নোয়াখালীর গৃহবধূর ওপর নির্যাতন সব বর্বরতা, হিংস্রতাকে হার মানিয়েছে। পশুর পাশবিক আচরণও মাথা নিচু করবে এই তরুণদের সামনে এসে। নোয়াখালীর অসহায় এই গৃহবধূকে যেভাবে বিবস্ত্র করে ভিডিও করা হয়েছে, তার ওপরে পাশবিক নির্যাতন করা হয়েছে তা সারা দেশের মানুষকে হতবিহ্বল করেছে, ক্ষুব্ধ করেছে। এই ধরনের জঘন্য অপরাধের বিচার নিশ্চিত করতে প্রতিবাদে সরব হয়ে উঠেছে দেশের জনগণ।
নোয়াখালীর বেগমগঞ্জে নারীকে দলবদ্ধভাবে ধর্ষণের পর পৈশাচিক উপায়ে নির্যাতনের এ ভিডিও দেশের মানুষের কাছে প্রশ্ন জাগায়, তাহলে কোথায় নিরাপদ নারী? ঘর মানুষের নিরাপদ আশ্রয়। সেই ঘরে ঢুকে এভাবে কয়েকজন পশুরূপী মানুষের এই নির্যাতন মানুষকে আতঙ্কিত করে তুলেছে। এ ঘটনা এটাই প্রমাণ করছে যে, নারীরা পথেঘাটে যেমন নিরাপদ নন তেমনি ঘরেও তারা নিরাপদ নন। এখন বিকারগ্রস্ত পুরুষরা ঘরে ঢুকে যৌন নির্যাতন করছে। নোয়াখালীর এ ঘটনা সারা দেশের মানুষকে ক্রুব্ধ করে তুলেছে, তেমনি মানুষ আতঙ্কিতও।
স্বামীকে বেঁধে রেখে গৃহবধূকে নিজের বাসায় সংঘবদ্ধভাবে বিবস্ত্র করে মুখমণ্ডলে লাথি মারাসহ নির্যাতনের যে ফুটেজটি সোশ্যাল মিডিয়ায় এসেছে তা চোখে দেখা যায় না। যেভাবে একজন নারীকে নির্যাতন করা যায়? তা যেন চিন্তার অতীত। ধর্ষণের পরে পৈশাচিক নির্যাতন করতে দেখা যায় সেই নির্যাতন দেখে এদের কাউকে কাউকে আনন্দ প্রকাশ করতে দেখা যায়। মানসিক বিকারগ্রস্ততার কোন পর্যায়ে রয়েছি আমরা!
বেশ কিছুদিন ধর্ষণ এতটাই বেড়েছে যে, বিশ্লেষকরা বলছেন, দেশে ‘ধর্ষণের সংস্কৃতি’ গড়ে উঠেছে। বিচারহীনতার কারণে নারীরা দেশ জুড়েই ধর্ষণ, শ্লীলতাহানিসহ পুরুষের নানামুখী অত্যাচারের মুখোমুখি হচ্ছে। অপরাধী যখন শাস্তি পাচ্ছে না সেই সুযোগে ধর্ষণ দেশে মহামারির মতো ছড়িয়ে পড়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে সিলেট এমসি কলেজে, সাভারে নারীশ্রমিক, খাগড়াছড়িতে ধর্ষণের ভয়াবহ ঘটনার কথা আমরা জানতে পেরেছি। বেশকিছু ধর্ষণের ঘটনা থানায় মামলার পর আদালতেও গড়ায়। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ধর্ষকরা শাস্তি পায় খুব কম। এই বিচারহীনতা, শাস্তি নিশ্চিত করতে না পারার ব্যর্থতা বিকারগ্রস্ত পুরুষদের আরো বেপরোয়া করে তুলছে। জানোয়ারের চেয়ে নিকৃষ্ট আচরণ করছে তারা। পশুও কী এতটা বর্বর হয় কখনো?
ধর্ষকের লোলুপ দৃষ্টি থেকে বাদ যাচ্ছে না শিশু ও বৃদ্ধারাও। এমনকি রেহাই পাচ্ছেন না বাকপ্রতিবন্ধী বা ভবঘুরে পাগলও। শুধু ধর্ষণ করেই রেহাই পাচ্ছে না নারীরা। সেই ধর্ষণের ভিডিও ধারণ করে তা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছেড়ে দিচ্ছে বিকারগ্রস্ত তরুণরা। এমনকি, ধর্ষণ করে সেই মেয়েটিকে নির্যাতন করা, হত্যা করা, আগুনে পুড়িয়ে হত্যা করা হচ্ছে। মানুষ এক বীভত্স রূপ নিয়ে হাজির হচ্ছে শিশু-কিশোর নারীদের ওপরে।
এসবের পাশাপাশি অপসংস্কৃতি, আকাশ সংস্কৃতির বেসামাল প্রভাব, অশ্লীলতা, ঘুষ, দুর্নীতিসহ নানা কারণে দিনে দিনে সামাজিক অবক্ষয় আর অস্থিরতা চরম আকার ধারণ করেছে। পাশাপাশি অশ্লীলতার আগ্রাসনে মানুষের নৈতিক মূল্যবোধের অভাব ও সামাজিক অবক্ষয়ে ধর্ষণের ঘটনা আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, ধর্ষণের ঘটনা বৃদ্ধির পেছনে রয়েছে চরম নৈতিক অবক্ষয়, আকাশ সংস্কৃতির বিরুপ প্রভাব, মাদকের বিস্তার, বিচারহীনতা, বিচার প্রক্রিয়ায় প্রতিবন্ধকতা ও বিচারের দীর্ঘসূত্রিতা।
এ প্রসঙ্গে মহিলা পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মালেকা বানু বলেন, দেশে এই অবস্থা চলতে পারে না। নোয়াখালীর এ ঘটনা বর্বরতার সব সীমা অতিক্রম করেছে। আমাদের দাবি, নারীর প্রতি নির্যাতনের বিরুদ্ধে, ধর্ষণের বিরুদ্ধে সরকার ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি প্রদর্শন করুক।