যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকত্ব লাভে আগ্রহী ধনী ব্যক্তিদের জন্য একটি বিশেষ নতুন ভিসা কর্মসূচি চালু করেছে ট্রাম্প প্রশাসন। এই ভিসার নাম হলো ‘ট্রাম্প গোল্ড ভিসা’। প্রথমে এ তথ্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালের মাধ্যমে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প নিজেই ঘোষণা দেন, এরপর তিনি সাংবাদিকদের সঙ্গে সাক্ষাৎকারে এই প্রবর্তনের বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
ট্রাম্পের দখলে থাকা ট্রুথ সোশ্যাল পোস্টে তিনি লেখেন, “যত যোগ্য ও যাচাইপ্রাপ্ত ব্যক্তির জন্য সুখবর! ট্রাম্প গোল্ড ভিসা এখন চালু হয়েছে। এই ভিসা সরাসরি মার্কিন নাগরিকত্ব লাভের পথকে সহজ করবে। আমাদের মার্কিন কোম্পানিগুলো তাদের মেধাবী ও প্রতিভাবান কর্মীদের ধরে রাখতে আরও সুবিধাজনক অবস্থা সৃষ্টি হবে।”
মার্কিন কর্মকর্তা-জনপ্রিয় তথ্যের বরাতে জানা গেছে, এই ভিসার জন্য আবেদন করতে হলে প্রথমে ট্রাম্পকার্ড ডট গভ (trumpcard.gov) ওয়েবসাইটে প্রবেশ করে ‘অ্যাপ্লাই নাউ’ বোতামে ক্লিক করতে হবে। এরপর আবেদনের ফরম পূরণ করে জমা দিতে হবে, যেখানে ফি হিসেবে দিতে হবে ১৫,০০০ ডলার (বাংলাদেশি টাকায় প্রায় ১৮ লাখ ২২ হাজার টাকা)। এই ফি গ্রহণ করবে যুক্তরাষ্ট্রের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
আবেদনপত্রের যাচাই-বাছাই সম্পন্ন হওয়ার পর আবেদনকারীর কাছে জানানো হবে, এবং তখন তারা ভিসার জন্য চাঁদা হিসেবে ১০ লাখ ডলার (বাংলাদেশি টাকায় প্রায় ১২ কোটি ১৫ লাখ ৬৪ হাজার টাকা) প্রদান করতে হবে। ট্রাম্পকার্ড ডট গভ ওয়েবসাইটে এই ‘চাঁদা’কে উপহার হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। এই ভিসার মর্যাদা গ্রিন কার্ডের মতো হবে, যেখানে গ্রিন কার্ডধারী ব্যক্তিরা স্থায়ীভাবে যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস ও কাজের অনুমোদন পান— ঠিক সেই রকম সুবিধা এটি প্রদান করবে।
অর্থাৎ, ট্রাম্পের এই গোল্ড ভিসা মূলত একটি শক্তিশালী ও দীর্ঘমেয়াদি পথ যার মাধ্যমে যোগ্য ব্যক্তিরা সরাসরি নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করতে পারবেন। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প হোয়াইট হাউসে সাংবাদিকদের বলেছিলেন, “এই ভিসা মূলত গ্রিন কার্ডেরই মতো, তবে এটি অনেক বেশি শক্তিশালী এবং নাগরিকত্বের জন্য বেশ উপকারী। এটি একটি সুদৃঢ় ও সহজ পথ।”
বাণিজ্যমন্ত্রী হাওয়ার্ড লুটনিক রয়টার্সকে জানান, ট্রাম্পকার্ড ডট গভ ওয়েবসাইটের প্রাক-নিবন্ধন পর্যায়ে প্রায় ১০ হাজার আবেদনকারী এই গোল্ড কার্ডের জন্য আবেদন করেছেন এবং আরও অনেক বেশি আবেদন আসার প্রত্যাশা রয়েছে। তিনি আশা করেন, সময়ের সাথে সাথে হাজার হাজার কার্ড বিক্রি হবে এবং বিপুল পরিমাণ অর্থ প্রতিষ্ঠানগুলো উপার্জন করবে।
প্রসঙ্গত, জানুয়ারি ২০২৫ সালে ডোনাল্ড ট্রাম্পের পুনরায় প্রেসিডেন্ট শপথ গ্রহণের পর থেকে তিনি অভিবাসনবিরোধী কঠোর নীতির আওতায় বিভিন্ন অভিযান চালিয়েছেন। হাজার হাজার নথিপত্রবিহীন অভিবাসীকে গ্রেপ্তার করে দেশে ফিরিয়ে পাঠানো হয়েছে, এবং আরও অনেককে বন্দিশালায় আটক রাখা হয়েছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, এই নতুন ট্রাম্প গোল্ড কার্ডের মাধ্যমে অভিবাসনের ক্ষেত্রে কিছু পুরোনো সমস্যা সমাধানের চেষ্টা এবং দেশের কোষাগারে বিপুল অর্থের প্রবাহ নিশ্চিতের লক্ষ্য রয়েছে। সূত্র: রয়টার্স।