সম্প্রতি ঢাকা সহ বাংলাদেশের বিভিন্ন জায়গায় হেফাজত-এ ইসলাম-এর একটি পোস্টার সকলের নজর কাড়ে। যে পোস্টারে লেখা রয়েছে “আল্লাহর আইন অমান্যকারী, ব্যাভিচারকারী, সমকামী, আল্লাহর গজবপ্রাপ্ত, ইহুদি নাসারার এজেন্ট ফয়সাল হোসেন অনিক ও সাইফুল ইসলামের বাংলাদেশের নাগরিকত্ব বাতিল কর, করতে হবে।”
এই ধরনের পোস্টার বাংলাদেশে সচারাচর দেখা যায়না এবং অনেকটা দূর্লভও বটে সুতরাং নিজস্ব কৌতূহলের এক গনগনে আগুনে ঝাঁপ দিতেই হোলো। স্থানীয় হেফাজতের কর্মীদের কাছে খোঁজ নিয়ে জানা যায় ফয়সাল হোসেন অনিক ও সাইফুল ইসলাম সমকামী বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছে। এই ঘটনা নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে চলছে সমালোচনা, আলোচনা। গতকাল সারাদেশের বিভিন্ন শহরের বিভিন্ন গলিতে চলেছে পোস্টারিং ও সমাবেশ। তাঁরা ফয়সাল হোসেন অনিক ও সাইফুল ইসলামকে বাংলাদেশের কুলাঙ্গার সন্তান হিসেবে সূচিত করেছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ফয়সাল হোসেন অনিক ও সাইফুল ইসলাম গত মে মাসের ২১ তারিখে লন্ডনের ওয়ালথাম ফরেস্ট বারাতে সমকামী বিবাহ সম্পন্ন করেছেন। এই সংবাদের পর ফয়সাল হোসেন অনিক ও সাইফুল ইসলামের পরিবারে নেমে এসেছে এক শোকের ছায়া। তাদের ছেলের এহেন কর্মকান্ডে ও এমন ধর্ম অবমাননাকারী অবস্থানে পুরো পরিবার এখন এক অসহনীয় সংকোচনে দিনানুপাত করছে।
এদিকে সুজনের সাম্প্র্তিক এক প্রতিবেদনে জানা যায় যে বাংলাদেশের বাইরে যত দেশে প্রবাসী বাংলাদেশীরা স্থায়ী বা অস্থায়ী আবাসনের জন্য পাড়ি জমিয়েছিলেন তাদের মধ্যে একটি সিংহ ভাগ সমকামিতার দিকে ঝুঁকছে। ওসমানি স্মৃতি মিলনায়তনে সুজনের এই সমীক্ষা প্রকাশ উপলক্ষ্যে একটি সেমিনার আয়োজন করা হয় যেখানে দেখানো হয় যে বাংলাদেশ থেকে চলে যাবার পরেই সাধারণত একজন সমকামি নিজেকে প্রকাশ্যে নিয়ে আসেন। এই প্রবনতা নিয়ে কথা বলতে গিয়ে আমরা ঢাকা ইউনিভার্সিটির মনোরোগ বিষয়ে এনালিস্ট প্রফেসর মিসেস শাহানা আফরোজের কাছে প্রশ্ন করি। তিনি আমাদের বলেন যে “এই প্রবণতার মূল কারন হচ্ছে দেশে সমকামিতার বিরুদ্ধে সাধারণ জনতা ও সরকারের আইনগত ভাবে বিরুদ্ধ অবস্থান। বাংলাদেশের পেনাল কোডের ৩৭৭ ধারার ফলে যেহেতু সমকামিতা নিষিদ্ধ সেহেতু এই বিষয়ে প্রকাশ্যে বলা কিংবা এই ব্যাপারে সর্ব সম্মুখে কথা বলাটাও আইনের আওতায় পড়তে পারে এমনটা ভেবেও কিন্তু ভয়ের কারন রয়েছে। মূলত সরকারী পক্ষ থেকে বিধি ও সামাজিকভাবে প্রবল চাপের কারনেই নিজেদের দেশে একজন সমকামি নিজেদের সেক্সুয়াল আইডেন্টিটির ব্যাপারে ঘোষনা দিতে সন্ধিগ্ধু ও ভীত হয়ে থাকে”। তিনি আরো বলেন যে, “সমকামিতা একটি প্রাকৃতিক ব্যাপার। এটি নিয়ে তাই ঘৃণার চাইতে এটির বোধগম্যতার স্থান তৈরী করে দেয়াটা সবচাইতে জরুরী”
