বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ১৫ বছরের শাসনামলে দেশে ব্যাপক আর্থিক দুর্নীতি ও অর্থ পাচারের ঘটনা ঘটেছে, এমন গুরুতর অভিযোগ তুলে ইতিহাসে এটি অন্যতম বৃহৎ আর্থিক অপতৎপরতা। ব্রিটিশ দৈনিক ফিনান্সিয়াল টাইমসের খবরে প্রকাশ হয়েছে, ২০০৯ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ থেকে অবৈধভাবে প্রায় ২৩ হাজার ৪০০ কোটি ডলার বিদেশে পাচার হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, এই অর্থের ভাগ্য নির্ধারণে সরকারের বিভিন্ন দিক থেকে প্রশ্ন উঠেছে— কীভাবে এত বিপুল অর্থ বিদেশে চলে গেল এবং কি কোনওভাবেই তা ফেরত আনা সম্ভব হবে কি না। বিশেষ করে, আওয়ামী লীগ সরকার গঠনকালে সাধারণ জনগণের ক্ষোভ জেলেপড়েছে কোটা সংস্কার ও তার সঙ্গে যুক্ত নানা অনিয়মের কারণে। ২০২৪ সালে শুরু হয়ব্যাপক আন্দোলন এবং এর পাল্টা ভীতিপূর্ণ দমননীতি, যেখানে হয় পুলিশি হামলা, গুলি, পাথর বর্ষণসহ ব্যতিক্রমী পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়। শেষ পর্যন্ত, শেখ হাসিনা দেশ ত্যাগ করে ভারতে পণে বাধ্য হন। জাতিসংঘের হিসাব অনুযায়ী, এই আন্দোলনে কমপক্ষে ১৪শো মানুষের নিহত হওয়ার আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে, তবে বাস্তবে এর সংখ্যা আরও বেশি বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা।
দুর্নীতি ও অর্থ পাচারের বিষয়ে ব্যাপক অভিযোগ উঠেছে, বিশেষ করে যুক্তরাজ্যকেন্দ্রিক। লন্ডনের শক্তিশালী আর্থিক খাত ও রিয়েল এস্টেটের বাজারকে টার্গেট করে বিপুল পরিমাণ অর্থ বিদেশে স্থানান্তর করা হয়েছে। শেখ হাসিনার বোন শেখ রেহানার পরিবারের বিরুদ্ধে অত্যন্ত গুরুতর অভিযোগ এসেছে, যেখানে তার মেয়ে টিউলিপ সিদ্দিকের বিরুদ্ধে অবকাঠামো প্রকল্প থেকে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ ওঠে। এছাড়াও, ব্রিটিশ অপরাধ দমন সংস্থা (এসসিএ) ইতিমধ্যে প্রায় ৩৫০টি সম্পত্তি জব্দ করেছে। এক মতো, রিপোর্ট অনুযায়ী, প্রতিবছর গড়ে ১৬০০ কোটি ডলার বাংলাদেশ থেকে পাচার হচ্ছে বলে ধারণা।
অভিযোগ রয়েছে, সেনা গোয়েন্দা সংস্থা ডিজিএফআইয়ের সহযোগিতায় কিছু সুনির্দিষ্ট ব্যাংক দখল ও বেআইনি ঋণ প্রদান করা হয়েছে, যা হাজারো কোটি টাকা বিদেশে পাচার হয়েছে হুন্ডির মাধ্যমে। বিশ্লেষকরা মনে করেন, বাংলাদেশের ইতিহাসে এটি সম্ভবত সবচেয়ে বড় আর্থিক লুটপাট, যেখানে মোট অর্থের পরিমাণ প্রায় ২৩,৪০০ কোটি ডলার।
সরকার পতনের পরবর্তী সময়ে, নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে নতুন অন্তর্বর্তী সরকার গঠন করা হয় এবং তিনি বিশেষ টাস্কফোর্স গঠন করে অর্থ ফেরত আনার পরিকল্পনা হাতে নেন। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য মতে, অন্তত ১১টি ব্যাংক দেউলিয়া হতে যাচ্ছে, যার জোগানে ইতিমধ্যে ২৯ হাজার কোটি ডলার ব্যয় হয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, এই অর্থ উদ্ধার করতে বছর লাগবে, এবং এর জন্য দুর্নীতির কঠোর সংস্কার জরুরি। আরেক দিকে, আগামী নির্বাচনের জন্য দ্রুত সংস্কার ও স্বচ্ছতার দাবি বাড়ছে, যেখানে উপস্থিত আত্মসমালোচনা থেকে উঠে আসে সরকারি দমন-পীড়নের দিক। সম্ভাব্য নির্বাচনের তারিখ নির্দেশ করে ফেব্রুয়ারি ২০২৬।
অংশবিশ্লেষকরা মনে করেন, জনগণের আস্থা পুনঃপ্রতিষ্ঠায় মৌলিক সংস্কার জরুরি না হলে, বাংলাদেশ আবারও দুর্নীতির জাল ও ক্ষমতার একচ্ছত্র দখলের ফাঁদে পড়তে পারে। সূত্র: ফিনান্সিয়াল টাইমস