এখনই প্রতিশোধের কথা বলাটা হয়তো একটু বেশি মনে হতে পারে, তবে চলমান মৌসুমে শিরোপাহীনতা ও গত মৌসুমের চারটি এল ক্লাসিকোতে হারের ক্ষত কিছুটা কমিয়ে দিয়েছে রিয়াল মাদ্রিদ। মৌসুমের প্রথম এই চরম প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ ম্যাচে তারা জমজমাট ও উত্তেজনাপূর্ণ লড়াইয়ে বার্সেলোনাকে ২-১ ব্যবধানে হারানোর গৌরব স্বীকার করেছে। যদি কিলিয়ান এমবাপে’র পেনাল্টি মিস ও অফসাইডের কারণে দুটি গোল বাতিল না হতো, তাহলে জয়দ্যোত আরও বেশি হতে পারত। আসল উত্তেজনা শুরু হয় সান্তিয়াগো বার্নাব্যুতে রোববারের ম্যাচের আগে, যখন রিয়ালের বিরুদ্ধে লামিনে ইয়ামালের বিরুদ্ধে আখ্যায়া দেওয়া ‘চোর’ ও ‘ছিঁচকাঁদুনে’ মন্তব্যের কারণে উত্তপ্ত পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছিল। এর জবাব দেয় মাঠের খেলোয়াড়রা, যেখানে ফুটে ওঠে জাবি আলোনসোর দলের চরম প্রতিদ্বন্দ্বিতার দক্ষতা। এ ম্যাচের ফলাফল নির্ধারণী ২-১ ব্যবধানটি প্রথমার্ধেই প্রবলভাবে প্রতিষ্ঠিত হয়। রিয়ালের পক্ষে এক গোল করেন কিলিয়ান এমবাপে, অন্য গোলটি করেন জুড বেলিংহ্যাম, আর বার্সার হয়ে এক গোল করে ব্যবধান কমান ফারমিন লোপেজ। শেষ সময়ে বার্সেলোনার মিডফিল্ডার পেদ্রি দ্বিতীয় হলুদ কার্ড দেখে মাঠের বাহির হন, যার ফলে ম্যাচের উত্তেজনা হাতাহাতি পর্যন্ত গড়ায়।
ম্যাচের আগে বার্সেলোনার জন্য বেশ কিছু ক্ষতি ছিল। চোটের কারণে রাফিনিয়া, লেভান্ডফস্কি, গাভি না থাকায় কোচ হ্যান্সি ফ্লিকও তার ডাগআউটে ছিলেন না নিষেধাজ্ঞার কারণে। তবে এর কোন প্রতিকুলতা তাদের মনোবল কমাতে পারেনি। অন্যদিকে, রিয়ালের ক্ষত ছিল গত মৌসুমে চারবারের পরাজয়ের ক্ষত, যার ফলে তাদের গোলের পরিমাণ ছিল ১৬। এই প্রথম এল ক্লাসিকোয় মৌসুমের শুরুতেই সেই ক্ষত কিছুটা মিটে যায়।
দর্শকরা লক্ষ্য করেছেন, যদিও বার্সার আধিপত্য ছিল বলের মালিকানায় (প্রায় ৬৩%), শটের দিক থেকে এগিয়ে ছিল রিয়াল। তাদের ১৫ শটের মধ্যে ৫টি ছিল লক্ষ্যভেদ করে, আর বার্সার ২২ শটের মধ্যে ৯টি লক্ষ্যভেদ করে। তবে, রিয়ালের রক্ষণভাগ ইয়ামাল ও রাশফোর্ডদের জন্য শট নেওয়ার সুযোগ তৈরি করেনি।
দ্বিতীয় মিনিটেই রিয়াল পেয়ে যায় পেনাল্টি, যেখানে ভিএআর দেখানোর পরে সিদ্ধান্ত বদলে যায়, কারণ ইয়ামাল ব্রাজিলিয়ান তারকাকে ভুলভাবে ফাউল করেননি। নবম মিনিটে ইয়ামাল প্রথম শট নেন, কিন্তু সেটা জালে জড়িয়ে যায়নি। দুই মিনিটের মধ্যে এমবাপে গোল করেন, তবে অফসাইডের কারণে বাতিল হয়। এরপরের মিনিটে, এমবাপে আবারও আক্রমণে এগোলে, গার্ডিয়ান ভয়চেক সিজনি তাকে বাধা দেয়। তবে বেশির ভাগ সময় বার্সেলোনা আধিপত্য বজায় রাখে, যেখানে মাঝমাঠের জুড বেলিংহ্যামের অসাধারণ পাস ও এমবাপে’র প্রচেষ্টা বেশ কিছু সুযোগ সৃষ্টি করে।
তবে, খেলার ৩৩ মিনিটে ফেররানের দুর্বল শট ও ভিয়চে দ্য কোর্তোয়া থেকে রক্ষণের কারণে গোল হয় না। এরপর ৩৬ মিনিটে আনসু ফাতির মাধ্যমে বার্সেলোনা আঘাত হানে, গোল করে সমতা আনে। কিছুক্ষণ পরে, পেদ্রির সেট-পিস থেকে বল নিয়ে রাশফোর্ড জালে ঢুকলে প্রথমবারের মত এগিয়ে যায় রিয়াল। এরপর ৪৩ মিনিটে বেলিংহ্যাম আরও এক গোল করেন এবং বিরতিতে ২-১ ব্যবধানে এগিয়ে যায় স্বাগতিকরা।
দ্বিতীয়ার্ধের শুরু থেকে উভয় দল আক্রমণে মরিয়া হন। রিয়াল ৬৮ মিনিটে আবার গোল করার সুযোগ পেলেও, অফসাইডের জন্য বাতিল হয়। ম্যাচের শেষ সময়ের শক্ত মানসিকতা ও বদলি খেলোয়াড়দের পরিবর্তনে বেশ কিছু সুযোগ তৈরি হলেও, কেউই গোল করত পারেনি। ফলে, অর্থাৎ এই ফলাফলে রিয়াল জয় লাভ করে লা লিগার শীর্ষে অবস্থান ধরে রাখে, যেখানে তাদের ১০ ম্যাচে পয়েন্ট ২৭। আর বার্সেলোনা লিগ তালিকার দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে, তাদের পয়েন্ট ২২।

