নভেম্বরে শুরু হয় মিয়ানমারে অবশিষ্ট রোহিঙ্গাদের উপর ব্যাপক নির্যাতন। এই আতঙ্কবাদে যুক্ত হয়েছে আরাকান আর্মি, যা মিয়ানমার সেনাবাহিনীর সাথে যোগ দেয়। এ কারণে হাজার হাজার রোহিঙ্গা ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট নাফ নদী পেরিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশের প্রাণপণ চেষ্টা করে। তবে সেই দিন ড্রোন ও আর্টিলারি হামলার ফলে শত শত রোহিঙ্গা নিহত হয়। জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশনের প্রতিবেদন অনুযায়ী, গতকাল মঙ্গলবার প্রকাশিত এই তথ্য উঠে এসেছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২৩ সালের নভেম্বর থেকে রাখাইনে সংঘাতের মাত্রা বাড়তে থাকে, যা রোহিঙ্গাসহ সকল জাতিগোষ্ঠীর জন্য গভীর উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এখন পর্যন্ত অন্তত ৪০৯টি বিমান হামলা এবং ২৭৪টি আর্টিলারি হামলা সহ ১৬৩৩টি সংঘাতের ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে কমপক্ষে ৩৭৪ জন বেসামরিক নাগরিক হতাহত হয়েছে, যাদের বেশিরভাগই মারা গেছে। চালকরা জানিয়েছেন, ২০২৪ সালে ডিসেম্বরে পশ্চিমা সামরিক দখলে আসে আরাকান আর্মি। মংডু শহরে গত বছরের ৫ আগস্টের ঘটনাগুলোর বিস্তারিত বিবরণ পাওয়া যায়, যেখানে যুদ্ধ থেকে বাঁচতে অনেক রোহিঙ্গা নাফ নদীর তীরে জড়ো হয়। সেদিন বিকেলের হামলায় সম্ভবত শত শত রোহিঙ্গা প্রাণ হারায়। এক সাক্ষাৎকারে একজন বলেছেন, ‘নদীর তীরে ১০-১২ হাজার মানুষ ছিল; তারা অনেককেই মারা গেছে। যেখানে যেখানে লুকিয়ে ছিলাম, মৃতদেহ everywhere দেখতে পেয়েছি।’ আরেকজন জানিয়েছেন, তারা যে নৌকায় বাংলাদেশের দিকে যাচ্ছিল, সেটি ড্রোন হামলায় আছড়ে পড়ে। এতে ৪৬ জন বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়, মাঝে শিশু ছয়জন। তবে, আরাকান আর্মি “চরমপন্থী মুসলিম সশস্ত্র গোষ্ঠী”কে অভিযুক্ত করলেও, অনেক বেঁচে যাওয়া রোহিঙ্গা হামলার জন্য সরাসরি এই আর্মিকেই দায়ী করছে, কারণ হামলা চলাকালে তারা আরাকান আর্মির নিয়ন্ত্রিত এলাকা থেকে ড্রোন চালাচ্ছিল। ৫০ জনের একটি নৌকায় ছিল এমন আঘাত, যেখানে ৩৮ জন নিহত হয়। প্রতিবেদনে জানানো হয়, ২০২১ সালের সামরিক ধাক্কার পর থেকে এখন পর্যন্ত প্রায় ৭১০০ জন নিহত হয়েছেন, যার মধ্যে অনেক নারী ও শিশু। আরও ২৯,৫৬০ জন গ্রেপ্তার, এবং ২২,০০০ এর বেশি মানুষ এখনও আটক। রাখাইনে রক্তঘাতক সংঘাতের ফলে লক্ষাধিক মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে। জাতিসংঘ অনুমান করে, নভেম্বর থেকে এখন পর্যন্ত আরো দেড় লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। জাতিসংঘের মানবাধিকার হাইকমিশনার ভলকার তুর্ক উল্লেখ করেছেন, রোহিঙ্গা ও রাখাইন জাতিগোষ্ঠীর নাগরিকরা নিরন্তর ঝুঁকিতে রয়েছেন। নিরীহ মানুষদের ওপর গণহত্যা, জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুতি, গ্রেপ্তার, সম্পত্তি ধ্বংস ও মানবিক সহায়তা অস্বীকারের ঘটনা বেড়েই চলেছে। তিনি আরও বলেন, সামরিক বাহিনী এবং আরাকান আর্মি প্রায়ই দায়মুক্তি পেয়ে নিরীহ নাগরিকদের জন্য দুর্ভোগের চক্র চালিয়ে যাচ্ছে, যার কারণে এই অপ্রতিরোধ্য সংঘর্ষ অব্যাহত। আন্তর্জাতিক মহল বারবার মিয়ানমার পরিস্থিতিকে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত বরাবর তুলে ধরার আহ্বান জানিয়েছেন। ২০২৫ সালের ৩১ মে’র আগে, গত ১৪ মাসে সামরিক বাহিনী বিমান হামলায় কমপক্ষে ৮৩৮ জন বেসামরিক প্রাণ হারিয়েছে। সব মিলিয়ে নিহতের সংখ্যা এখন ১৮১১। এই সময়ে নতুন ধরনের দুটি হামলার ধরণ দেখা গেছে, যার মধ্যে ছয় রাজ্যে বিস্ফোরক ও রাসায়নিক দ্রব্য ব্যবহারের অভিযোগ এবং কৌশলগত বিমান ব্যবহার করে বেসামরিক স্থানে গোলাবারুদ হামলা।