বাজারে গত কয়েক সপ্তাহ ধরে সবজির দাম ব্যাপকভাবে বেড়ে গেছে। এর সঙ্গে আরও বৃদ্ধি পেয়েছে মুরগি, ডিম, এবং পেঁয়াজের দামের স্তর। নতুন করে চালু হয়েছে মুদি পণ্যের মূল্যবৃদ্ধির ট্রেন্ড, যেখানে এক সপ্তাহের মধ্যে মসুর ডাল এবং আটা-ময়দার দাম বেড়েছে। বাজার সংশ্লিষ্টরা জানাচ্ছেন যে, আগামী কিছু দিনের মধ্যে ভোক্তা পর্যায়ে আলুর দামও আর বাড়বে।
শুক্রবার (২৯ আগস্ট) রাজধানীর বিভিন্ন পাইকারি ও খুচরা বাজার যাচাই করে এই চিত্র দেখা গেছে। গত তিন-চার দিনের মধ্যে বাজারে প্যাকেটজাত এক কেজি আটা কোম্পানিভেদে ৫০ থেকে ৫৫ টাকায় বিক্রি হতো। এখন এর দাম বেড়ে হয়েছে ৫৫ থেকে ৬০ টাকা। অন্যদিকে, খোলা আটার দাম কেজিপ্রতি ৫ টাকা বেড়ে ৪৫ থেকে ৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। একইভাবে, কোম্পানিভেদে ময়দার দাম কেজিতে ৫ টাকা বেড়ে এখন ৭০ থেকে ৭৫ টাকায় দাঁড়িয়েছে।
খোলা ময়দার দাম এখন ৬৫ থেকে ৭০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। বাজারে মানের মসুর ডালের দাম আগে ছিল ১৩৫ থেকে ১৪০ টাকা, এখন বেড়ে ১৪৫ থেকে ১৫০ টাকায় পৌঁছেছে। যার অর্থ, এক কেজির দাম বেড়েছে প্রায় ১০ টাকা। একই সঙ্গে, বড় দানার মসুর ডালের দাম এখন ১২৫-১৩০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
সবজির দামে গত সপ্তাহের তুলনায় খুব বেশি পরিবর্তন দেখা যায়নি। এক কেজি বেগুন এখনো ১০০-১২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। করলা ৯০-১০০, কচুর লতিবিশেষ ৮০-১০০, ঢ্যাঁড়স ৭০-৮০, কচুর মুখি ৮০-৯০, পেঁপে ৩০-৪০, আর পেঁচিংগা-ঝিঙ্গা বিক্রি হচ্ছে ৯০-১০০ টাকায়। কাঁচামরিচের দাম রয়ে গেছে ২০০-২৫০ টাকায়।
পেঁয়াজের বাজারে দাম কমেনি, যদিও আমদানি বাড়ছে। বর্তমানে প্রতি কেজি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৮০-৮৫ টাকায়। তালতলা বাজারের বিক্রেতা বুলু মিয়া বলেন, ভারত থেকে আমদানি করা পেঁয়াজের দামও বেশি হয়ে গেছে। এই পেঁয়াজের দাম বর্তমানে দেশি পেঁয়াজের সঙ্গে সমান। ফলে, আমদানির পরও দাম কমছে না।
কারওয়ান বাজারে পাইকারি দামে প্রতিকেজি আমদানি করা পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৬০-৬২ টাকায়, যেখানে দেশি পেঁয়াজের দর ৬৫-৭২ টাকায়।
অন্যদিকে, উচ্চমূল্যে আটকে রয়েছে ডিম ও মুরগির দাম। ব্রয়লার মুরগির প্রতি কেজি দাম দাঁড়িয়েছে ১৭০-১৮০ টাকায়, আর সোনালি মুরগির দাম ৩২০-৩৩০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। একই সঙ্গে, এক ডজন ডিম বিক্রি হচ্ছে ১৪৫-১৫০ টাকায়।
আলুর দাম বাড়ার আশা করছেন কৃষক ও ব্যবসায়ীরা, কারণ চাহিদার তুলনায় উৎপাদন বেশি থাকায় তারা বেশির ভাগ সময় লোকসানেই বিক্রি করে আসছেন। তাদের দাবি অনুযায়ী, এবার ভ্রাম্যমাণভাবে আলুর ন্যূনতম হিমাগার মূল্য নির্ধারণ করে দিয়েছে সরকার, সেটি ২২ টাকা। তবে এখনো বাজারে এর প্রভাব পড়েনি। আশঙ্কা করা হচ্ছে, কয়েকদিনের মধ্যে আলুর দাম আরো বাড়বে বলে বাজারের ব্যবসায়ীরা জানাচ্ছেন।
তারা বলছেন, এতদিন আলুর হিমাগারে ১২-১৫ টাকা কেজিতে বিক্রি হয়েছিল, এখন তা বেড়ে হয়েছে ৭-১০ টাকা। এর প্রভাব স্বাভাবিকভাবেই বাজারে পড়বে এবং খুচরায় আলুর দাম কিছুটা 상승 করতে পারে। বর্তমানে খুচরা বাজারে আলুর দাম এখনও ২৫-৩০ টাকায় রয়েছে, তবে ভবিষ্যতে দাম আরও বাড়তে পারে।
গভীর বিবরণে জানা গেছে যে, কৃষি মন্ত্রণালয় ২৭ আগস্ট প্রজ্ঞাপন জারি করে, আলুর হিমাগার গেটের জন্য সর্বনিম্ন মূল্য নির্ধারিত করেছে। তবে খুচরা বাজারে আলুর সর্বোচ্চ বিক্রির মূল্য এখনও সরকারিভাবে নির্ধারিত হয়নি, ফলে দাম নির্ভর করবে বাজারের পর্যাপ্ত পরিস্থিতির উপর।
কারওয়ান বাজারের আলুর আড়তদার জাহাঙ্গীর বললেন, ‘সরকার দাম নির্ধারণের পরও কিছুটা বেড়েছে। এখন আমরা সাড়ে ১৫ টাকা কেজিতে আলু বিক্রি করছি। যখন হিমাগার গেটে ২২ টাকা বিক্রি হবে, তখন আমাদের অবশ্যই সাড়ে ২৪ টাকা কেজি দরে কিনতে হবে। সব খরচ যোগ করলে বিক্রির মূল্য হয়ে যাবে ২৭-২৮ টাকা, যা স্বাভাবিকভাবেই খুচরা বাজারে দাম বাড়িয়ে দেবে। বাজারে আলুর দাম ৩৫-৪০ টাকায় উঠে যেতে পারে। তবে সরকারের মনিটরিং থাকলে এই প্রভাব খুব বেশি পড়বে না।’