দেশের কিংবদন্তি লালন সংগীতশিল্পী ফরিদা পারভীনকে রবিবার ১৪ সেপ্টেম্বর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে সর্বস্তরের মানুষ গভীর শ্রদ্ধায় শেষ শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। তার মৃত্যুতে দেশজুড়ে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। শনিবার রাতে (১৩ সেপ্টেম্বর) সোয়া ১০টার দিকে কিডনি ও ডায়াবেটিসের নানা শারীরিক জটিলতায় ভুগছিলেন তিনি, এই কিংবদন্তি শিল্পী মারা যান।
শীতল বৃষ্টির কারণে কিছুটা বিলম্বে বিকেল ১২টার পর তার মরদেহ শহীদ মিনারে রাখা হয়, যেখানে অসংখ্য মানুষের উপস্থিতিতে তার জন্য শেষ শ্রদ্ধা জানান। এই সূর্যসন্তানের জন্য কান্নায় ভারী পুরো এলাকা। যারা তার অমোঘ গানে মুগ্ধ হয়ে থাকতেন, তারা এ মুহূর্তে শোকের তাড়নায় যেন কেঁদে ফেলেছেন।
শ্রদ্ধা নিবেদন করতে আসা গীতিকার ও নজরুল ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক লতিফুল ইসলাম শিবলী বলেন, ফরিদা পারভীন শুধু একজন শিল্পী নন, তিনি এক ধরনের মহৎ ব্যক্তিত্ব। বিশেষ করে লালনগীতি তার জীবনে যে অমূল্য অবদান রেখেছেন, তা চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে। তিনি বলেন, তার গানের আবেদন-প্রাণে ভর করে কান্না পেয়ে যায় সবাই। তার মৃত্যু বাংলাদেশ সংগীত জগতে এক গভীর ক্ষতি। তিনি আরও বলেন, এমন একজন শিল্পী পাওয়া যাবে না আরও কয়েক দশক। আমরা আল্লাহর কাছে তার আত্মার জন্য মাগফিরাত কামনা করি।
নির্মাতা কামার আহমেদ সাইমন বলেছিলেন, গান-বাজনায় যেখানে রিয়েল সাধনা প্রয়োজন, সেখানে একজনের জন্য হাঁটাসাঁটাই পাথর হয়ে যায়। ফরিদা পারভীনের মতো অসাধারণ শিল্পী চলে যাওয়া মানে শুধু একজন মানুষ না, একটা সময়ের সঙ্গীতের অবসান। এটা কাওকে পুণরায় পাওয়া যাবে না।
কণ্ঠশিল্পী বিউটি বলেন, ফরিদা পারভীন ম্যাম আমাদের ছেড়ে চলে গেছেন, আল্লাহ তা’আলার কাছে প্রার্থনা করি যেন জান্নাতের উচ্চতর স্থান দেন। তার না থাকা আমাদের জন্য অপূরণীয় ক্ষতি। লালন সংগীতের তার ভক্তরা গভীর মনে বুঝতে পারছেন, তার মতো শিল্পী আর কেউ আসবে না।
সব শ্রোতা ও ভক্তদের উপস্থিতিতে শহীদ মিনারে তার শেষ শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদে বাদ জোহর তার নামাজে জানাজা সম্পন্ন হয়। এরপর তার মরদেহ কুষ্টিয়ায় নেওয়া হয়, সেখানে একটি দ্বিতীয় জানাজা হবে, এবং বাদে দফা দাফন সম্পন্ন হবে কুষ্টিয়া পৌর কবরস্থানে।
ফরিদা পারভীন বেশ কিছু দিন ধরে শারীরিক অসুস্থতায় ভুগছিলেন, তাকে কিডনি সমস্যা, ডায়াবেটিসসহ নানা জটিলতা মোকাবিলা করতে হয়েছিল। তার সপ্তাহে দুদিন করে কিডনি ডায়ালাইসিস চলত, তবে মাঝে মধ্যে তার অবস্থা আরও খারাপ হচ্ছিল। চলতি বছরে তিনবার হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা করিয়েছিলেন তিনি।
আজকের খবর / বিএস