ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা অঞ্চলে চলমান মানবিক সংকটের বিরুদ্ধে স্পেন জোরালোভাবে চাপ বাড়াচ্ছে। স্পেনের প্রধানমন্ত্রী পেদ্রো সানচেজ ইসরায়েলের বিরুদ্ধে কঠোর নেতৃত্ব দিয়েছেন, যেখানে তিনি জানিয়েছেন, বর্বরতা বন্ধ না হওয়া পর্যন্ত ইসরায়েলকে বৈশ্বিক খেলার প্রতিযোগিতা থেকে নিষিদ্ধ করার দাবি তুলেছেন। তিনি এই পদক্ষেপকে মানবাধিকার রক্ষার এক গুরুত্বপূর্ণ অংশ হিসেবে দেখছেন।
একই সঙ্গে স্পেন অর্থনৈতিকভাবে ইসরায়েলের সাথে একটি প্রায় এক বিলিয়ন ইউরোর অস্ত্রচুক্তি বাতিল করেছে। এ তথ্যটি সোমবার (১৬ সেপ্টেম্বর) সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরা প্রকাশ করেছে। সূত্রের মতে, ইসরায়েলের সাথে এই চুক্তি ছিল রকেট লঞ্চার ও অন্যান্য যুদ্ধসরঞ্জামে। তবে স্পেনের সরকার এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে চুক্তি বাতিলের বিষয়ে কিছু ঘোষণা করেনি এবং ইসরায়েলি সংস্থাগুলিও এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেনি।
প্রধানমন্ত্রী সানচেজ আন্তর্জাতিক ক্রীড়া সংস্থাগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, যেমন ২০২২ সালে রাশিয়াকে ইউক্রেন আক্রমণের পর বৈশ্বিক ক্রীড়া থেকে বাদ দেয়া হয়, ইসরায়েলকেও একই ধরতিতে শাস্তি দেয়া উচিত। তিনি বলেছিলেন, গাজায় চলমান হামলা ও বর্বরতা চলতে থাকলে, ইসরায়েল বৈশ্বিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতা থেকে বিরত থাকবে।
তার ভাষণে তিনি প্রশ্ন তোলেন, কেন ইউক্রেন আক্রমণের পর রাশিয়াকে বহিষ্কার করা হয়েছে, আর গাজায় আক্রমণের কারণে কেন ইসরায়েলকে নয়? সানচেজের এই বক্তব্যের এক দিন আগে, মাদ্রিদে ইসরায়েলি দলের অংশগ্রহণের প্রতিবাদে ফিলিস্তিনপন্থি বিক্ষোভকারীরা রাস্তা অবরোধ করেন, যার ফলে পুলিশ সংঘর্ষে ২২ জন আহত ও দুইজনকে আটক করে।
এই পরিস্থিতিতে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক সমালোচনা আরও জোরদার হয়েছে। কিছু রাজনৈতিক ব্যক্তি ও মানবাধিকার সংস্থা অভিযোগ করেছেন, ইসরায়েল তথাকথিত ‘ইহুদিবিদ্বেষ’ অভিযোগকে ব্যবহার করে ফিলিস্তিনবিরোধী নীতিগুলো দমন করে রাখছে। গত বছর আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (আইসিসি) ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করার পর, নেতানিয়াহু ওই আদালতকে ‘ইহুদিবিদ্বেষী’ বলে আখ্যায়িত করেছিলেন।
অপারেশন ও সামরিক খাতে স্পেন আরও দূরবর্তী হয়েছে। বার্তাসংস্থা এএফপির খবর অনুযায়ী, স্পেন এক প্রায় ৭০০ মিলিয়ন ইউরোর (বর্তমানে প্রায় ৮২৪ মিলিয়ন ডলার) অস্ত্রচুক্তি বাতিল করেছে। এই চুক্তি ছিল ইসরায়েলের ভ্যাক্সেল ফার্মের গুলি চালানোর জন্য রকেট লঞ্চার কেনার। উল্লেখ্য, চুক্তিটি ২০২৩ সালের অক্টোবরেই স্বাক্ষরিত হয়। কিন্তু বর্তমানে, স্পেন ও ইসরায়েল কোন পক্ষই আনুষ্ঠানিকভাবে এ বিষয়ে মন্তব্য করেনি।
বিশ্লেষকরা বলছেন, তবে এইসব পদক্ষেপে দু’ দেশের সম্পর্কের অন্তঃকলহ দেখা যেতে পারে। তবে স্পেনের এই কঠোরতার মাধ্যমে তারা মানবাধিকার রক্ষা ও শান্তির খাতিরে মঞ্চে দৃঢ়প্রতিজ্ঞতা প্রকাশ করেছে।