এই সমীক্ষায় উঠে আসে বাংলাদেশী বংশদ্ভুত প্রায় ৬০ হাজার ছেলে মেয়ে সমকামিতার দিকে ঝুঁকেছে। যার পরিমাণ যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়া ও আমেরিকাতেই বেশী।
খোঁজ নিয়ে জানা যায় শুধু লন্ডনেই নয় বরং বাংলাদেশের বাইরে এমন পশ্চিমা দেশ গুলোতে ক্রমাগত বাড়ছে বাংলাদেশী সমকামির সংখ্যা। উল্লেখ্য যে গত ২৫ এপ্রিল ২০১৬ ইং সোমবার বিকালে রাজধানীর কলাবাগানে খুন হন ইউএসএআইডির কর্মকর্তা ও মার্কিন রাষ্ট্রদূতের সাবেক প্রটোকল অফিসার জুলহাজ মান্নান (৩৫) ও তার বন্ধু নাট্যকর্মী মাহবুব তনয় (২৮)। আনসারুল্লাহ বাংলা টিম নামের এক ইসলামিক গেরিলা গোপন গোষ্ঠী যারা আলকায়েদার বাংলাদেশ শাখা বলে নিজেদের পরিচয় দিয়ে থাকে, তারা এই হত্যাকান্ডের দায় স্বীকার করেছে। জানা যায় জুলহাজ ও মাহবুব রাব্বী তনয় হত্যা মামলার তদন্তভার গোয়েন্দা পুলিশকে (ডিবি) দিয়েছেন ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) কমিশনার মো. আছাদুজ্জামান মিয়া। যদিও ঘটনার দেড় বছর পেরিয়ে গেলেও কোনও খুনিই আদতে গ্রেফতার হয়নি এখন পর্যন্ত।
নিহত জুলহাজ সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী দীপু মনির খালাতো ভাই। বাংলাদেশে সমকামীদের অধিকার নিয়ে কাজ করতেন তিনি। ‘রূপবান’ নামে একটি পত্রিকাও সম্পাদনা করতেন তিনি। অন্যদিকে তনয় আশা ইউনিভার্সিটিতে পড়ালেখা করতেন। লোকনাট্য নামের একটি থিয়েটারের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন তিনি।
বাংলাদেশের বাইরে এইভাবে ক্রমাগত সমকামীদের সংখ্যা বাড়তে থাকলে দেশে সরকারের ভাবমূর্তি নষ্ট হতে পারে কিনা এই ব্যাপারে সাংসদ শামীম ওসমানের সাথে কথা বললে তিনি বলেন, “এই এক দুইটা আল্লাহর গজব প্রাপ্ত ব্যাক্তির জন্য দেশের ভাবমূর্তি নষ্ট হবেনা। এরা সবাই তসলিমা নাসরিন আর নাস্তিক হুমায়ুন আজাদের অনুসারী এবং চরম নাস্তিক। এদেরকে শায়েস্তা কিভাবে করতে হয় তা জনতা জানে। এদের কারনে দেশের ও সরকারের কোন ক্ষতি হবার প্রশ্নই আসেনা”
এটিও উল্লেখ্য যে গত বুধবার দুপুরে হেফাজতে ইসলাম ঢাকা কমিটির সমন্বয়ক মাওলানা ফেরদাউসুর রহমান বাদী হয়ে নারায়ণগঞ্জ চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট অশোক কুমার দত্তের আদালতে মামলাটি দায়ের করেন। মাওলানা ফেরদাউসুর রহমান জানান, গত সাত এপ্রিল শ্রুতি সাংস্কৃতিক একাডেমির ২৫ বছর পূর্তি অনুষ্ঠানে রফিউর রাব্বি ইসলাম ও ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হেনে বক্তব্য দেন।
হেফাজত নেতার দাবি রাফিউর রাব্বি ওই অনুষ্ঠানে বলেছেন, ‘যদি বাংলার মানুষ জানত সংবিধান বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম দিয়ে শুরু হবে, দেশ হবে সাম্প্রদায়িকতার দেশ, তবে ৩০ লাখ শহীদের মুক্তিযুদ্ধে কেউ অংশগ্রহণ করত না।’
অনেকেই মনে করেন হেফাজতের এইসব উত্থান কিংবা রাফিউর রাব্বির বিরুদ্ধে মামলার ব্যাপারে শামীম ওসমানের প্রচ্ছন্ন ইন্ধন রয়েছে।