জলবায়ু পরিবর্তন এবং অন্যান্য কারণে বিশ্বের বেশ কিছু শহরে ধীরে ধীরে বায়ুদূষণের মাত্রা বাড়ছে। দীর্ঘ দিন ধরে ঢাকার বাতাসও দূষিত হয়ে আসছে, যা স্বাস্থ্যে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। শনিবার (১৩ সেপ্টেম্বর) সকালে আইকিউএয়ার এর তথ্যানুযায়ী, শহরের বায়ুদূষণের স্কোর ছিল ৬৪, যা সহনীয় স্তরে গণ্য হয়। তবে, এটি একটি উদ্বেগের বিষয়, কারণ শহরের বাতাস এখনও পুরোপুরি নিরাপদ নয়।
বিশ্বের দূষিত শহরগুলোর তালিকায় আজকের দিনে শীর্ষে রয়েছে কঙ্গো প্রজাতন্ত্রের রাজধানী কিনশাসা, যেখানে বায়ুমানের স্কোর ছিল ১৫৯। দ্বিতীয় স্থান ধারণ করে ফিলিপাইনের ম্যানিলা, যেখানে স্কোর ছিল ১৫৭। তৃতীয় স্থান অধিকার করে চীনের বেইজিং, যেখানে স্কোর ছিল ১৩৭। এর পরে পাকিস্তানের করাচি ১৩৪ স্কোরসহ চতুর্থ স্থানে এবং আফগানিস্তানের কাবুল ১৩২ স্কোরসহ পঞ্চম স্থানে রয়েছে। এসব শহরগুলোতে বায়ুর মান খুবই খারাপ এবং স্বাস্থ্য ঝুঁকি বাড়ছে।
আইকিউএয়ার প্রতিষ্ঠানটি একটি একিউআই (এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্স) প্রকাশ করে, যা প্রতি মুহূর্তে বাতাসের মানের অগ্রাধিকার দেয়। এই সূচকটি দেখায় কতটা নির্মল বা দূষিত বাতাসে জীবন পরিচালনা করছে মানুষ। একিউআই স্কোর শূন্য থেকে ৫০ এর মধ্যে থাকলে বাতাস ভালো বলে গণ্য হয়। ৫১ থেকে ১০০ স্কোর সহনীয় বা মাঝারি মানের। ১০১ থেকে ১৫০ স্কোর অস্বাস্থ্যকর ও সংবেদনশীল গোষ্ঠীর জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। ১৫১ থেকে ২০০ স্কোর অস্বাস্থ্যকর হিসেবে বিবেচিত হয়। ২০১ থেকে ৩০০ স্কোর খুবই অস্বাস্থ্যকর এবং ৩০১ এর বেশি হলে তা মারাত্মক দুর্যোগপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত।
বায়ুদূষণ বিশেষ করে শিশু, অসুস্থ ব্যক্তি, প্রবীণ ও গর্ভবতী নারীর জন্য খুবই ক্ষতিকারক। বাংলাদেশে একিউআই নির্ধারণে মূলত পাঁচটি বিশ্লেষণ করা হয়: বস্তুকণা (পিএম১০ ও পিএম২.৫), নাইট্রোজেন ডাই-অক্সাইড (এনও₂), কার্বন মনোক্সাইড (সিও), সালফার ডাই-অক্সাইড (এসও₂) ও ozone (ও’৩)।
২০১৯ সালে বিশ্বব্যাংক ও পরিবেশ অধিদপ্তরের একটি প্রতিবেদন জানায়, ঢাকায় বায়ুদূষণের তিনটি মূল উৎস হলো—ইটভাটা, যানবাহনের ধোঁয়া এবং নির্মাণ সাইটের ধুলা। বিজয়াদীপ্তির এই দূষণ থেকে দেশের জনস্বাস্থ্য ঝুঁকিতে পড়ছে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (WHO) মতে, বায়ুদূষণের কারণ স্ট্রোকে, হৃদরোগে, ক্রনিক অবস্ট্রাকটিভ পালমোনারি ডিজিজ, ফুসফুসের ক্যান্সার ও শ্বাসযন্ত্রের সংক্রমণে মৃত্যুহার বৃদ্ধি পাচ্ছে। প্রতি বছর বিশ্বজুড়ে এই দূষণে প্রায় ৭০ লাখ মানুষ মারা যাচ্ছে। এই সমস্যার সমাধানে সচেতনতা ও কার্যকর কাঠামো জরুরী।