যশোরের রূপদিয়ায় মারামারি ও ভাংচুরের ঘটনায় যশোর জেলা বিএনপি নেতা গোলাম রেজা দুলুসহ ৫৬ নেতাকর্মীকে আসামি করা হয়েছে। নরেন্দ্রপুর ইউপি সদস্য মনিরুজ্জামান সাকির (৩৮) শুক্রবার এ মামলা করেন।
এ মামলায় ২০ নম্বর আসামি করা হয়েছে যশোর পৌরসভার এক নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা মাসুম কবিরকে। তিনি ওই এলাকার প্রয়াত শিক্ষক বীর মুক্তিযোদ্ধা আবুল হাশেমের ছেলে। আবুল হাশেম দেশ স্বাধীনের পর সদরের নওয়াপাড়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে ছিলেন। মাসুম কবীর একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত।
মাসুম কবির জানান, ২০২১ সালের ২ মে মাদকাসক্ত নিরাময় ও পুনর্বাসন কেন্দ্রে মাহফুজুর রহমান নামে একজনকে অন্য রোগীরা পিটিয়ে হত্যা করে। প্রতিষ্ঠানটির সাথে আমি যুক্ত ছিলাম। এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা চাঁচড়া ফাঁড়ির সাবেক পরির্দশক রোকিবুজ্জামান আমাকে মামলার আসামি করা হবে বলে ভয় দেখিয়ে ১০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে। বিষয়টি নিয়ে আমি পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানালে তিনি ক্ষিপ্ত হয়ে আমাকে হত্যার মামলার আসামি করে। পরে আমি জামিন নিয়ে পুলিশ পরিদর্শকের নামে আদালতে মামলা করি। এজন্য আমাকে বিএনপির নেতাকর্মীদের সাথে ভাংচুর মামালার আসামি করেছে। অথচ আমার বাবা আওয়ামী লীগ করেছেন। আমার পরিবারও আওয়ামী লীগের সাথে সম্পৃক্ত। এছাড়া ভাংচুর মামলার বাদীও আমাকে চেনেন না।
মামলার বাদী নরেন্দ্রপুর ইউনিয়নের ইউপি সদস্য মনিরুজ্জামান সাকির সাংবাদিকদের জানান, মাসুম কবির নামে আমি কাউকে চিনি না। এসব মামলায় কীভাবে হয় তা তো আপনারা ভালো বুঝেন।
এ বিষয়ে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শহিদুল ইসলাম মিলন বলেন, আবুল হাশেম স্যার নওয়াপাড়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে ছিলেন। তার পরিবার স্বাধীনতা পক্ষের দল করেন।
কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা তাজুল ইসলাম জানিয়েছেন, মাসুম কবীর কিভাবে আসামি হলেন সেটি বাদী জানেন। এখানে আমাদের করার কিছু নেই।
এ বিষয়ে যশোরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক-সার্কেল) বেলাল হোসাইন বলেন, তদন্তে তার (মাসুম কবীর) সংশ্লিষ্টতা না পেলে মামলা থেকে নাম বাদ দেওয়া হবে।
মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, বিএনপির নেতাকর্মীরা পূর্বপরিকল্পিতভাবে নাশকতা সৃষ্টির উদ্দেশ্যে ২৭ আগস্ট দুপুরের দিকে নরেন্দ্রপুর ইউনিয়ন পরিষদের অফিস কক্ষে প্রবেশ করে জনমনে আতঙ্ক তৈরি করে। উত্তেজিত বিএনপি কর্মীরা ইউনিয়ন পরিষদের সচিব নাজমা খাতুনসহ উপস্থিত লোকজনকে লাঠি দিয়ে মারপিট করে আহত এবং সরকারি কাজে বাধা প্রদান করে। ইটপাটকেল নিক্ষেপসহ দেশি তৈরি রাম দা, লোহার রড, এস এস পাইপ দিয়ে ইউনিয়ন পরিষদের বিভিন্ন স্থানে ভাংচুর করে। পরিষদ ভবনের ২টি সোলার, ১টি সনি ব্রাভিয়া টেলিভিশন ১৫টি সিসি ক্যামেরা মূল্য ৩ লাখ ৫০ হাজার টাকার ক্ষতি সাধন করে। এছাড়া ইউনিয়ন পরিষদের ব্যবহৃত ২টি এইচপি ল্যাপটপ মূল্য ১ লাখ টাকা, অফিস কক্ষে রক্ষিত এলজিএসপি কর্নারে রাখা বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্র নিয়ে যায়।
মামলার আসামিরা হলেন- জেলা বিএনপির সাবেক সহসভাপতি গোলাম রেজা দুলু, যশোর জেলা যুবদলের সভাপতি তমাল আহমেদ, জেলা স্বেচ্ছাসেবকদলের সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা আমির ফয়সাল, যশোর শহরের চুড়িপট্টির রকিবুল ইসলাম চৌধুরী, বারান্দী মোল্লাপাড়ার মাসুম কবীর, ঘোপের রেজাউল ইসলাম মোল্লা, ঘোপ জেল রোডের সৈয়দ আলী আশফাক, শংকরপুর ইসহাক সড়কের এসএম মোস্তাফিজুর রহমান, সদর উপজেলার চাউলিয়া গ্রামের সোহেল রানা তোতা, বালিয়াডাঙ্গার নাজমুল হোসেন বাবলু, হামিদপুরের শফিকুল ইসলাম, শেখহাটির আব্দুর রাজ্জাক, মুড়লীর বিহারী রাজু, চাউলিয়ার আব্দুস সালাম বিশ্বাস, রামপুর গ্রামের শিমুল হোসেন, গোপালপুরের হাসানুর রহমান সাকিল, রেজাউল ইসলাম রেজা, শ্রীপদ্দির আবু সাইদ, বারীনগর বাজারের বুলবুল, আব্দুস সালাম, দক্ষিণ ললিতাদহ গ্রামের হাফিজুর রহমান, জামতলা-হাটবিলার আফজাল হোসেন, কামাল শেখ, মণিরামপুরের লাউখালী গ্রামের বাবলু, রূপদিয়ার লাইছ খান, কুয়াদা বাজারের সিরাজ মোল্লা, কুয়াদা গ্রামের সরদার পাড়ার মফিজুর রহমান টিটু, রাজারহাট বাজারের লিটন হোসেন, মুড়লীর মারুফ হোসেন, রাজারহাট ধোপাপাড়ার রাজিব হাসান, রামনগরের জহির হাসান, রামনগর দক্ষিণপাড়ার মন্টু সরদার, মোজাহার, রাজারহাটের জাহাঙ্গীর, মনোহরপুরের দাউদ ইব্রাহিম, আকরাম হোসেন, রামনগর খানকায় ওয়াইছিয়ার ইমামুল, শেখহাটি লিচুতলার বেনজির বিশ্বাস, মথুরাপুরের পারভেজ, ঘাটকুল কচুয়ার আসলাম, গাইদগাছির অহেদ মোড়ল, মশিয়ার রহমান, কাজী রাহী তনি, নরেন্দ্রপুর খন্দকারপাড়ার ফারুকুজ্জামান রাসেল, নরেন্দ্রপুরের জিলহাজ, নরেন্দ্রপুর বেলতলার আব্দুস সামাদ, ঘুরুলিয়ার মজিবর রহমান, বরলামপুরের আব্দুল হালিম, জাহাঙ্গীর আলম, বসুন্দিয়া ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি অ্যাডভোকেট নুরুজ্জামান খান, রূপদিয়া কলাপট্টির মকবুল হোসেন, গোপালপুরের ইমামুল ইসলাম তুহিন, কামরুল, ধোপাপাড়ার আলম, বানিয়ারগাতির শফিয়ার রহমান শফি এবং মানিকদিহির শরীফ।