প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘কী পেলাম কী পেলাম না, সেই হিসাব আমি কখনো মেলাই না। আমি চলি একটি আদর্শ, একটি স্বপ্ন কীভাবে বাস্তবায়ন করা যায়, সেই লক্ষ্য নিয়ে। যে মানুষের জন্য জাতির পিতা জীবনের সবকিছু ত্যাগ করেছেন, তার সেই অবদান যেন বৃথা না যায়। যে লাখো শহিদ রক্ত দিয়ে গেছে দেশের স্বাধীনতার জন্য, তাদের রক্ত যেন বৃথা না যায়। বাংলাদেশ যেন সফল হয়। বাংলাদেশ সারা বিশ্বে যেন একটা মর্যাদা নিয়ে চলে, সেটুকু করে যাওয়াই আমার প্রচেষ্টা। যেসব মানুষের জন্য বঙ্গবন্ধু জীবন দিয়েছেন, সেই সব মানুষের মুখে হাসি ফোটানো, ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ার লক্ষ্য নিয়েই আমি কাজ করছি। গতকাল বুধবার সংসদে প্রধানমন্ত্রী তার জন্য নির্ধারিত প্রশ্নোত্তর পর্বে বিরোধী দল জাতীয় পার্টির (জাপা) সংসদ সদস্য ফখরুল ইমামের এক সম্পূরক প্রশ্নের জবাব দিতে গিয়ে এসব কথা বলেন।
এই প্রশ্নের জবাবে শুরুতে প্রধানমন্ত্রী হেসে বলেন, ‘আমরা সবাই একই লেভেলে আছি। একই ফ্লোরে আছি। তাহলে উনি (ফখরুল ইমাম) কেন এরকম ভাবছেন? এখানে আমরা প্রত্যেকেই একেকটা সংসদীয় আসন থেকে নির্বাচিত হয়ে এসেছি।’ এরপর তিনি বলেন, ‘যে মানুষের জন্য আমার পিতা জীবন দিয়ে গেছেন, তাদের জন্য কতটুকু করতে পেরেছি, সেই হিসাবটাই আমি সব সময় করি। আমার আমিত্ব বলে এখানে কিছু নেই।’ এ সময় কিছুটা আবেগাপ্লুত হয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমি যেভাবে আপনজন হারিয়েছি, নানা ঘাত-প্রতিঘাতের মধ্য দিয়ে আমাদের দুই বোনকে এগোতে হয়েছে। বিশ্বের অন্য কোনো দেশের সঙ্গে এর তুলনা হয় না, ঐ সব দেশ এত বাধা-বিপত্তি পায়নি।’
আওয়ামী লীগের এমপি শহীদুজ্জামান সরকার সম্পূরক প্রশ্নে জানতে চান, ‘আওয়ামী লীগ সরকারের আমলেই বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উদ্যাপন করতে পেরে প্রধানমন্ত্রী আপনার ব্যক্তিগত অনুভূতি কী?’ জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আজকে আমার সৌভাগ্য, ২০২০ সালে আমরা সরকারে আছি। আর সরকারে আছি বলেই আমরা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের জন্মশতবার্ষিকী উদ্যাপন করার সুযোগ পেয়েছি। যে নামটা একসময় বাংলাদেশের ইতিহাস থেকে মুছে ফেলা হয়েছিল, আজকে জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী ইউনেসকো কর্তৃক যৌথভাবে বিশ্বব্যাপী উদ্যাপনের সুযোগ আর বিশেষ করে বাংলার মাটিতে উদ্যাপন করতে পারা—এটা আমি মনে করি, এর থেকে বড়ো সৌভাগ্য হতে পারে না। শুধু জাতির পিতার কন্যা হিসেবে নয়, আওয়ামী লীগের একজন কর্মী হিসেবে আমি মনে করি, বাংলাদেশের জনগণ আমাদের এই সুযোগ দিয়েছে, কাজেই আমি বাংলাদেশের জনগণকে আবারও কৃতজ্ঞতা জানাই।’ বঙ্গবন্ধুর কন্যা বলেন, ‘এটা যে করে যেতে পারছি। এটা যে কত বড়ো পাওয়া, আমি, আমার ছোটো বোন রেহানা আমাদের কাছে, সেটা ভাষায় আমরা প্রকাশ করতে পারব না।’
