ইরানের খ্যাতিমান চলচ্চিত্র নির্মাতা জাফর পানাহিকে রাজনৈতিক উপদ্রব ও প্রতিরোধমূলক কর্মকাণ্ডের জন্য কারাদণ্ডের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তিনি তার পরিচালিত ‘ইট ওয়াজ জাস্ট অ্যান অ্যাক্সিডেন্ট’ চলচ্চিত্রের জন্য যখন নিউইয়র্কে অনুষ্ঠিত ৩৫তম গোথাম ফিল্ম অ্যাওয়ার্ডে তিনটি পুরস্কার লাভ করেছিলেন, ঠিক তখনই এই বিতর্কিত রায়ের ঘোষণা ঘটে।
সোমবার (১ ডিসেম্বর) জাফর পানাহির আইনজীবী মুস্তাফা আলি সামাজিক মাধ্যমে এক্স-এ জানিয়েছেন, তেহরানের ইসলামী বিপ্লবী আদালত এই স্বর্ণপামজয়ী শিল্পীর এক বছরের কারাদণ্ড এবং দুই বছরের ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা বহাল করেছে। পাশাপাশি তার রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠনে যুক্ত থাকার বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে, যার জন্য তার সদস্যপদ বাতিল করা হয়েছে। আইনজীবী বলছেন, এই রায়ের বিরুদ্ধে তিনি প্রয়োজনীয় আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।
প্রামাণ্য হিসেবে উল্লেখ্য, এই ছবি ‘ইট ওয়াজ জাস্ট অ্যান অ্যাক্সিডেন্ট’ গথাম ফিল্ম অ্যাওয়ার্ডে সেরা পরিচালক, সেরা মৌলিক চিত্রনাট্য এবং সেরা আন্তর্জাতিক পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র হিসেবে তিনটি বিভাগে পুরস্কার জিতেছে। এই পুরস্কারসমূহ নিউইয়র্কের সিপরিয়ানি ওয়াল স্ট্রিটে খুব গোপনে গ্রহণ করেন জাফর পানাহি। ছবিটি তিনি ইরান থাকাকালে গোপনে নির্মাণ করেন, যা তার বয়স ৬৫ বলে জানা গেছে।
জাফর পানাহি এর আগে দুবার ইরানে কারাবাস করেছেন। সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে তিনি জানান, দেশে ফেরার পরিকল্পনা তার রয়েছে। এর পাশাপাশি, লস অ্যাঞ্জেলেসে ফাইন্যান্সিয়াল টাইমসের সাথে এক সাক্ষাৎকারে তিনি এক প্রবীণ ইরানি নির্বাসিত ব্যক্তির কথাও উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, ‘একজন মহিলার আবেদন করতে বলতে বলেছিল, আমি যেন দেশে ফিরে আসি না। আমি উত্তর দিয়েছি, আমি ইরানের বাইরে থাকতে পারবো না। যেখানে থাকি না কেন, আমি সেখানে খাপ খাইয়ে নিতে পারছি না। তদ্ব্যতীত, আমি জানি, ইরান সরকার আমার সাথে যা করবে, তারা আগে থেকেই এড়িয়ে যায়নি।’
ইরানের বিখ্যাত চলচ্চিত্র নির্মাতাদের মধ্যে জাফর পানাহি অন্যতম। কিন্তু নানা সরকারি নিষেধাজ্ঞা ও প্রতিবন্ধকতার মুখে তিনি বাধা পেয়েছেন। এর মধ্যে রয়েছে দেশের বাইরে নির্মাণের স্বীকৃতি ও ভ্রমণের অস্থিরতা।
গথাম ফিল্ম অ্যাওয়ার্ডে ভাষণে তিনি এই নতুন শাস্তির ব্যাপারে কিছু বলেননি, বরং তিনি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন তাদের প্রতি যারা স্বেচ্ছায়, কখনও কখনও নিজের জীবন ঝুঁকি.asset করে, সত্য ও মানবতার জন্য চলচ্চিত্র নির্মাণ চালিয়ে যাচ্ছেন। তিনি বলেন, ‘আশা করি, আমার এই মুক্তিসংগ্রাম ও উৎসর্গ কিছুটা হলেও ঐসব চলচ্চিত্র নির্মাতাদের জন্য যারা তাদের সৃষ্টিকে সম্পূর্ণ সমাজ থেকে বিচ্ছিন্ন থেকেও ধরে রাখতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ।’
‘ইট ওয়াজ জাস্ট অ্যান অ্যাক্সিডেন্ট’ ভবিষ্যতে গোল্ডেন গ্লোবস ও অস্কার মনোনয়ন ও বিজয়ে এগিয়ে থাকবে বলে আশা করা হচ্ছে। ছবিতে পাঁচজন সাধারণ ইরানির গল্প দেখানো হয়েছে, যারা এক ব্যক্তির মুখোমুখি হয়, যাকে তারা কারাগার নরক বলে মনে করেন।
জাফর পানাহি বিভিন্ন সাক্ষাৎকারে বলেছেন, তার সর্বশেষ কারাবাসের অভিজ্ঞতা ও বন্দিদের মুখে শোনা ইরান সরকারের সহিংসতা ও নিষ্ঠুরতার গল্প এই ছবির একাংশের উৎস। চলতি বছরের মে মাসে ফ্রান্সের কান চলচ্চিত্র উৎসবে ‘ইট ওয়াজ জাস্ট অ্যান অ্যাক্সিডেন্ট’ স্বর্ণপাম জেতার সময় তিনি সরাসরি ইরানি শাসনব্যবস্থার বিরুদ্ধে কথা বলেন।
২০২২ সালে, ইরানের দুই চলচ্চিত্র নির্মাতা গ্রেফতার হওয়ার প্রতিবাদে জাফর পানাহি কারাগারে আসেন। ছয় বছরের সাজা ঘোষণা হলেও সাত মাসের মধ্যে তিনি শর্তসাপেক্ষে মুক্তি পান। ২০১০ সালে, অভ্যুত্থান ও সরকারের বিরোধী আন্দোলনে সমর্থন ও প্রচারের জন্য তাকে ছয় বছরের জন্য সাজা দেওয়া হয়, তবে দুটি মাসের মধ্যে তিনি জামিন পান।

