পাকিস্তানের হামলায় তিন তরুণ ক্রিকেটারসহ মোট আটজন আফগান নাগরিকের নিহতের ঘটনায় তীব্র মানবিক ও জাতিসংঘের জন্য গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে আফগানিস্তান ক্রিকেট বোর্ড (এসিবি)। এই ঘটনার প্রতিবাদে তারা আগামী নভেম্বরের মধ্যে হওয়ার 예정 থাকা ত্রিদেশীয় টি-টোয়েন্টি সিরিজে অংশগ্রহণের ঘোষণা প্রত্যাহার করে নেয়ার সিদ্ধান্ত জানিয়েছেন। এই সিরিজটি পাকিস্তান ও শ্রীলংকার যৌথ উদ্যোগে অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল।
প্রতিবেদনে জানা গেছে, শুক্রবার (১৭ অক্টোবর) রাতে আফগানিস্তানের পাকতিকা প্রদেশের উরগুন জেলায় পাকিস্তান আকাশপথে হামলা চালানো হয়েছে বলে অভিযোগ করে আফগান কর্তৃপক্ষ। এই হামলায় নিহত তিন ক্রিকেটারের পরিচয় ও ছবি প্রকাশ করেছেন এসিবি, তারা হলেন—কবীর, শিবঘাতুল্লা এবং হারুন। এর সঙ্গে আরও পাঁচজন সাধারণ নাগরিক ও সাতজন আহত হয়েছেন বলে জানা গেছে।
এসিবির বিবৃতিতে বলা হয়, নিহত ক্রিকেটাররা একটি বন্ধুত্বপূর্ণ ম্যাচ শেষে শারানা থেকে উরগুনে ফিরছিলেন। ঠিক সেই মুহূর্তে তাদের লক্ষ্য করে পরিকল্পিতভাবে হামলা চালানো হয়। এই বর্বরোচিত ঘটনা আফগানিস্তানের ক্রীড়াজগতে অপূরণীয় ক্ষতি হিসেবে বিবেচিত হয়েছে। এসিবি নিহতদের পরিবারের প্রতি গভীর শোক ও সমবেদনা জানিয়ে, পাকিস্তানের প্রতি চলমান বিদ্বেষ ও অগ্রহণযোগ্য এই হামলার নিন্দা প্রকাশ করেছে।
উল্লেখ্য, গত এক সপ্তাহ ধরে পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের মধ্যে সীমান্ত সংঘাত চলছে। বুধবার দুই দেশ ৪৮ ঘণ্টার জন্য সংঘর্ষ বিরতিতে যায়, যদিও সেই সময়ের মধ্যে সংঘর্ষের অবসান হয়নি। এরপরই, রাতে পাকিস্তানের আকাশপথে হামলার অভিযোগ উঠে, যা আফগান কর্তৃপক্ষের ভাষ্য অনুযায়ী দেশটির নিরাপত্তা ও সার্বভৌমত্বের জন্য এক চরম হুমকি।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই ধরনের হামলা শুধু মানবীয় হতাহতই ঘটাচ্ছে না, বরং দুই দেশের মধ্যকার শত্রুতাও আরও বাড়াচ্ছে। উত্তপ্ত পরিস্থিতির মধ্যেই, আফগান ক্রিকেট বোর্ডের সিদ্ধান্তে বোঝা যায় যে, তারা যে কোনও ধরনের অস্থিতিশীল পরিবেশে নিজেদের অংশগ্রহণে প্রস্তুত নয়।
এদিকে, ত্রিদেশীয় সিরিজে অংশগ্রহণ না করার সিদ্ধান্তে মানসিক সাহস ও ঐক্য দেখিয়েছেন বর্তমান সময়ের অন্যতম সুপারষ্টার রশিদ খান। সোশ্যাল মিডিয়ায় তিনি পাকিস্তানের হামলার নিন্দা জানিয়ে, বলেছেন—‘আফগানিস্তানের নাগরিকদের এই বর্বরোচিত হত্যাকাণ্ডের আমি গভীর শোকাহত। এই হামলায় বহু নারী, শিশু ও তরুণ ক্রিকেটার প্রাণ হারিয়েছেন, যারা একদিন তাদের স্বপ্ন অনেক বড় ছিল। এই ধরনের হামলা মানবাধিকার লঙ্ঘন এবং অমানবিক, যা কোনওভাবে মেনে নেওয়া যায় না। এর বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নেওয়া জরুরি।’
রশিদ আরও যোগ করেন, ‘দেশের মর্যাদা সবকিছুর ওপরে। আমি অঙ্গীকার করি, এই কঠিন সময়ে আমি আমার দেশের পক্ষে আছি। তাঁদের পাশে দাঁড়াচ্ছি যারা এই ক্ষতি ঠেকানোর জন্য যুদ্ধ করছে।’ তিনি বলেন, ‘আমাদের উচিত একসঙ্গে মিলেমিশে এই দুর্যোগের মোকাবিলা করা এবং শান্তির পথে এগিয়ে যাওয়া।’
উল্লেখ্য, পাকিস্তান ও আফগানিস্তান মধ্যকার সীমান্তের উত্তেজনা বেড়েই চলেছে। সংকটের মাঝে দুই দেশের মধ্যে ৪৮ ঘণ্টার সংঘর্ষ বিরতি শেষে আবারও উত্তেজনা দেখা দেয়। পাকিস্তানের এই হামলার ঘটনার পর পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে উঠেছে। এখন অপেক্ষা শুধু পরিস্থিতি শান্ত হওয়ার এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সক্রিয় উদ্যোগের।