বাংলাদেশ ব্যাংক নতুনভাবে ডিজিটাল ব্যাংক লাইসেন্স দেওয়ার পরিকল্পনা করছে, যা দেশের অর্থনৈতিক খাতে এক গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন। এই উদ্যোগের জন্য ন্যূনতম পরিশোধিত মূলধনের সীমা এখন থেকে ৩০০ কোটি টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে, যা আগে ছিল ১২৫ কোটি টাকা। রোববার (২৪ আগস্ট) এক প্রজ্ঞাপনে বাংলাদেশ ব্যাংক এ সিদ্ধান্তের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেয়।
২০২৩ সালের ১৪ জুন বাংলাদেশ ব্যাংক ডিজিটাল ব্যাংকের নীতিমালা প্রণয়ন করে, যার মাধ্যমে এই ব্যাংক প্রতিষ্ঠার জন্য প্রয়োজনীয় মূলধনের পরিমাণ নির্ধারিত হয়। মূলত, প্রচলিত ব্যাংকের লাইসেন্সের জন্য প্রয়োজনীয় মূলধন এখনো কমপক্ষে ৫০০ কোটি টাকা, কিন্তু ডিজিটাল ব্যাংকের ক্ষেত্রে এটি অনেক কম। নতুন নিয়ম অনুযায়ী, এই ডিজিটাল ব্যাংকগুলো ১৯৯১ সালের ব্যাংক কোম্পানি আইন অনুযায়ী লাইসেন্স পাবে। পাশাপাশি, পেমেন্ট সার্ভিস পরিচালনা হবে বাংলাদেশ পেমেন্ট অ্যান্ড সেটেলমেন্ট সিস্টেম রেগুলেশনস-২০১৪ এর অধীনে।
নীতিমালা অনুসারে, ডিজিটাল ব্যাংকের পরিচালনায় থাকবে শুধুমাত্র একটি প্রধান কার্যালয়। সেবা প্রদান করবে না কোনো শাখা, উপশাখা, এটিএম বা সিডিএম। অর্থাৎ গ্রাহকরা পুরোপুরি অ্যাপনির্ভর সেবা পাবেন, ওভার দ্য কাউন্টার (ওটিসি) সেবা পাওয়ার সুযোগ থাকছে না।
এছাড়া, ডিজিটাল ব্যাংকের সেবা ২৪ ঘণ্টাই চলবে। গ্রাহকরা ভার্চুয়াল কার্ড, কিউআর কোড এবং প্রযুক্তিভিত্তিক পণ্য ব্যবহার করে লেনদেন করতে পারবেন। তবে প্লাস্টিক কার্ড দেওয়া সম্ভব হবে না। পাশাপাশি, অন্য ব্যাংকের এটিএম ও এজেন্টের মাধ্যমে সেবা নেওয়া যেতে পারে।
ঋণ প্রদানে থাকবে কঠোর নিয়মাবলী। কোনও ডিজিটাল ব্যাংক এলসি খুলতে পারবে না এবং বড় বা মাঝারি শিল্পকে ঋণ দেওয়ার সুযোগ থাকছে না। শুধুমাত্র ক্ষুদ্র ঋণ দেওয়া সম্ভব হবে। আরও উল্লেখ্য, লাইসেন্স পাওয়ার পাঁচ বছরের মধ্যে প্রতিটি ডিজিটাল ব্যাংককে আইপিও (প্রাথমিক গণপ্রস্তাবনা) আনতে হবে, যার পরিমাণ অবশ্যই উদ্যোক্তাদের প্রাথমিক বিনিয়োগের সমান হবে।
বিশ্বজুড়ে নতুন প্রজন্মের ব্যাংকগুলো এখন ডিজিটাল ব্যাংকিংয়ের দিকে ঝুঁকছে। দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলো মধ্যে ভারত ও পাকিস্তান ২০২২ সালে ডিজিটাল ব্যাংক চালু করেছে। বাংলাদেশও এই ধারায় এগোতে যাচ্ছে। এ উদ্যোগটি দেশের অর্থনীতি ও প্রযুক্তিগত অগ্রগতির জন্য গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে দেখা হচ্ছে।