টি-টোয়েন্টিতে বড় মঞ্চে গেলেই যেন ধূসর হয়ে যায় বাংলাদেশের পারফরম্যান্স। শত চেষ্টা করেও ক্রিকেটের সংক্ষিপ্ত ফরম্যাটে জয়ের মন্ত্র পাচ্ছে না টিম টাইগার্স। ত্রিদেশীয় সিরিজের দ্বিতীয় ম্যাচে স্বাগতিক নিউজিল্যান্ডের কাছে ৮ উইকেটে হেরে ফাইনালে ওঠার আশা এক প্রকার শেষই করে ফেললো বাংলাদেশ।
নিজেদের মাঠে ত্রিদেশীয় সিরিজের প্রথম ম্যাচে পাকিস্তানের কাছে হারের পর আজ জয় প্রয়োজন ছিলো নিউজিল্যান্ডেরও। ডেভন কনওয়ের হাফ সেঞ্চুরিতে বাংলাদেশকে উড়িয়ে দিয়ে ৮ উইকেটের জয় তুলে নিয়েছে কিউইরা।
আজকের ম্যাচে বাংলাদেশেরে একাদশে ফিরেছেন নিয়মিত অধিনায়ক সাকিব আল হাসান। এছারাও আরও দুই পরিবর্তন নিয়ে মাঠে নেমেছে বাংলাদেশ।
মেকশিফট ওপেনার হিসেবে ব্যর্থ হওয়ায় আজ সাব্বির রহমানের জায়গায় একাদশে সুযোগ পেয়েছিলেন নাজমুল হোসেন শান্ত। তার সাথে বাংলাদেশের হয়ে ইনিংস শুরু করতে নেমে আজও ব্যর্থ আরেক মেকশিফট ওপেনার মেহেদি হাসান মিরাজ। মাত্র ১২ রানেই মিরাজ ফিরে গেলে অবশ্য শান্ত আর তিনে নামা লিটন দাস মিলে টাইগার ব্যাটিংয়ের হাল ধরেছিলেন ভালোভাবেই।
দুজন মিলে গড়েন ৪১ রানের জুটি। শান্ত খেলতে থাকেন কিউই বোলারদের ওপর চড়াও হয়েই। হঠাৎ করেই ছন্দপতন। ব্রেসওয়েলের বলে তার হাতেই ফিরতি ক্যাচ দিয়ে দলীয় ৫৩ রানে ফিরে যান লিটন।
সঙ্গীকে হারানোর পর আর টিকতে পারেননি শান্ত। ইস সোধির করা ইনিংসের ৯ম ওভারের শেষ বলে বাউন্ডারি লাইনে ক্যাচ তুলে দেন শান্ত। ইশা সোধি ছিলেন বোলার। মার্ক চ্যাপম্যানের হাতে ধরা পড়ার আগে করেন ২৯ বলে ৩৩ রান।
এরপর মোসাদ্দেক আর ইয়াসির আলীও ফিরেছেন দলকে হতাশায় ডুবিয়ে। ৭৮ রানেই ৫ উইকেট হারিয়ে চাপে পড়ে বাংলাদেশ। আশা জাগিয়েও আবারও সেই ভরাডুবির শঙ্কা টাইগার ইনিংসে।
এরপর দলকে বড় সংগ্রহ এনে দিতে ক্রিজে লড়াই চালিয়েছেন অধিনায়ক সাকিব আল হাসান আর আফিফ হোসেন। তবে ব্যর্থ তারাও। দুজনের জুটিতে ২৪ রান আসার পর ট্রেন্ট বোল্টের বলে বোল্ড হয়ে দলীয় ১০২ রানে ফিরে যান আফিফ। ফেরার আগে করেন ২৬ বলে ২৪ রান।
