বিশ্ব অর্থনীতি নিয়ে আরও অনিশ্চয়তার আশঙ্কা করল আন্তর্জাতিক মুদ্রাতহবিল (আইএমএফ)। করোনার ধাক্কা কাটিয়ে ২০২১ সালে যখন বিশ্ব অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছিল তখন ২০২২ সালে এসে ফের ধাক্কা খেল। করোনার সঙ্গে এখন নতুন নতুন শঙ্কা যুক্ত হয়েছে। বিশ্ব জুড়েই মূল্যস্ফীতি বেড়েছে।
শুধু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রেই নয়, ইউরোপ জুড়েই চলছে উচ্চ মূল্যস্ফীতি। পরিস্থিতি মোকাবিলায় আর্থিক খাতে সংকোচনের পথে হাঁটছে দেশগুলো। ফলে ধারণার চেয়েও খারাপ পরিস্থিতির দিকে যাচ্ছে বিশ্ব। গত বছর বিশ্ব অর্থনীতি ৬ দশমিক ১ শতাংশ প্রবৃদ্ধি দেখলেও এবার সেটি ৩ দশমিক ২ শতাংশে নেমে আসবে বলে পূর্বাভাস দিল সংস্থাটি। গত এপ্রিলে প্রকাশিত ‘ওয়ার্ল্ড ইকনোমিক আউলকুল’ প্রতিবেদনে যে পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছিল এবার সেটি দশমিক ৪ শতাংশ কমিয়ে নির্ধারণ করা হয়েছে।
গতকাল মঙ্গলবার (২৬ জুলাই) এই পূর্বাভাস প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে করোনার নতুন সংক্রমণ রোধে চীনে লকডাউনের মতো কড়াকড়ি আরোপ, ইউক্রেন যুদ্ধের নেতিবাচক প্রভাব, উচ্চ মূল্যস্ফীতি এ বছর বিশ্ব অর্থনীতির জন্য নতুন শঙ্কা তৈরি করেছে। ধারণা করা হচ্ছে আগামী বছর বিশ্ব অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি আরো কমে ২ দশমিক ৯ শতাংশে নেমে আসতে পারে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিশ্বে খাদ্য সংকট বেড়েছে। সাম্প্রতিক মাসগুলোতে বিশ্ববাজারে খাদ্যের দাম স্থিতিশীল হয়ে আসলেও ২০২১ সালের তুলনায় এখনো দাম বেশি রয়েছে। ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে গমের দাম বেড়েছে। বিশ্ববাজারে মূল্যবৃদ্ধির প্রভাবে বেশি ভুগছে নিম্ন আয়ের দেশগুলো। এ বছর মূল্যস্ফীতির হার ৮ দশমিক ৩ শতাংশ পর্যন্ত হতে পারে বলে পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে। ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাব ছাড়াও জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধি, পরিবহন ব্যবস্থা বিঘ্নিত হওয়ায় মূল্যস্ফীতিকে আরো উসকে দিয়েছে। মূল্যস্ফীতি যে হারে বাড়ছে সে হারে মানুষের আয় বাড়ছে না। ফলে বাড়তি ব্যয়ের বোঝা তৈরি হচ্ছে। ফলে সাধারণ মানুষের প্রকৃত আয় কমে যাচ্ছে। এটা শুধু উন্নত দেশেই নয়, উন্নয়নশীল দেশেও দেখা যাচ্ছে। পরিস্থিতি সামাল দিতে উন্নত ও উন্নয়নশীল দেশগুলো মুদ্রা সরবরাহ কমাতে উদ্যোগ নিয়েছে।
এই মুহূর্তে নীতি নির্ধারকদের মূল্যস্ফীতির চাপ কমিয়ে আনতে উদ্যোগী হতে পরামর্শ দিয়েছে আইএমএফ। কারণ মূল্যস্ফীতি যদি আরো বাড়তে থাকে সেক্ষেত্রে চলতি বছর ও আগামী বছর বিশ্ব অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি ২ দশমিক ৬ থেকে ২ শতাংশ পর্যন্ত কমে আসতে পারে। সংস্থাটির হিসাব অনুযায়ী মূল্যস্ফীতির পরিমাণ করোনার আগের অবস্থায় ফিরতে ২০২৪ সালের শেষ নাগাদ লেগে যেতে পারে। পরিস্থিতি সমলাতে সংকোচনমূলক মুদ্রানীতি ধীরে বাস্তবায়নের পরামর্শ দিয়েছে সংস্থাটি। কারণ অর্থের প্রবাহ কমে গেলে বিনিয়োগ কমে যাবে। যার প্রভাব কর্মসংস্থানের উপর পড়বে। এজন্য অর্থনীতির কাঠামোগত পরিবর্তনের সুপারিশ করা হয়েছে। বিশেষ করে রেয়াত দেওয়া, শিশুদের জন্য তহবিল তৈরি করা, শ্রম সরবরাহ বৃদ্ধিতে উদ্যোগ নেওয়া যেতে পারে। তাছাড়া আন্তর্জাতিক অভিবাসন শিথিল করা, ব্যাবসায়িক পরিবেশ উন্নত করাসহ সামগ্রিক সরবরাহ বৃদ্ধির উদ্যোগের মাধ্যমে মূল্যস্ফীতির চাপ কমিয়ে আনা সম্ভব।
এবারের পূর্বাভাস প্রতিবেদনে উন্নত এবং উন্নয়নশীল প্রায় সব দেশের প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস কমিয়ে নির্ধারণ করা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, চলতি বছর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রবৃদ্ধি ২ দশমিক ৩ শতাংশ এবং পরের বছর এক শতাংশে নেমে আসতে পারে। ইউরোপের সার্বিক প্রবৃদ্ধি হতে পারে ২ দশমিক ৬ শতাংশ যা পরের বছর ১ দশমিক ২ শতাংশে নেমে আসতে পারে। রাশিয়ার এবার পৃবৃদ্ধি না হয়ে ১ দশমিক ৪ শতাংশ সংকোচন হতে পারে। এবছর চীনের প্রবৃদ্ধি হতে পারে ৩ দশমিক ৩ শতাংশ, ভারতে ৭ দশমিক ৪ শতাংশ।