গোয়ালন্দের কোটালীপাড়া উপজেলায় এবার দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হচ্ছে ৩০৯টি মণ্ডপে, যেখানে আনসার সদস্য নিয়োগ দেওয়া হয়েছে ৩২১টি মণ্ডপে। উপজেলার ১টি পৌরসভা ও ১১টি ইউনিয়নের মিলিয়ে এ বছর মোট ৩০৯টি মণ্ডপে উৎসবমুখর পরিবেশে শারদীয় দুর্গাপূজা পালিত হচ্ছে। তবে এবার কিছু মণ্ডপে দুর্গাপূজা হচ্ছেনা; বিশেষ করে ১২টি মণ্ডপে এই পূজা অনুষ্ঠিত হচ্ছে না। সরেজমিনে দেখা গেছে যে, পুজা মণ্ডপের পুজা কমিটির সভাপতি ও সম্পাদকরা জানিয়েছেন, কিছু মণ্ডিতে চৈত্র মাসে বাসন্তী পূজা হবে, আবার কিছু মণ্ডিপ্রাঙ্গণে নানা সমস্যার কারণে এই বছর পূজা বন্ধ রেখেছেন তাদের সদস্যরা।
আনসার ও ভিডিপি কর্মকর্তাদের দাবি অনুযায়ী, মোট ৩২১টি মণ্ডপের জন্য নিরাপত্তার দিক বিবেচনায় আনসার নিযুক্ত করা হয়েছে। তবে প্রশ্ন উঠছে, বাকি ১২টি মণ্ডপে আনসার কোথায়? এ নিয়ে পুজা কমিটির সদস্যদের মধ্যে নানা মতবাদ ও সমালোচনা দেখা দিতে শুরু করেছে। তারা বলছেন, কিছু মণ্ডিতে ৬ জনতেও কম আর কোথাও কোথাও ৪-৫ জন করে আনসার ডিউটি করছে। সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, বেশ কিছু মণ্ডপে আনসার সদস্যের উপস্থিতি নেই বা খুবই কম।
উপজেলার বিভিন্ন মণ্ডপের মধ্যে রয়েছে পৌরসভার বাগান উত্তরপাড়া অলিল সেন স্মৃতি সার্বজনীন দুর্গা মন্দির, রামশীল ইউনিয়নের মুশুরিয়া গুরুদাস মার্কেট সার্বজনীন দুর্গা মন্দির, কলাবাড়ী ইউনিয়নের মাছপাড়া নগেন বিশ্বাসের বাড়ি সার্বজনীন দুর্গা মন্দির, বৈকুণ্টপুর খাইটার কাণ্ডি, নলুয়া ১১৭ নম্বর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, কুমুরিয়া দিলিপ বিশ্বাসের বাড়ি, নলুয়া বিশ্ব শান্তি সেবা আশ্রম, মধু বাড়ি, রুথিয়ারপাড় রায় বাড়ী, মাছপাড়া ভূপেশ বিশ্বাসের বাড়ি, পুর্ব বাঁধা বাড়ী ঠাকুরবাড়ী, শৈলদহ সরকারভবন ও মধুবাড়ী—all these places have been identified as sites where পূজা হচ্ছে না।
স্থানীয় পুজা কমিটির নেতারা জানিয়েছেন, কিছু মণ্ডপের পুজা এখনো অনুষ্ঠিত হয়নি। পরিতোষ মধু, মধুবাড়ীর সভাপতি ও ইউপি সদস্য, বলেন, ‘আমাদের মণ্ডপে এখন পুজা হচ্ছে না, চৈত্র মাসে বাসন্তী পূজা হবে। এখানে কোনো আনসারও নেই।’
অন্য এক পুজামণ্ডপের সভাপতি গুরুদাস মিস্ত্রি জানান, ‘এখন এখানে কোন পুজা হয় না, নিরাপত্তার জন্য কোনও আনসার নিযুক্ত হয়নি।’ একইভাবে, নলুয়া ১১৭ নম্বর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বিদ্যুৎ কান্তি মজুমদার ও অন্য পুজা কমিটির নেতারা জানাচ্ছেন, তাঁদের মণ্ডপে পুজা হচ্ছে না এবং নিরাপত্তার জন্য কোনো আনসার দরকারও নেই।
সরেজমিনে দেখা গেছে, কিছু স্থানীয় পুজা কমিটির নেতারা বলছেন, কিছু আনসার সদস্য তাদের নিজস্ব স্বার্থের জন্য ভুল তথ্য দিচ্ছেন, যাতে তারা বেশি টাকা নেয়ার সুযোগ পান। নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক আনসার সদস্য বলেন, ‘প্রতি বছর যেসব মণ্ডিতে পুজা হয় না, সেসব স্থানেও আনসার নিয়োগের ভুয়া কাগজপত্র তৈরি করে লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নেওয়া হয়।’ এই বিষয়ে উপজেলা আনসার ভিডিপির কর্মকর্তা রুশান খান বলেন, ‘আমরা পিআইও অফিস ও থানার কাছ থেকে তালিকা সংগ্রহ করে ৩২১টি মণ্ডপের জন্য আনসার নিয়োগের সেটি নিশ্চিত করেছি।’
অন্যদিকে, পুজা হচ্ছে ৩০৯টি মণ্ডপে, আর আনসার নিয়োগ দেওয়া হয়েছে ৩২১টি—এ ব্যাপারে প্রশ্ন উঠলে এ সম্পর্কিত কোনও স্পষ্ট উত্তর দিতে পারেননি উপজেলা আনসার ভিডিপি কর্মকর্তা। উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ মাসুম বিল্লাহ আরও জানিয়েছেন, প্রথমে ৩২১টি মণ্ডপে পূজা হবে বলে জানানো হয়েছিল, পরে আরও ৫টি নতুন মণ্ডপে পূজা হওয়ার তালিকা পাওয়া গেছে। মূল লক্ষ্য হলো, আইন-শৃঙ্খলা বজায় রাখতে এবং পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে সাময়িকভাবে কেবল কয়েকজনকে মনোনীত করে সম্পূর্ণ পরিস্থিতি অনুসরণ করা হবে। পূজা সাড়ম্বরে না হলেও, কোনও অপ্রতুলতা বা অপ্রীতিকর পরিস্থিতি সৃষ্টি হলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে নিশ্চিত করেছেন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।

