জ্বালানি তেলের ওপর ভ্যাট-ট্যাক্স কমায় আমদানি পর্যায়ে খরচ কমতে পারে ৪ থেকে ৫ টাকা পর্যন্ত। ফলে দেশের বাজারে জ্বালানি তেলের দাম কতটা কমানো যেতে পারে, সে বিষয়ে চলছে বিশ্লেষণ। দাম সমন্বয়ের বিষয়ে আগামী দুই-একদিনের মধ্যেই সিদ্ধান্ত আসতে পারে সরকারের। সোমবার (২৯ আগস্ট) সচিবালয়ে সংবাদ সম্মেলনে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ একথা বলেন।
জ্বালানি তেলের দাম সমন্বয়ের বিষয়ে নসরুল হামিদ বলেন, অগ্রিম আয়কর কমেছে, ৫ শতাংশ ট্যাক্স কমেছে। এখন জ্বালানির দাম কতটুকু কমাতে পারব তা বিশ্লেষণ করা হচ্ছে। আন্তর্জাতিক বাজারে দাম কিন্তু আবার ঊর্ধ্বমুখী। পরিশোধিত ডিজেলের ব্যারেলপ্রতি দাম উঠেছে ১৫০ ডলারে, যেটা আগে ১৩০ ডলার ছিল। এই অবস্থায় আমরা দাম কতটুকু সমন্বয় করতে পারব, সেটা ভাবছি। কারণ এখানে ভর্তুকির বড় একটা অংশ আবার যোগ হবে। যখন ডিজেল ১১৪ টাকা ছিল তখন ডিজেলে আট টাকার ওপরে ভর্তুকি ছিল, এখন হয়তো সেই জায়গাটা আরও বাড়বে।
কবে নাগাদ সমন্বয় হবে এমন প্রশ্নে প্রতিমন্ত্রী বলেন, আমি আশা করছি কাল-পরশুর মধ্যে একটা ব্যবস্থা নিতে পারবো। তবে মাঠ পর্যায়ে সমন্বয়ের সুফল পৌঁছাতে সময় লাগবে।
সমন্বয় বলতে দাম কমার কথা বোঝানো হচ্ছে কিনা জানতে চাইলে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘আমি তো কখনোই কম-বেশির কথা বলি না। আমি সমন্বয় করতে বলেছি। আমরা চাচ্ছি, ট্যাক্স যে ৫ শতাংশ কমলো, সেটার কতটুকু প্রভাব পড়বে। এটা আমদানির ক্ষেত্রে কমল কিন্তু খুচরা পর্যায়ে কতটা প্রভাবে ফেলবে সেটা তো আমাকে দেখতে হবে।
এর আগে রবিবার (২৮ আগস্ট) ডিজেলের ওপর থেকে সব ধরনের আগাম কর মওকুফ করে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। পাশাপাশি আমদানি শুল্ক ১০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৫ শতাংশ করা হয়।
আজ বিপিসি কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের (বিপিসি) চেয়ারম্যান এবিএম আজাদ জানান, তেলের দামের ওপর ভ্যাট-ট্যাক্স কমানোর ফলে খরচ কতটা কমবে তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তবে খুচরা বাজারে দাম কমানো হবে কিনা সে সিদ্ধান্ত নেবে সরকার।
বিপিসি চেয়ারম্যান আরও বলেন, এখনও ডিজেলের দাম প্রতি ব্যারেল ১৩২ ডলার পড়ছে, যেটা আমাদের বিক্রয় মূল্যের চেয়ে লিটারে সাড়ে ৯ থেকে ১০ টাকা বেশি।
এদিকে গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ বলছে, সব ধরনের কর প্রত্যাহার করলে প্রতি লিটার ডিজেলের মূল্য কম করে হলেও ৩৬ টাকা কমানো সম্ভব। কারণে, বর্তমানে লিটারপ্রতি ১১৪ টাকার ডিজেল থেকে ৩৬ টাকা কর আদায় করছে সরকার।
গত ৫ আগস্ট রাতে ডিজেল ও কেরোসিনের দাম লিটারে ৩৪ টাকা বাড়িয়ে ১১৪ টাকা করে। অকটেন ৪৬ টাকা বাড়িয়ে ১৩৫ এবং পেট্রোল ৪৪ টাকা বাড়িয়ে ১৩০ টাকা লিটার করা হয়।
জ্বালানি তেলের দামের হঠাৎ এই বৃদ্ধিতে প্রভাব পড়ে বাজারে। মুহূর্তেই বাড়তে থাকে নিত্যপ্রয়োজনীয় সব পণ্যের দাম। এতে দ্রব্যে লাগামহীন ঊর্ধ্বগতির চাপে দিশেহারা অবস্থা সাধারণ মানুষের। এ নিয়ে গত কয়েকদির তুমুল আলোচনা-সমালোচনার পর জ্বালানি তেলের দাম সমন্বয়ের পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে সরকার।