ে তাদের শিক্ষকেরা ব্লগারদের ফাঁসী চেয়ে হুমকি দিয়েছে যা চাঞ্চল্য সৃষ্টি করেছে সেই এলাকায়। চলমান রাজনৈতিক সংকট ও ক্রমাগত ব্লগারদের গুপ্ত পদ্ধতিতে খুন করা ও হুমকি দেয়ার এমন অবস্থাতেই এই ঘটনা অনেকের কাছে অবিশ্বাস্য মনে হয়েছে। সাভারে দারুল উলুম ফাজিল মাদ্রাসার শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা মুক্তমনা ব্লগারদের ছবি সম্বলিত ব্যানার নিয়ে প্রকাশ্য রাস্তায় তাঁদের ফাঁসী দাবী করেছে। এই ফাঁসী দাবী করা ব্লগারদের মধ্যে রয়েছে সৈয়দ ইশতিয়াক হোসেন শাওন, আবু হানিফ, এমডি তোফায়েল হোসেন, হোসেন মোহাম্মদ পারভেজ, আসিফ মহিউদ্দিন, অমি পিয়াল, সিদ্দিকুর রহমান, সৈয়দ সানভি অনিক হোসেন, রুজভেল্ট হালদার, শাহাদাত হোসেন, কাজী সিদ্দিক, সৈয়দ মোহাম্মদ সজীব আবেদ, শাফি নেওয়াজ, কাজী সাইফুল, শারমিন জান্নাত ভুট্টো, নাইমুল ইসলাম, রিয়ানা তৃনা, জহিরুল ইসলাম প্রমুখ।
সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশে ব্লগার ও মুক্তমনা লেখকদের হত্যাকান্ডে ইতিমধ্যেই দেশের সকল ব্লগার, লেখক তথা মুক্তমনা লেখকদের মধ্যে তীব্র হতাশা ও শংকার তৈরী হয়েছে। এদের অনেকেই এখন দেশ ছেড়ে চলে গেছেন আর কেউ কেউ আত্নগোপনে রয়েছেন। নাম না প্রকাশ করার শর্তে একজন ব্লগার এই প্রতিবেদককে বলেন, “আমার ধারনা এইসকল হত্যাকান্ডের সাথে সরকারের নিবিড় যোগাযোগ রয়েছে এবং তাঁদের মদত না থাকলে খুনীরা এইভাবে নির্বিঘ্নে খুন করে পালাতে পারেনা”
উল্লেখ্য যে গত ১৫-ই ফেব্রুয়ারী ২০১৩ সালে প্রখ্যাত মুক্তমনা লেখক রাজীব হায়দার ওরফে থাবা বাবা মিরপুরের রূপ নগরে তার নিজ বাসার সামনে খুন হন। এছাড়াও ২০০৪ সালে ঢাকা বিশ্ব বিদ্যালয়ের শিক্ষক ও প্রখ্যাত প্রথা বিরোধী লেখক হুমায়ুন আজাদকে বাংলা একাডেমীর বইমেলার সামনে নৃসংশভাবে কুপিয়ে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেয়া হয় যেগুলোর বিচার আজও এই বাংলাদেশে হয়নি। বাংলাদেশেই ৯০ দশকের শুরুর দিকে প্রখ্যাত লেখিকা তসলিমা নাসরিনের মাথার মূল্য হাঁকেন সিলেটের ফুলতলীর পীর। তৎকালীন সময় তিনি ঘোষনা দেন যে তসলিমার মাথা কেউ কেটে এনে দিতে পারলে তিনি সেই ব্যাক্তিকে ৫০ লক্ষ টাকা পুরষ্কার দেবেন। খুন করবার প্ররোচনা দেবার পরেও বাংলাদেশে এই ফুলতলীর পীরের বিরুদ্ধে তৎকালীন সরকার কোনো ধরনের ব্যবস্থা নেয় নি। এর আগে ১৯৭৩ সালে প্রখ্যাত লেখক দাউদ হায়দারকে সামান্য একটি কবিতা লেখার দায়ে জার্মানীতে নির্বাসনে পাঠানো হয়। সেখানে তিনি আজও বসবাস করেন, দেশে ফিরে আসতে পারেন নি। একইভাবে তসলিমা নাসরিনও আজ পর্যন্ত তাঁর নিজের স্বদেশে ফিরতে পারেন নি।
প্রকাশ্য এমন মিছিল ও সমাবেশ এলাকাবাসীর মনে শংকা ও উদ্বেগের তৈরী করেছে। তাদের অনেকেই এইসব পরিস্থিতি থেকে পরিত্রান চান বলে এই আমাদের কাছে জানান। উল্লেখ্য যে এইসব খুনের দায় স্বীকার করে আনসার আল ইসলাম নামে একটি সংগঠন অজানা স্থান থেকে সংবাদ মাধ্যমে বিবৃতি পাঠিয়েছে যারা আলকায়েদার অনুসারী বলেও নিজেদের প্রচার করে যাচ্ছে। এই সমাবেশের ব্যাপারে সাভার থানার ডিউটি অফিসার মিজান রহমান এর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি এখন ব্যাস্ত আছেন বলে ফোনের লাইন কেটে দেন।