জাপার এমপি মুজিবুল হক চুন্নুর সম্পূরক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “বাংলাদেশের পাশাপাশি বিভিন্ন দেশে যেখানে আমাদের দূতাবাস রয়েছে, সেভাবে যথাযোগ্য মর্যাদায় ‘মুজিববর্ষ’ পালন করা হবে। ‘মুজিববর্ষ’ উপলক্ষ্যে সংসদের বিশেষ অধিবেশনও বসবে।”
সরকারদলীয় এমপি এ কে এম রহমতুল্লাহর প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, মুজিব শতবর্ষ উদ্?যাপনের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে বঙ্গবন্ধুর কর্মময় জীবনের নানা দিক আরো ব্যাপক আকারে ছড়িয়ে দেওয়ার সুযোগ সৃষ্টি হবে। এর ফলে বিশ্ববাসী নতুন করে বঙ্গবন্ধুর আত্মত্যাগ ও বর্ণাঢ্য কর্মময় জীবন সম্পর্কে জানতে পারবে। তিনি সংসদকে জানান, দ্বিবার্ষিক অ্যানিভার্সারি প্রোগ্রামের আওতায় ইউনেসকো কোনো বিশেষ ঘটনার বা বিশিষ্ট ব্যক্তির জন্মের ৫০তম বা তদূর্ধ্ব, অর্থাত্ ৭৫তম বা ১০০তম বা ১৫০তম বার্ষিকী উদ্?যাপন করে থাকে। এই প্রোগ্রামের আওতায় ২০২০-২১ সালের জন্য ইউনেসকোর গ্রহণ করা ৫৯টি অ্যানিভার্সারি উদ্?যাপন প্রস্তাবের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে জাতির জনকের জন্মশতবার্ষিকী উদ্যাপন।
তরিকত ফেডারেশনের এমপি নজিবুল বশর মাইজভাণ্ডারী সম্পূরক প্রশ্নে বলেন, ‘বিএনপি-জামায়াত বঙ্গবন্ধুর জন্ম ও মৃত্যুবার্ষিকী পালন করে না। বরং ১৫ আগস্ট জন্মদিন পালন করে। এমন কোনো আইন করা হবে কি না, যাতে মুজিব শতবর্ষ পালনে বাধ্য হবে বা পালন না করলেও যেন চুপ করে বসে থাকে?’ জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, মিথ্যা দিয়ে সত্যকে মুছে ফেলা যায় না। সেটা প্রমাণিত সত্য। সত্য বলেই জাতির জনকের ৭ই মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণ আন্তর্জাতিক ঐতিহ্য প্রামাণ্য দলিলে স্থান পেয়েছে। মুক্তিযুদ্ধে, মুক্তির সংগ্রামে, বিজয়ের ইতিহাসে জাতির জনকের যে অবদান, তা মুছে ফেলার চেষ্টা করা হয়েছিল। আজকে সেই ইতিহাস উদ্ভাসিত হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী ইউনেসকোর মাধ্যমে বিশ্বের সব দেশ, জাতিসংঘভুক্ত সব দেশ উদ্?যাপন করছে। এর থেকে বড়ো সত্য কী আছে? কাজেই কে মানল, কে মানল না, তার জন্য বাঙালি জাতি বসে থাকেনি, থাকবে না। এটা মনের ব্যাপার। আইন করে কখনো সম্মান আদায় করা যায় না। যারা বঙ্গবন্ধুর খুনি, যারা খুনিদের পুরস্কৃত করেছে, আইন করে খুনিদের বিচার বন্ধ রেখেছে, তাদের কাছ থেকে বেশি কিছু আশা করা যায় না।
৪ কোটি মানুষ বাস্তুচ্যুত হওয়ার শঙ্কা
সরকারি দলের এমপি শহীদুজ্জামান সরকারের এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী সংসদকে জানান, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হওয়ায় এখন আগের মতো বিভিন্ন ঋতুতে তেমন তারতম্য পরিলক্ষিত হয় না। এর ফলে জীববৈচিত্র্যের ওপর প্রভাব পড়ছে। খাদ্য নিরাপত্তার জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ১৯টি জেলার ৭০টি উপজেলার প্রায় ৪ কোটি মানুষ বাস্তুচ্যুত হওয়ার সমূহ সম্ভাবনা রয়েছে।