আন্তর্জাতিক প্রটোকল মেনে জুলাই গণঅভ্যুত্থানে শাহাদাৎপ্রাপ্ত অজ্ঞাতপরিচয় শহীদদের মরদেহ উত্তোলনের কাজ শুরু হয়েছে। সিআইডি প্রধান অতিরিক্ত আইজিপি মো. ছিবগাত উল্লাহ এই তথ্য দিয়েছেন শনিবার (৭ ডিসেম্বর) রাজধানীর রায়েরবাজার শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধ সংলগ্ন কবরস্থান পরিদর্শন করে সাংবাদিকদের কাছে। সেখানে তিনি জানান, ওই সময়ের গোপনীয়তাকর্যক্রমের অংশ হিসেবে শহীদদের মরদেহ উত্তোলনের জন্য আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুসরণ করা হচ্ছে। এর মাধ্যমে এ বছরের জুলাই মাসের গণঅভ্যুত্থানে নিহত শহীদদের অজ্ঞাত পরিচয় কবরগুলোতে থাকা লাশগুলো শনাক্ত করা সম্ভব হবে। এই গুরুত্বপূর্ণ কাজের নেতৃত্ব দিচ্ছেন আর্জেন্টিনা থেকে আসা ফরেনসিক বিশেষজ্ঞ লুইস ফন্ডিব্রাইডার, যিনি গত ৪০ বছরে ৬৫টিরও বেশি দেশে একই ধরনের অপারেশন পরিচালনা করেছেন। তিনি বলেন, মরদেহ উত্তোলনের জন্য প্রাথমিকভাবে ১১৪টি কবর চিহ্নিত করা হয়েছে, যদিও সংখ্যা তার চাইতে বেশি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এরপর সুন্দর ও বিজ্ঞানসম্মত পদ্ধতিতে পোস্টমর্টেম, ডিএনএ নমুনা সংগ্রহ ও ডিএনএ প্রোফাইল তৈরি করা হবে। পরিচয় নিশ্চিত হলে সামাজিক ও ধর্মীয় সম্মান রক্ষার জন্য সেগুলো আবার যথাস্থানে দাফন করা হবে। ব্যক্তিগতভাবে যারা নিজস্ব স্বজনদের লাশের সন্ধানে আছেন, তাদের জন্য এই প্রক্রিয়ায় ডিএনএ নমুনা সংগ্রহের সুবিধা প্রদান করা হবে। এখন পর্যন্ত ১০ জনের স্বজন আবেদন করেছেন, আরও যদি কেউ থাকেন সিআইডির হটলাইনে যোগাযোগ করতে পারেন। সিআইডি ভালো হাতের দায়িত্বে থাকা এই ভ্রাম্যমাণ কাজের মধ্যে সব কিছু আন্তর্জাতিক প্রটোকল অনুযায়ী হবে বলে তিনি জানান। তিনি আরও বলেন, এই কাজ মানবাধিকার ও মরদেহের সম্মান রক্ষার জন্য অত্যন্ত জরুরি। শহীদদের পরিবারের প্রতি সহানুভূতি প্রকাশ করে তিনি বলেন, অনেক বাবা-মা ও পরিবারের সদস্য দীর্ঘদিন ধরে তাদের প্রিয়জনদের পরিচয় জানতে অপেক্ষা করে আছেন, আমরা এই বেদনা কাটিয়ে উঠতে চাই। এই উদ্যোগে অংশগ্রহণকারী সকল সংস্থা, চিকিৎসক, প্রশাসন, পুলিশ ও আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞদের প্রতি তিনি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। এছাড়া, ইউনাইটেড নেশনস হাইকমিশনার ফর হিউম্যান রাইটস লুইস ফন্ডিব্রাইডার বলেন, আমি এই প্রক্রিয়ায় গত তিন মাস ধরে কাজ করে আসছি। আন্তর্জাতিক মান অনুযায়ী এই কাজ সম্পন্ন হবে বলে তিনি নিশ্চিত করেছেন এবং সব কিছু নিয়ম মেনে চলা হবে। তিনি আরও বলেন, আমাদের এই কাজের মাধ্যমে শহীদদের পরিচয় শনাক্তে আমরা সম্ভবত খুব দ্রুতই সফল হবো। সবশেষে, সিআইডি প্রধান সবাইকে সহযোগিতা ও অনুসরণ করার অনুরোধ জানিয়ে বলেছিলেন, এই মানবিক ও সম্মানজনক কাজের জন্য সকলের সম্মিলিত সহযোগিতা প্রয়োজন আমাদের।

