গণঅভ্যুত্থান-পরবর্তী সময়ের জন্য নির্বাচন শুধুমাত্র একটি রাজনৈতিক কর্মসূচি নয়, বরং এটি একটি নতুন বাংলাদেশ গড়ার গুরুত্বপূর্ণ সুযোগ হিসেবে দেখছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বলেছেন, এই নির্বাচনের সফল আয়োজন এবং সুষ্ঠু পরিবেশ তৈরি থেকে আমরা আমাদের ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য একটি স্মরণীয় এবং ইতিহাসের খাতা লেখার সুযোগ তৈরি করতে পারব।
বুধবার (১০ ডিসেম্বর) রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় সারা দেশের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের (ইউএনও) সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সে নির্বাচন প্রস্তুতির দিকনির্দেশনা দিতে গিয়ে প্রধান উপদেষ্টা এ কথা বলেন। এ সময় দেশের সকল জেলা প্রশাসক, বিভাগীয় কমিশনার ও মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের কর্মকর্তারা অনলাইনে যুক্ত ছিলেন।
প্রধান উপদেষ্টা সাধারণ জনগণের জন্য এই মুহূর্তে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো একটি শান্তিপূর্ণ ও স্বতঃস্ফূর্ত নির্বাচন অনুষ্ঠান। তিনি বলেন, ইতিহাস আমাদের আবারও সুযোগ দিয়েছে, এই সুযোগ যদি কাজে লাগাতে পারি তবে আমরা এক নতুন বাংলাদেশ গড়তে সক্ষম হব। অন্যথায়, জাতি পিছিয়ে পড়বে এবং ভবিষ্যত অন্ধকারে চলে যাবে।
তিনি আরও বলেন, আগের নির্বাচনের অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিয়ে জানি—সেগুলি ছিল নির্বাচন না, ছিল প্রতারণা আর বিশৃঙ্খলা। তাই এখন আমাদের দায়িত্ব বেশি গুরুত্বর, এটি শুধু একটি নির্বাচন নয়; এটি একটি ঐতিহাসিক দায়িত্ব। সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের মাধ্যমে আমরা যদি দেশের জনগণের প্রত্যাশা পুরণ করতে পারি, তবে দেশের ভবিষ্যত আরও উজ্জ্বল হবে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের উদ্দেশে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, দায়িত্বশীলতা ও সতর্কতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করলে সরকারের লক্ষ্য সফলতা লাভ করবে। তিনি উল্লেখ করেন, আগামী নির্বাচন এবং গণভোট—দুটি গুরুত্বপূর্ণ, কারণ নির্বাচন এখন পাঁচ বছরের জন্য, আর গণভোট শত বছর ধরে দেশের ভবিষ্যত নির্ধারণ করবে।
গণভোটের মাধ্যমে দেশের স্থায়ী পরিবর্তন আনার সুযোগ রয়েছে, এটাই নতুন বাংলাদেশ গঠনের একটি মূল ভিত্তি। তিনি ইউএনওদের বললেন, আপনাদের প্রধান কাজ হলো শান্তিপূর্ণ, উৎসবমুখর একটি নির্বাচন সম্পন্ন করা। এর জন্য নিজ নিজ এলাকায় সব পোলিং স্টেশন পরিদর্শন, স্থানীয় জনসাধারণ ও সংশ্লিষ্ট পক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে প্রস্তুতি নেওয়া জরুরি।
ভোটার সচেতনতা বৃদ্ধির উপরও গুরুত্বারোপ করে তিনি বলেন, তাদের বোঝাতে হবে—“হ্যাঁ” না “না” ঠিক করতে হবে যেন তারা নির্বাচনে মনোযোগী হয়ে সিদ্ধান্ত নেয়।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, একজন ধাত্রী যেমন সন্তানের সুস্থ জন্মের জন্য প্রয়োজনীয়, তেমনি একজন কর্মকর্তার সফলতা শিশুর সুস্থ জন্মের মতো। তিনি সতর্ক করে দেন, যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে সৃজনশীলতা এবং অপতথ্য ও গুজবের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি।
নারীদের অগ্রাধিকার দিয়ে নির্বাচনে অংশগ্রহণের ব্যাপারে তিনি জানান, নারীরা যেন সহজে ভোট কেন্দ্রে আসতে পারে, তার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে। তার পাশাপাশি, শিগগিরই নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা হবে বলে আশা ব্যক্ত করেন তিনি। তিনি বলেন, এখন থেকেই কাজের পরিকল্পনা এবং প্রস্তুতি নিতে হবে— কখন, কী কিভাবে কাজ করবেন তা নিয়ে এখনই ভাবতে হবে।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন প্রধান উপদেষ্টার মুখ্য সচিব এম সিরাজ উদ্দিন মিয়া, মন্ত্রিপরিষদ সচিব ড. শেখ আব্দুর রশীদ, প্রেস সচিব মোহাম্মদ শফিকুল আলম, এবং প্রশাসনের শীর্ষ কর্মকর্তারা।

