২০১৯-২০ অর্থবছরে পালিত হবে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী। একইসঙ্গে এই অর্থবছরেই বাংলাদেশের স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তিতে পালিত হবে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী। এই দুই ইতিহাসকে সাক্ষী করে আগামী অর্থবছরেই সরকার দেশকে দারিদ্র্যমুক্ত করার লক্ষ্য নিয়ে কাজ করছে। আর সেভাবেই সাজানো হচ্ছে বর্তমান সরকারের প্রথম বাজেট। সম্প্রতি সরকারের নীতিনির্ধারণী অর্থনৈতিক কো-অডিনেশন কাউন্সিলের সভায় এসব বিষয় নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা শেষে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। বাংলা ট্রিবিউনকে বিষয়টি জানিয়েছে সরকারের শীর্ষ পর্যায়ের সঙ্গে যুক্ত থাকা একটি সূত্র।
সূত্র জানায়, আসন্ন ২০১৯-২০ অর্থবছরের বাজেট সাজানো হচ্ছে বিশেষ কয়েকটি খাতকে গুরুত্ব দিয়ে। এগুলো হচ্ছে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, সামাজিক সুরক্ষা, দক্ষ মানবসম্পদ সৃষ্টির জন্য সমন্বিত উদ্যোগ জোরদারকরণ, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের পাশাপাশি সড়ক, রেলপথ ও বন্দরসহ সার্বিক ভৌত অবকাঠামো উন্নয়ন। বর্তমান সরকার আসন্ন ২০১৯-২০ অর্থবছরের বাজেটে পদ্মা সেতু, পদ্মা সেতুতে রেল সংযোগ, রূপপুর পারমানবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র, পায়রা সমুদ্র বন্দর, ঢাকায় মেট্রোরেল, গভীর সমুদ্র বন্দর, রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র, এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণসহ মেগা প্রকল্পগুলো দ্রুত বাস্তবায়নের ওপরও জোর দিতে চায়। এর সঙ্গে কৃষি, পল্লি উন্নয়ন, তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়ানোর মাধ্যমে সরকারি সেবা দেওয়ার আওতাও সম্প্রসারণের কথা ভাবছে সরকার। এবারের বাজেটে জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় সক্ষমতা অর্জন, ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তবায়ন, সামাজিক সুরক্ষায় সমন্বিত উদ্যোগের বিষয়ে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হবে বলে জানা গেছে।
সূত্র জানায়, আগামী বাজেটে স্বাধীনতার সুবর্ণ রজতজয়ন্তীতে বাংলাদেশকে সম্পূর্ণ দারিদ্র্যমুক্ত করতে বাজেটে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির বিষয়ে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। এ কারণেই আসছে বাজেটে কর্মসংস্থান বাড়ানোর বিষয়ে নানা পদক্ষেপ থাকছে। সরকারের ইশতেহার অনুযায়ী এবারের বাজেটে ‘আমার গ্রাম আমার শহর’ শীর্ষক একটি নতুন প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য বরাদ্দ রাখা হবে। এ কর্মসূচির আওতায় গ্রামের কাঁচা, আধা কাঁচা রাস্তা পাকা করার পাশাপাশি দেশের সব গ্রামে বিদ্যুৎ ও ইন্টারনেট সুবিধা দেওয়ার কথা ভাবছে সরকার। একইসঙ্গে সরকার টেকসই উন্নয়ন (এসডিজি) বাস্তবায়ন এবং আগামী দুই বছরের মধ্যে সরকারের ‘রূপকল্প-২০২১’ বাস্তবায়নের বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়ে বাজেট তৈরির কাজ চলছে।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে অর্থ মন্ত্রণালয়ের একজন অতিরিক্ত সচিব নাম প্রকাশ না করার শর্তে বাংলা ট্রিবিউনকে জানিয়েছেন, ২০১৯-২০ অর্থবছরে বাজেটে নতুন সরকারের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ধরা হয়েছে ৮ দশমিক ২ শতাংশ। বড় কোনও ধরনের পরিবর্তন না হলে এবারের বাজেটের সম্ভাব্য আকার হতে পারে ৫ লাখ ২৩ হাজার ১৯০ কোটি টাকা। এটি আগামী অর্থবছরের জিডিপির ১৮ শতাংশ। সরকারের আগামী এক বছরের ব্যয় মেটাতে রাজস্ব আহরণ লক্ষ্য ধরা হয়েছে ৩ লাখ ৬০ হাজার কোটি টাকা।
উল্লেখ্য, ২০১৮-১৯ অর্থবছরের বাজেটের আকার ছিল ৪ লাখ ৪২ হাজার ৬৭৩ কোটি টাকা।
অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল জানিয়েছেন, অর্থনৈতিক কো-অর্ডিনেশন কাউন্সিলের সভার সিদ্ধান্তগুলো অনুমোদনের জন্য প্রধানমন্ত্রীর কাছে নিয়ে যাওয়া হবে। এর আগে বাজেট প্রসঙ্গে কোনও কিছুই চূড়ান্ত নয়।
প্রতিবছরের বাজেটে কৃষি ঋণের প্রবাহ, গ্রামীণ ক্ষুদ্র শিল্পে ঋণের জোগান বাড়ানোর ওপর গুরুত্ব দেওয়া হলেও নতুন বাজেটে বহুল আলোচিত তিন স্তরের ভ্যাট ঘোষণা, পহেলা জুলাই থেকে নতুন ভ্যাট আইনের আংশিক কার্যকর, অটোমেশনের মাধ্যমে সঞ্চয়পত্র সেবা চালু, খেলাপি ঋণ আদায়ে অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানি গঠন ও কর্পোরেট কর হার হ্রাসের বিষয় থাকছে।
জানা গেছে, কৃষকদের বীমার আওতায় আনার একটি পরিকল্পনা রয়েছে। সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি থেকে বের করে আনতে সংশ্লিষ্ট পরিবারে একটি করে চাকরি দেওয়ার কর্মসূচিও বাজেট ঘোষণায় থাকতে পারে।