দলে ফিরেও আজ দলকে টেনে নিতে পারেননি অধিনায়ক সাকিবও। ১৬ বলে ১৬ রান করেই টিম সাউদির বলে মার্টিন গাপটিলের হাতে ক্যাচ দিয়ে সাজঘরে ফেরেন টাইগার কাপ্তান।
শেষের দিকে নুরুল হাসান চেষ্টা করেছেন যথাসম্ভব রান বাড়ানোর জন্য। তার ১২ বলে ২৫ রানের ঝড়ে শেষ পর্যন্ত নির্ধারিত ২০ ওভারে ৮ উইকেটে ১৩৭ রানের লড়াকু সংগ্রহ পায় বাংলাদেশ।
১৩৮ রানের টার্গেটে ব্যাটিং করতে নেমে শুরু থেকেই বেশ সাবলীল ব্যাটিং করতে থাকে কিউই ব্যাটাররা। ছোট লক্ষ্যে প্রথম থেকেই কোনো ধরণের ঝুঁকি নিতে চাননি কিউই ওপেনার ফিন অ্যালেন আর ডেভন কনওয়ে। টাইগার বোলাররাও তাদের চ্যালেঞ্জ জানানোর মতো বলও করতে পারেননি।
তবে ইনিংসের চতুর্থ ওভারের শেষ বলে ফিন অ্যালেনকে আউট করে বাংলাদেশকে উইকেটের দেখা পাইয়ে দেন শরিফুল ইসলাম। দলীয় ২৪ রানের মাথায় অ্যালেন ফিরে যান ১৮ বলে ১৬ ত্রান করে। এরপর টাইগার বোলিং যেন হয়ে গেলো একেবারেই সাদামাটা।
পেসার বা স্পিনার কেউই আর বাঁধা হয়ে দাঁড়াতে পারেননি কনওয়ে আর কিউই অধিনায়ক কেন উইলিয়ামসনের সামনে। টাইগার বোলারদের বেশ ভালোভাবেই শাসন করেছেন দুজন মিলে। ঝড়ো গতিতে নিজের হাফ সেঞ্চুরি তুলে নেন কনওয়ে।
একপ্রান্তে যখন কনওয়ে ঝড় তুলেছেন অপরপ্রান্তে উইলিয়ামসন বেশ ধীরস্থিরভাবে এগিয়ে নেন দলের ইনিংসকে। দুই জনের জুটিতে ৬৬ বলে নিউজিল্যান্ড তোলে ৮৫ রান ।
২৯ বলে ৩০ রান করে হাসান মাহমুদের বলে উইলিয়ামসন যখন আউট হয়ে যান তখন কিউইদের জয়ের জন্য প্রয়োজন ছিলো মাত্র ২৯ রান। এরপর গ্লেন ফিলিপসকে নিয়ে আর কোনো বিপদ ঘটতে না দিয়ে সহজেই ম্যাচ শেষ করেন কনওয়ে। দুইটি করে চার আর ছক্কায় ৯ বলে ২৩ রান নিয়ে অপরাজিত থাকেন ফিলিপস। কনওয়ের ব্যাট থেকে আসে ৫১ বলে ৭০ রানের ইনিংস। নিয়ন্ত্রিত ব্যাটিংয়ে ১৩৪ বল হাতে রেখেই ৮ উইকেটের জয় তুলে নেয় নিউজিল্যান্ড।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
বাংলাদেশ: ২০ ওভারে ১৩৭/৮ (শান্ত ৩৩, আফিফ ২৪, সোহান ২৫*; বোল্ট ৪-০-২৫-২, সাউদি ৪-০-৩৪-২, ব্রেসওয়েল ৪-০-১৪-২, সোধি ৪-০-৩১-২)
নিউজিল্যান্ড: ১৭.৫ ওভারে ১৪২/২ (কনওয়ে ৭০*, উইলিয়ামসন ৩০, ফিলিপস ২৩*; শরিফুল ৩.৫-০-৩৯-১, হাসান ৪-০-২৬-১)
ফলাফল: নিউইজিল্যান্ড ৮ উইকেটে জয়ী