দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশ মালয়েশিয়ায় ব্যাপক অভিবাসন বিরোধী অভিযান চালানো হয়েছে। রাজধানী কুয়ালালামপুরের বুকিত বিনতাং এলাকায় রাতের আঁধারে এই অভিযান পরিচালনা করা হয়, যেখানে ৭৭০ জন অনিবন্ধিত অভিবাসীকে আটক করেছে দেশটির অভিবাসন বিভাগ। এই অভিযানে মূলত দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা অভিবাসীরা আটক হন, যার মধ্যে প্রায় ৪০০ জন বাংলাদেশি। এছাড়া অন্য দেশগুলোর নাগরিকরাও এই তালিকায় রয়েছেন, যেমন মিয়ানমার, নেপাল, ভারত এবং ইন্দোনেশিয়া। বুধবার (৩ সেপ্টেম্বর) প্রকাশিত সংবাদমাধ্যম নিউ স্ট্রেইট টাইমসের রিপোর্টে এই তথ্য জানানো হয়।
অভিযানের সময় মালয়েশিয়ার রাজধানীর বুকিত বিনতাং এলাকায় রাতের বেলায় ব্যাপক উপস্থিতি ছিল। ওই সময় সেখানকার বাজার ও সড়কগুলোতে শত শত অভিবাসী বিভিন্ন আশ্রয়স্থলে লুকিয়ে থাকতেন, কেউ কেউ দোকানের নিচে, আবার কেউ বা ছাদে উঠে পালানোর চেষ্টা করছিলেন। তবে শেষ পর্যন্ত সবাইকেই ধরা হয়।
অভিযানের নাম দেওয়া হয় “অপস বেলাঞ্জা”, যার অর্থ ‘বিরোধী অভিযান’। মাত্র দুই ঘণ্টার এই অভিযানে ওই এলাকার মূল রাস্তাগুলো পুরোপুরি লকডাউন করে দেওয়া হয়। পর্যটকদের জন্য জনপ্রিয় এই এলাকাকে নিষেধাজ্ঞার আওতায় আনা হয়, যেখানে কর্মকর্তারা সড়কগুলো ঘিরে ফেলে সন্দেহভাজনদের তল্লাশি শুরু করেন।
অভিযানের প্রথম পর্যায়ে ট্রাফিকে আটক করা হয় ১০৬ জন অভিবাসী বিভাগীয় কর্মকর্তাদের দ্বারা। এই অভিযানটি পরিচালনা করেন অভিবাসন বিভাগের পরিচালক বাসরি ওসমান। তিনি জানান, মোট ২ হাজার ৪৪৫ জনের তল্লাশি চালানো হয়েছিল, যার মধ্যে ১ হাজার ৬০০ জন বিদেশি এবং ৮৪৫ জন স্থানীয়।
আটককৃত ব্যক্তিদের মধ্যে বাংলাদেশি রয়েছেন ৩৯৬ জন। এর মধ্যে ৩৯৪ জন পুরুষ এবং ২ জন নারী। এছাড়া অন্য দেশের নাগরিকরা রয়েছেন যেমন- মিয়ানমারের ২৩৫ জন, নেপালের ৭২ জন, ভারতের ৫৮ জন, ইন্দোনেশিয়ার ১৭ জন পুরুষ ও ২ জন নারী, আরও ৯ জন বিভিন্ন দেশের। অভিবাসন বিভাগ জানায়, অধিকাংশ আটক ব্যক্তির বৈধ ভিসা মেয়াদোত্তীর্ণ হওয়া, পরিচয়পত্রের অভাব বা অনুমতি ছাড়া কাজের জন্য বিনিয়োগ করা।
অভিবাসীরা সাধারণত দারিদ্র্য ও বেকারত্বের কারণে মালয়েশিয়ায় আসেন, যেখানে নির্মাণ, বাগানসহ ঝুঁকিপূর্ণ খাতে কাজ করে থাকেন। স্থানীয়রা এই ধরনের কাজ করতে আগ্রহী না হওয়ায় তারা এই শ্রমে জড়িয়ে পড়েন।
বাসরি ওসমান বলেন, “একা এই এলাকার অপ্রতুলতা আর অবৈধ অভিবাসীদের জন্য নানা অভিযোগের প্রেক্ষিতে এই অভিযান চালানো হয়। দীর্ঘদিন ধরেই বুকিত বিনতাং হটস্পট হিসেবে পরিচিত, যেখানে নাইটলাইফ এবং শহরটির কেন্দ্রীয় অংশ থাকায় অবৈধ শ্রমিকদের জন্য এটি আকর্ষণীয় হয়ে উঠেছে। আমরা তিন সপ্তাহ ধরে নজরদারি চালানোর পর এই অভিযান শুরু করি।”
অভিযানের সময় তারা একটি গোপন জুয়া আয়েজও খুঁজে পান যেখানে সাত থেকে আটজন বিদেশি অনলাইনে জুয়া খেলছিলেন, সিসিটিভি ক্যামেরার মাধ্যমে নজরদারিতে ছিল তারা। এসব অভিযোগ পাওয়ার পরে বিভিন্ন দোকানপাটও অভিযান চালিয়ে আটক করা হয়।
অভিযান শেষে বাসরি ওসমান বলেছিলেন, আটককৃতদের প্রথমে প্রাথমিক যাচাইয়ের জন্য পুত্রজায়া অভিবাসন দপ্তরে নিয়ে যাওয়া হবে, এরপর তাদের আটক কেন্দ্রে পাঠানো হবে। তিনি আরও জানান, এই ধরনের অভিযান ভবিষ্যতেও অব্যাহত থাকবে এবং ব্যবসায়ীদের সতর্ক করে বলেন, অনুমোদিত কোটার মধ্যে বিদেশি কর্মী নিয়োগের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সহযোগিতা করা জরুরি।