প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বেগম রোকেয়ার আদর্শ অনুসরণ করে নতুন ও সুন্দর বাংলাদেশ গড়ে তোলার জন্য সবাইকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছেন। মঙ্গলবার (৯ ডিসেম্বর) রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত বেগম রোকেয়া দিবসের অনুষ্ঠানে তিনি এই মন্তব্য করেন।
ড. ইউনূস বলেন, বেগম রোকেয়া যদি স্বপ্ন দেখতে পারেন, তবে আমরাও পারি। স্বপ্ন দেখার গুরুত্ব আর অসুবিধার কথা তিনি এড়িয়ে যাননি। তিনি আরও বলেন, বেগম রোকেয়া অনেকদূর অগ্রসর হয়েছেন, আমরা তাকে অনুসরণ করে আরও অনেক দূর এগিয়ে যেতে পারি। আমাদের শুধু স্বপ্ন দেখেই চলতে হবে। আজকের যুগে প্রযুক্তি আর বিজ্ঞানের সমারোহে আমাদের সম্পূর্ণ কাজের সীমা নেই। শুধু গুরুত্ব দিতে হবে মন থেকে কাজ করতে হবে।
বিশেষ করে তিনি উল্লেখ করেন, আজকের নারী সমাজ, বিশেষত গণঅভ্যুত্থানের পরবর্তী এই নারী সমাজ ভিন্ন রূপ ধারণ করেছে। তারা এখন নতুন বাংলাদেশ গড়ার অগ্রযাত্রায়। এই নারী সমাজ শুধু নারীদের জন্য নয়, সবাইকে উদ্দীপিত করে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। বিভিন্ন দিক থেকে তাদের উঁচু করে রাখতে হবে, যেন বেগম রোকেয়ার মতোই তারা স্বপ্ন দেখতে থাকে। তিনি উল্লেখ করেন, সুন্দর করে লিখেছেন—‘আমরা পড়তে ভালোবাসি, কিন্তু ঝাঁকুনি দিয়ে এগিয়ে যেতে হবে। এক জায়গা থেকে আসা যাবে না, প্রত্যেক জায়গায় জায়গায় কাজ করতে হবে।’ সেই চেতনা নিয়ে আমাদের নতুন বাংলাদেশ গড়ে তুলতে হবে।
ড. ইউনূস আরও বলেন, বেগম রোকেয়া স্বপ্ন দেখেছেন বহুপ্রচেষ্টার স্বপ্ন। এই স্বপ্ন বিশ্বাস করার মতো অনেক দুরূহ, তবে তার উপর বিশ্বাস রেখে তিনি সমাজকে ঝাঁকুনি দিয়েছেন। তিনি ভবিষ্যৎ নিয়ে ভাবেছেন। একবার দেখলাম তিনি বলছেন, ‘নারী কন্যাদের লেখাপড়া শেখাও যাতে তারা অন্য ধরনের উপার্জন করতে পারে।’ এই কথাগুলো বলেছিলেন শত বছর আগে; আজ থেকে একশো বছর আগে! তিনি চাকরির জন্য নয়, উদ্যোক্তা হয়ে ওঠার স্বপ্ন দেখছিলেন। নিজের উপার্জনের পথ তৈরির জন্য অনুপ্রাণিত করেছেন।
ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, আজ যারা পুরস্কার পাচ্ছেন, তারা শুধু বাংলাদেশের নয়, বিশ্বব্যাপী নতুন উচ্চতায় পৌঁছেছেন। এই পুরস্কার যুগান্তকারী, যেখানে তারা সারা বিশ্বে নেতৃত্ব দিচ্ছেন। এই সম্মাননা তাদের প্রথম ধাপ, যা পুরো দেশের জন্য গর্বের বিষয়। তারা দেশের পরিবর্তনে নেতৃত্ব দিয়ে যাচ্ছেন।
তিনি উল্লেখ করেন, আজকের এই অনুষ্ঠানের খবর যদি পত্রপত্রিকা প্রকাশ করে, তবে প্রতিটি মেয়ে এই ছবি দেখে উদ্বুদ্ধ হবে। তারা ভাববে, তারা কেন পিছিয়ে থাকবে? তাদের স্ট্যান্ডিং, বক্তব্য আর দৃষ্টিভঙ্গি শুধু বাংলাদেশ নয়, বিশ্বমানের। এভাবেই তারা বিশ্বের কাছে সম্মানিত। আজকে আমাদের প্রথমবারের মতো এই সম্মান দেখানোর মাধ্যমে আমরা তাদের পথের প্রথম ধাপ রাখতে পেরেছি।

