গত জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত নতুন অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে সার্বিকভাবে তৈরি পোশাকের রপ্তানিতে ইতিবাচক ধারা লক্ষ করা যাচ্ছে। তবে পরিসংখ্যান বিশ্লেষণে দেখা গেছে, পোশাকের দুটি ভাগের মধ্যে ওভেন পোশাকের রপ্তানি কমেছে পূর্বের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ২২ কোটি ৪২ লাখ ডলার বা ১ হাজার ৯০৯ কোটি টাকার। ওভেন পোশাকের তালিকায় রয়েছে মূলত শার্ট ও ফরমাল প্যান্টসহ ডেনিম প্যান্ট। তবে একই সময়ে নিটওয়্যার (গেঞ্জি, সোয়েটার, ট্রাউজারজাতীয় পোশাক) রপ্তানি বেড়েছে ২৯ কোটি ৩৫ লাখ ডলার বা প্রায় আড়াই হাজার কোটি টাকার। রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) পরিসংখ্যান অনুযায়ী, মূলত নিটওয়্যার পোশাকের রপ্তানির ওপর ভর করে সার্বিকভাবে রপ্তানিতে ভালো চিত্র দেখা যাচ্ছে। একসময় নিটওয়্যার পোশাকের চাইতে ওভেনজাতীয় পোশাক রপ্তানি ছিল বেশি। তবে গত কয়েক বছর ধরে দুই ধরনের পণ্যের রপ্তানিই প্রায় সমানে সমান ছিল। কিন্তু করোনা ভাইরাস হানা দেওয়ার পর ওভেন পোশাকের রপ্তানি ব্যাপকভাবে কমতে থাকে।
রপ্তানিকারকরা বলছেন, মূলত করোনা ভাইরাসের কারণে বেশির ভাগ সময় মানুষ ঘরে থাকছে। এই সময়ে ইউরোপ আমেরিকাসহ বাংলাদেশের রপ্তানির মূল বাজারের বেশির ভাগ দেশেই বড় সময় লকডাউন ছিল। অনেকের অফিস বন্ধ ছিল কিংবা অফিসের কাজ বাড়িতে থেকে করতে হয়েছে। কোনো কোনো দেশে এখনো এই ব্যবস্থা রয়েছে। অফিস, অফিসের কার্যক্রম তথা বাইরে কম যেতে হওয়ায় মানুষের শার্ট, ফরমাল প্যান্টসহ এ ডেনিম পণ্যের চাহিদা কমেছে। এই সময়ে বরং গেঞ্জি, পোলো শার্ট, ট্রাউজারজাতীয় পোশাকের চাহিদা ছিল বেশি। ফলে ওভেন রপ্তানি কমলেও বেড়েছে নিটওয়্যার পোশাকের চাহিদা।
ওভেন পোশাক রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান ক্ল্যাসিক ফ্যাশন্সের কর্ণধার ও পোশাক রপ্তানিকারকদের সংগঠন বিজিএমইএর সাবেক সহসভাপতি শহীদুল্লাহ আজিমও এমন তথ্য জানিয়েছেন। তিনি বলেন, গত কয়েক মাসে তার প্রতিষ্ঠানেরও রপ্তানি আদেশ কমেছে। মূলত মানুষের ঘরে বেশি থাকতে হওয়ায় ওভেন পোশাকের চাহিদা কমেছে।
এডামস অ্যাপারেলসের মালিক শহীদুল হক মুকুল বলেন, গত কয়েক মাসে তার ওভেনজাতীয় পোশাকের রপ্তানি কমেছে। বেড়েছে নিটওয়্যার পণ্যের। ইউরোপ-আমেরিকাসহ বড় রপ্তানি বাজারে মানুষের অফিসের কার্যক্রম স্বাভাবিক অবস্থায় ফেরার আগ পর্যন্ত এমন পরিস্থিতি চলতে পারে বলে মনে করছেন তিনি।
অন্যদিকে গেঞ্জি, সোয়েটারজাতীয় পোশাক রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লা গার্মেন্টসের মালিক ও বিকেএমইএর পরিচালক ফজলে শামীম এহসান বলেন, গত কয়েক মাসে তাদের পণ্য রপ্তানিতে ইতিবাচক ধারা ছিল।
ইপিবির পরিসংখ্যান অনুযায়ী, গত তিন মাসে তৈরি পোশাক রপ্তানি বেড়েছে পূর্বের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় শূন্য দশমিক ৮৫ শতাংশ। এই সময়ে নিটওয়্যার রপ্তানি হয়েছে ৪৪৬ কোটি ৩৭ লাখ ডলারের আর ওভেন পোশাক রপ্তানি হয়েছে ৩৮৮ কোটি ৭৩ লাখ ডলারের। গত বছরের একই সময়ের তুলনায় নিটওয়্যার রপ্তানি বেড়েছে ৭ দশমিক শূন্য ৪ শতাংশ আর ওভেন রপ্তানি কমেছে প্রায় পৌনে ৬ শতাংশ।