আমাদের প্রিয় দেশটির অন্যতম প্রবীণ এই আলেম ও ইসলামিক পণ্ডিত শায়খুল হাদিস আল্লামা মুফতি আহমদুল্লাহ (ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন) বেঙ্গালুরুতে না ফেরার দেশে চলে গেলেন। রবিবার (১৪ সেপ্টেম্বর) ভোর সাড়ে ছয়টার দিকে চট্টগ্রাম নগরীর এক বেসরকারি হাসপাতালে তিনি ইন্তেকাল করলেন। তাঁর মরদেহ এখন পটিয়া মাদরাসার প্রাঙ্গণে রাখা হয়েছে, যেখানে রাত ৯টায় জানাজার নামাজ অনুষ্ঠিত হবে।
শায়খুল হাদিস আল্লামা আহমদুল্লাহ দীর্ঘ দিন ধরে বার্ধক্যজনিত বিভিন্ন রোগে ভুগছিলেন। সম্প্রতি তিনি ব্রেইন স্ট্রোকে আক্রান্ত হয়েছেন এবং হাসপাতালে চিকিত্সাধীন ছিলেন। কয়েকদিন আগে তার স্বাস্থ্যের অবনতি হলে তাকে আইসিইউতে স্থানান্তর করা হয়। চিকিৎসকদের অনুযায়ী, তার অবস্থার কিছুটা অবনতি এটিই ছিল তার শেষ সংগ্রাম।
আল্লামা মুফতি আহমদুল্লাহ জন্মগ্রহণ করেন ১৯৪১ সালের ১ মে চট্টগ্রামের পটিয়া থানার নাইখাইন গ্রামে এক সম্ভ্রান্ত পরিবারে। তার পিতা ছিলেন মাওলানা ঈসা (রহ.), এবং তার মাতার পূর্বপুরুষ ছিলেন দেশের প্রাচীনতম শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান জিরি মাদরাসার প্রতিষ্ঠাতা, মুহতামিম মাওলানা আহমদ হাসান (রহ.)।
১৯৫১ সালে মাত্র ১০ বছর বয়সে জিরি মাদরাসায় পবিত্র কোরআন হেফজ শুরু করেন। এরপর সেখানে দাওরায়ে হাদিস সম্পন্ন করেন, যেখানে তিনি প্রতিটি ক্লাসে প্রথম স্থান অধিকার করতেন। ১৯৬৪ সালে পাকিস্তানে অবস্থিত জামিয়া আশরাফিয়া লাহোর থেকে দাওরায়ে হাদিস ডিগ্রি লাভ করেন, সেখানে তিনি বিশ্বখ্যাত মুফাসসির ও সিরাতগবেষক মাওলানা ইদরিস কান্ধলভি (রহ.)-এর সান্নিধ্য লাভ করেন। এরপর তিনি মুলতানে খাইরুল মাদরাসায় দারস পড়েন এবং আধ্যাত্মিক জ্ঞানে শিষ্য হন।
১৯৬৭ সালে দারুল উলুম করাচির ইফতা বিভাগে ভর্তি হন এবং পাকিস্তানের আল্লামা মুহাম্মদ শফি উসমানি (রহ.)-এর কাছে ফিকহের জ্ঞান অর্জন করেন। ১৯৬৮ সালে দেশে ফিরেই জিরি মাদরাসায় শিক্ষকতা শুরু করেন। তিনি সেখানে দীর্ঘ ২৩ বছর অধ্যাপনা করেন এবং পরবর্তীতে শায়খুল হাদিস হিসেবে সুপ্রতিষ্ঠিত হন ও হাদিসের অপরিহার্য পাঠদান চালিয়ে যান।
১৯৯১ সালে পটিয়া মাদরাসায় যোগ দেওয়ার পর থেকে তিনি সেখানে সিনিয়র মুহাদ্দিস ও মুফতি হিসেবে ৩০ বছর দায়িত্ব পালন করেন। ২০২২ সালে তিনি শায়খুল হাদিস ও প্রধান মুফতি নিযুক্ত হন। জীবনের প্রথম দিকে তিনি মুফতি মুহাম্মদ শফি (রহ.)-এর কাছ থেকে আধ্যাত্মিক শিক্ষা গ্রহণ করেন এবং পরবর্তীতে হাফেজ্জি হুজুর (রহ.)-এর ছাযাদত লাভ করেন। ১৯৮১ সালে হাফেজ্জি হুজুরের কাছ থেকে তাসাউফের ইজাজত ও খেলাফত লাভ করেন।
তার নেতৃত্বে অনেক গুরুত্বপূর্ণ রচনা ও গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে, যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো ‘দাফউল ইলতিবাস’, ‘মাশায়েখে চাটগাম’, ‘আন-নাফহাতুল আহমাদিয়্যাহ ফিল খুতুবাতিল মিম্বারিয়্যাহ’, ‘তাজকদের নুর’, ‘তাসকিনুল খাওয়াতির’, ‘শেয়ার বাজারের নজরিয়া’, এবং বিভিন্ন আরবি ও বাংলায় লেখা মাসআলা সংকলন। তিনি ইসলামী সংস্কৃতি ও জ্ঞান বিস্তারে অবদান রেখে গেছেন।
শায়খুল হাদিস আল্লামা মুফতি আহমদুল্লাহর মৃত্যুতে ইসলাম ও আলেম সমাজ গভীর শোক প্রকাশ করছে, এবং তার বিদায় উপলক্ষে তার পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানাচ্ছে। তার উত্তরসুরী ও ছাত্ররা আজীবন তার কর্ম ও আদর্শে অনুপ্রাণিত থাকবেন বলে সকলের বিশ্বাস।