বাংলাদেশের সবুজ প্রযুক্তি, পাট, বস্ত্র ও ওষুধশিল্পে বড় পরিমাণে বিনিয়োগের পরিকল্পনা করছে চীনা বিনিয়োগকারীরা। এটি প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের রূপান্তর পরিকল্পনার অংশ, যা দেশের অর্থনৈতিক ও শিল্পবিস্তারকে আরও উন্নত করার লক্ষ্য নিয়ে এসেছে।
৩০ নভেম্বর বৃহস্পতির দিন রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় অনুষ্ঠিত এই বৈঠকে চীনের এক্সপোর্ট-ইমপোর্ট ব্যাংক অব চায়নার (এক্সিম ব্যাংক) ভাইস প্রেসিডেন্ট ইয়াং দোংনিং এ আগ্রহের কথা ব্যক্ত করেন। তিনি আরও জানান, চীন দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশের অবকাঠামো উন্নয়নে বিনিয়োগ করে আসছে, তবে এখন তারা উৎপাদন খাতের ব্যাপক সম্ভাবনায় মনোযোগী। এর মধ্যে রয়েছে রুফটপ সোলার প্যানেল ও দেশের ঐতিহ্যবাহী পাট শিল্পকে কেন্দ্র করে জ্বালানি, বায়োএনার্জি ও প্লাস্টিকের বিকল্প তৈরি প্রকল্প। এসব প্রকল্পে সরাসরি বিনিয়োগের পাশাপাশি চীনা প্রতিষ্ঠানগুলো অর্থায়নে আগ্রহী।
চীনের একজন বিশেষজ্ঞ ড. মা জুন বলেন, চীনারা ঐতিহ্যবাহী পাটশিল্পকে খুবই আকর্ষণীয় মনে করেন ও স্থানীয় উদ্যোক্তাদের সঙ্গে যৌথভাবে কাজ করতে ইচ্ছুক। চীনা প্রতিষ্ঠানগুলো সবুজ জ্বালানি, সার ও প্লাস্টিকের বিকল্পের জন্য বছরে প্রায় ১০ লাখ টন পাট ব্যবহার করতে প্রস্তুত। ফলে, চীনা বিনিয়োগে পাটবিত্তক যৌথ উদ্যোগের বড় সম্ভাবনা রয়েছে।
প্রধান উপদেষ্টা এই চীনের আগ্রহকে স্বাগত জানান এবং বলেন, ব্যাংকগুলো চাইলে বাংলাদেশকে উৎপাদনশীল পণ্য রপ্তানির কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তুলতে পারে—যা দেশে এবং চীনসহ উন্নত দেশে রপ্তানি বাড়াবে। তিনি ওষুধ ও স্বাস্থ্যসেবাকেও চীনা বিনিয়োগের গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্র হিসেবে উল্লিখিত করেন।
ড. ইউনূস আরও বলেন, চীন বিশ্বের সর্ববৃহৎ সৌরশক্তি উৎপাদনকারী দেশ হিসেবে বাংলাদেশের সবুজ জ্বালানি খাতে উল্লেখযোগ্য সহায়তা দিতে পারে। তিনি বাংলাদেশের উৎপাদন কারখানা স্থানান্তর ও উন্নয়নে চীনা প্রতিষ্ঠানগুলোকে উৎসাহিত করেন, কারণ দেশের তরুণ শ্রমশক্তি ও বন্ধ থাকা পাটকল গুলোর যৌথ ব্যবহারে বড় সুযোগ রয়েছে। তিনি দ্রুত এই উদ্যোগগুলো বাস্তবায়নের ওপর জোর দেন।
ইয়াং দোংনিং বলেন, চীন উচ্চ প্রযুক্তি, এ-কমার্স সহ অন্যান্য খাতে বিনিয়োগের জন্যও আগ্রহী, যেখানে চীন ইতিমধ্যেই বৈশ্বিক নেতৃত্বে রয়েছে।
প্রধান উপদেষ্টা চীনা কোম্পানিগুলিকে বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে কারখানা স্থাপন করার আমন্ত্রণ জানিয়ে বলেন, এই অঞ্চলটির জন্য বড় সুবিধা রয়েছে—সর্ববৃহৎ সমুদ্রবন্দর, এবং মিয়ানমার-থাইল্যান্ডসহ দক্ষিণ-প্রাচ্যের বাজারের নিকটতা।
তিনি আরও বলেন, এই অঞ্চলের সমুদ্র প্রবেশাধিকার ও নৌপথের বিশাল সম্ভাবনা রয়েছে। চীনা শিল্পগোষ্ঠী এই এলাকায় কারখানা স্থানান্তর করলে পণ্য উৎপাদন ও রপ্তানি আরও সহজ হবে। দক্ষিণ চীন থেকে রেলসংযোগ বাড়ানোর মাধ্যমে আঞ্চলিক সংযোগ উন্নত ও সহজতর হবে।
বৈঠকের শুরুতে প্রখ্যাত উপদেষ্টা হংকংয়ের একটি ভবনে অগ্নিকাণ্ডে বহু মানুষের মৃত্যুবরণে গভীর শোক প্রকাশ করেন, এবং সকলের পুর্ণ শান্তির জন্য প্রার্থনা করেন। বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের এসডিজি বিষয়ক মুখ্য সমন্বয়ক ও সিনিয়র সচিব লামিয়া মোরশেদ এবং ঢাকায় নিযুক্ত চীনের রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন।

