যুক্তরাজ্যভিত্তিক মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল সম্প্রতি মন্তব্য করেছে যে, ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানকে গতকাল আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল যে মৃত্যুদণ্ডের রায় দিয়েছে, তা একেবারেই সুষ্ঠু ও ন্যায়সংগত নয়। তাদের অভিযোগ, জুলাই গণআবির্ভাবের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের জন্য দায়ী ব্যক্তিদের বিচারে নানা সমস্যার কারণে এই রায় গণতান্ত্রিক মানদণ্ডে সঠিক ন্যায়ের পরিপন্থী। অ্যামনেস্টির মহাসচিব অ্যাগনেস কালামার্ড বলেছেন, “২০১৯-২০২০ সালে ছাত্রনেতাদের নেতৃত্বে আন্দোলনের সময় যে গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘন ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত হয়েছে, তার জন্য দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচারের প্রয়োজন। কিন্তু এখনকার বিচার প্রক্রিয়া ওই معیار পূরণ করেনি। ভুক্তভোগীদের ন্যায্য বিচার ও জবাবদিহির প্রয়োজন রয়েছে।” তিনি আরও উল্লেখ করেন, “মৃত্যুদণ্ড মানবাধিকার লঙ্ঘনের আরও একটি কঠিন ধাপ, যা অমানবিক ও অপমানজনক। কোনো ন্যায্য আদালতের ক্ষেত্রে এর স্থান নেই।” 2024 সালের জুলাই থেকে আগস্টের মধ্যে জনমনে ব্যাপক গণঅভ্যুত্থান ও প্রতিবাদের কারণে প্রায় ১ হাজার ৪০০ জন নিহত ও হাজার হাজার মানুষ আহত হন। অ্যামনেস্টির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আহত ও নিহতের পরিবারদের ন্যায্য বিচার পেতে হলে স্বাধীন ও নিরপেক্ষ বিচার ব্যবস্থা অপরিহার্য, যেখানে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার মানদণ্ড বজায় থাকবে। কিন্তু বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের বিচার-প্রক্রিয়া দীর্ঘদিন থেকেই এ বিষয়ে সমালোচনার মুখে রয়েছে। বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়, এই রায় ছাত্রনেতাদের অনুপস্থিতিতে খুব দ্রুত চালানো হয়েছে, যা বিচার প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা ও ন্যায্যতা প্রশ্নবিদ্ধ করে। মামলাকারীদের প্রতিনিধিত্ব করলেও, বিবাদীদের জন্য খুবই অল্প সময় দেওয়া হয়েছে ও প্রমাণের ক্রস-এক্সামিনেশন নিষিদ্ধ করা হয়েছে বলেও অভিযোগ উঠেছে। অ্যামনেস্টি বলেছে যে, বাংলাদেশের বিচারব্যবস্থা এখনো সম্পূর্ণ নিরপেক্ষ নয়, ফলে এই ধরনের মৃত্যুদণ্ডের রায় ন্যায়বিচারের জন্য উপযুক্ত নয়। সংস্থার মতে, ভবিষ্যতেও বাংলাদেশে ন্যায্য ও স্বচ্ছ বিচারব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করতে হবে, যাতে মানবাধিকার লঙ্ঘন কমে আসে ও বিচার প্রক্রিয়া আরও স্বচ্ছতা ও ফলে অনেক বেশি গুরুত্ব পায়। শেষ দিকে, অ্যামনেস্টি পরিষ্কারে জানিয়েছে, তারা কখনোই মৃত্যুদণ্ডকে সমর্থন করে না, কারণ এর কোনো পরিস্থিতি, অপরাধের ধরণ বা ব্যক্তিগত দোষ-নির্দোষের ভিত্তিতে এই শাস্তি গ্রহণযোগ্য নয়।

