সরকারি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর পরিচালকদের এক-তৃতীয়াংশই থাকবেন নারী। এ ছাড়া পর্ষদে কমপক্ষে একজন করে চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট, অবসরপ্রাপ্ত জেলা জজ বা ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেলের মতো আইন বিষয়ে অভিজ্ঞ ব্যক্তি এবং ব্যাংকার থাকবেন।
রাষ্ট্রমালিকানাধীন ব্যাংক এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান ও পরিচালক নিয়োগ সংক্রান্ত নীতিমালায় এ কথা বলা হয়েছে। সরকারের শেয়ার রয়েছে এমন বেসরকারি ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রেও এ নীতিমালা অনুসরণ করা হবে।
গত বৃহস্পতিবার এ বিষয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ। এতে বলা হয়, রাষ্ট্রমালিকানাধীন অথবা সরকারের শেয়ার থাকা ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সংশ্লিষ্ট আইন, অধ্যাদেশ ও আদেশে চেয়ারম্যান বা পরিচালক নিয়োগের জন্য থাকা বিধানের ব্যত্যয় না ঘটিয়ে এ নীতিমালা প্রয়োগযোগ্য হবে। প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের নীতিনির্দেশনা প্রণয়ন, ব্যবসায়িক কার্যক্রম সুচারুভাবে তত্ত্বাবধান এবং ব্যবস্থাপনায় সুশাসন নিশ্চিত করতে উপযুক্ত ও দক্ষ ব্যক্তিদের নিয়ে কার্যকরী পরিচালনা পর্ষদ গঠনের লক্ষ্যে এ নীতিমালা প্রণয়ন করা হয়েছে।
নীতিমালায় বলা হয়েছে, পরিচালনা পর্ষদে অর্থনীতি, ব্যাংকিং, আর্থিক বাজার, মুদ্রানীতি ও আর্থিক ব্যবস্থাপনা, ব্যবসায় শিক্ষা, ব্যবসায় প্রশাসন, কৃষি, শিল্প, আইন, তথ্যপ্রযুক্তি জ্ঞানসম্পন্ন এবং সরকারের বিবেচনায় অভিজ্ঞ ও প্রমাণিত দক্ষতাসম্পন্ন পেশাজীবী নিয়োগ নিশ্চিত করা হবে। চেয়ারম্যান বা পরিচালক নিয়োগে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিবের নেতৃত্বে বাছাই কমিটি করার কথা বলা হয়েছে এ নীতিমালায়। কমিটির বাকি সদস্যদের মধ্যে থাকবেন আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের একজন অতিরিক্ত সচিব, অর্থ বিভাগের একজন যুগ্ম সচিব ও বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন নির্বাহী পরিচালক। আর সদস্য সচিবের দায়িত্ব পালন করবেন আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের উপসচিব (কেন্দ্রীয় ব্যাংক)।
নীতিমালায় বলা হয়, সংশ্লিষ্ট ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সংঘ স্মারক বা সংঘবিধি অনুসারে পরিচালকের সংখ্যা নির্ধারিত হবে। এ ক্ষেত্রে ব্যাংক কোম্পানি আইন ১৯৯১ এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠান আইন ১৯৯৩-এর কোনো ব্যত্যয় ঘটানো যাবে না। অন্য কোনো আইন, বিধি বা কোনো আদেশে না থাকলে আপাতত কর্মরত কোনো সচিব বা সমগ্রেডের কোনো কর্মকর্তা চেয়ারম্যান বা পরিচালক পদে নিয়োগের জন্য বিবেচিত হবেন না।
প্রযোজ্য ক্ষেত্রে স্বতন্ত্র পরিচালক নিয়োগ করা হবে। এ ক্ষেত্রে অনুমোদন নিতে হবে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি)।
অন্তত ১০ বছরের প্রশাসনিক বা ব্যবস্থাপনা অথবা পেশাগত অভিজ্ঞতা না থাকলে কেউ ব্যাংকের চেয়ারম্যান বা পরিচালক হতে পারবেন না। এ ছাড়া নীতিমালায় পরিচালক নিয়োগে আরও যেসব অযোগ্যতার কথা বলা হয়েছে সেগুলোর মধ্যে রয়েছে- বাংলাদেশের নাগরিক না হলে বা অন্য কোনো দেশের নাগরিকত্ব গ্রহণ করলে বা অন্য কোনো রাষ্ট্রের প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করলে, ফৌজদারি অপরাধ, জাল-জালিয়াতি, আর্থিক অপরাধ বা অন্য কোনো অবৈধ কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকলে, ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানে ঋণখেলাপি হয়ে ক্রেডিট ইনফরমেশন ব্যুরোতে (সিআইবি) তালিকাভুক্ত হলে, আদালতে দেউলিয়া বা অপ্রকৃতিস্থ ঘোষিত হলে ইত্যাদি।
কোনো ব্যক্তি কোনো ব্যাংক, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বা বীমা প্রতিষ্ঠানের পরিচালক হলে একই সময়ে তিনি অন্য কোনো ব্যাংকের পরিচালক হতে পারবেন না। কোনো ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানে ব্যবস্থাপনা পরিচালক, বহিঃহিসাব নিরীক্ষক, আইন উপদেষ্টা, উপদেষ্টা, পরামর্শক, বেতনভুক্ত কর্মচারী বা অন্য কোনো পদে বর্তমানে বা গত পাঁচ বছরের মধ্যে দায়িত্বে নিয়োজিত থাকলে তিনি ওই ব্যাংকের পরিচালক হতে পারবেন না। অন্য কোনো ব্যাংকের উপদেষ্টা বা পরামর্শক হিসেবে থাকলেও তিনি পরিচালক নিয়োগের জন্য অযোগ্য বিবেচিত হবেন। ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানে মোট শেয়ারের বিপরীতে ২০ শতাংশের বেশি ভোটের অধিকারী কোনো কোম্পানির পরিচালক হলে তিনি সংশ্লিষ্ট ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের পরিচালক হতে পারবেন না।
নীতিমালায় আরও বলা হয়, সরকারি বা সরকারের শেয়ার থাকা কোনো ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান ও পরিচালক পদে কাউকে নিয়োগের আগে তাঁর কোনো অযোগ্যতা আছে কিনা সে বিষয়ে সংশ্লিষ্ট নিয়ন্ত্রক সংস্থার মতামত নেওয়া হবে। চেয়ারম্যান নিয়োগ বা পুনর্নিয়োগে প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদন নিতে হবে। আর পরিচালক নিয়োগে বা পুনর্নিয়োগে অনুমোদন নিতে হবে অর্থমন্ত্রীর।
রাষ্ট্রমালিকানাধীন ও বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংক, বিশেষায়িত ব্যাংক, আর্থিক প্রতিষ্ঠানের পরিচালক পদের মেয়াদ হবে সর্বোচ্চ তিন বছর। কোনো পরিচালক টানা তিন মেয়াদের বেশি থাকতে পারবেন না। তবে কোনো পরিচালকের তিন মেয়াদ শেষ হওয়ার পর তিন বছর পার হওয়ার পর তিনি আবারও পরিচালক হওয়ার যোগ্য হবেন।