বাংলাদেশেও বায়ুদূষণ ভারতের পরে শীর্ষে থাকছে। মানব জীবনের জন্য অপরিহার্য এই উপাদানের দূষণ এখন দেশের কোটি কোটি মানুষকে ক্ষতিগ্রস্ত করে তুলেছে। এই দূষণের কারণে গড় আয়ু থেকেSাড়ে পাঁচ বছর হারিয়ে যাচ্ছে দেশের মানুষ। বুধবার প্রকাশিত যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ের এনার্জি পলিসি ইনস্টিটিউটের এয়ার কোয়ালিটি লাইফ ইনডেক্স (একিউএলআই) ২০২৫ বার্ষিক হালনাগাদ রিপোর্টে এমন ভয়াবহ তথ্য উঠে এসেছে। রিপোর্টে জানানো হয়েছে, বাংলাদেশের বায়ুদূষণের মাত্রা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) ও দেশের নিজস্ব মানদণ্ডের তুলনায় অনেক গুণ বেশি। দেশের ১৬ কোটি ৬৮ লাখ মানুষ এমন এলাকায় বসবাস করছে যেখানে বাতাসের দূষণের মাত্রা ডব্লিউএইচও-এর নির্দেশিকায় পর্যাপ্ত মানের চেয়ে মারাত্মকভাবে বেশি। এমনকি দেশের কম দূষিত বলে পরিচিত জেলা লালমনিরহাটেও ডব্লিউএইচও মানদণ্ডের সাত গুণ বেশি দূষণ পাওয়া গেছে। ১৯৯৮ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশের সূক্ষ্ম ধুলিকণা (পিএম ২.৫) এর ঘনত্ব ৬৬ শতাংশের বেশি বেড়েছে, যার ফলে গড় আয়ু আরও ২.৪ বছর কমে গেছে। একিউএলআই রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে, ‘বায়ুদূষণ প্রত্যেক বাংলাদেশির জীবন থেকে বছর কেড়ে নিচ্ছে। এর প্রভাব ধূমপান, অপুষ্টি কিংবা অস্বাস্থ্যকর পানি—সবকিছুকে ছাড়িয়ে যায়।’ তুলনামূলকভাবে, ধূমপান গড় আয়ু মাত্র ২ বছর কমায়, আর শিশু ও মাতৃস্বাস্থ্যজনিত সমস্যা ১.৪ বছর কমায়। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে ঢাকা ও চট্টগ্রামের মতো জনবহুল এলাকা। ঢাকার মানুষের গড় আয়ু ডব্লিউএইচও মানদণ্ডে পৌঁছালে প্রায় ৬.৯ বছর বৃদ্ধিপাবে। এমনকি দেশের জাতীয় মানদণ্ড ৩৫ মাইক্রোগ্রাম/ঘনমিটার মানদণ্ড পূরণ হলেও ঢাকাবাসীর গড় আয়ু অন্তত ৪ বছর বাড়তে পারে। গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ ও টাঙ্গাইলের মতো জেলাগুলোর পরিস্থিতি আরও বেশি ভয়াবহ। সেখানে ডব্লিউএইচও মান দোনে পৌঁছাতে পারলে গড় আয়ু S৬.৫ বছরের বেশি বাড়বে। তবে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, ভয়াবহ এই পরিস্থিতি সত্ত্বেও দেশের নীতি ও পদক্ষেপ খুবই দুর্বল। ঢাকার আশপাশের ইটভাটাগুলো দীর্ঘদিন ধরেই দূষণের প্রধান উৎস হিসেবে বিবেচিত হলেও সেগুলো কার্যকরভাবে নিয়ন্ত্রণে আসেনি। অপরদিকে, পুরোনো বাস ও ট্রাক থেকে নির্গত কালো ধোঁয়া ও শিল্পকারখানার অপ্রয়োজনীয় নির্গমন দূষণ আরও বাড়িয়ে তুলছে। দেশের সঙ্গে সঙ্গে প্রতিবেশী দেশ থেকেও মৌসুমি ধোঁয়াশা প্রবেশ করছে, যা পরিস্থিতি আরও জটিল করে তুলছে। তবে এ ব্যাপারে আঞ্চলিক সহযোগিতা খুবই সীমিত। পরিবেশ অধিদপ্তরসহ সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর জনবল ও ক্ষমতা কম থাকার কারণে আইনের বাস্তবায়নও বাধাপ্রাপ্ত। একিউএলআই অনুযায়ী, এটি কেবল নিয়ন্ত্রণহীনতার ব্যর্থতা নয়, বরং এটি এক চলমান জনস্বাস্থ্য বিপর্যয়।