বিজয় দিবসের মহান চেতনা ও ঐতিহাসিক স্মৃতি উদযাপন উপলক্ষে সশস্ত্র বাহিনী পরিচালিত এক অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। এটি আয়োজন করা হয় মঙ্গলবার ১৬ ডিসেম্বর, মহান বিজয় দিবসের দিন, রাজধানীর তেজগাঁওয়ে জাতীয় প্যারেড স্কয়ারে। দেশের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ এই অনুষ্ঠানে প্রধান উপদেষ্টা ছাড়াও বহু বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন।
তেজগাঁওয়ের জাতীয় প্যারেড স্কয়ারে আয়োজনকৃত এই অনুষ্ঠানের মাধ্যমে বাংলাদেশের স্বাধীনতার ৫৪তম প্রতিষ্ঠা উদযাপিত হয়। অনুষ্ঠানের অন্যতম আকর্ষণ ছিল মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতায় সশস্ত্র বাহিনীর তত্ত্বাবধানে চালানো এক মনোমুগ্ধকর ফ্লাই পাস্ট, প্যারাজাম্প ও এ্যারোবেটিক প্রদর্শনী। এই বিরাট আয়োজনকে আরও সাজিয়ে তোলে সশস্ত্র বাহিনী কর্তৃক পরিচালিত এক সমন্বিত ব্যান্ড পারফরম্যান্স। ঢাকার জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় সশস্ত্র বাহিনী অর্কেস্ট্রা দল নানা শিল্পীর পরিবেশনায় ভেন্যু মুখর করে তোলে। পাশাপাশি দেশের অন্যান্য জেলায়ও এই ব্যান্ড পারফরম্যান্স অনুষ্ঠিত হয়, যেখানে সেনানিবাস বা ঘাঁটিগুলির সংলগ্ন এলাকায় সীমিত আকারে এই পরিবেশনা চলেছে।
বিশেষ উল্লেখ্য, এই দিনে বিমান বাহিনী ফ্লাই পাস্টের মাধ্যমে বিভিন্ন শহর ও এলাকা যেমন খুলনা, বাগেরহাট, কুষ্টিয়া, নাটোর, বগুড়া, চট্টগ্রাম, ফৌজদারহাট, কক্সবাজার ও মাতারবাড়ীতে আকাশ থেকে অবতরণ করে। যা দর্শকদের জন্য এক অসাধারণ দৃশ্যবৈচিত্র্য সৃষ্টি করে।
বিজয়ের ৫৪তম বর্ষপূর্তিতে এক অনন্য ও ঐতিহাসিক ঘটনা ঘটে, যখন বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান চৌধুরী আশিকুর রহমান ও সশস্ত্র বাহিনীর ৫৩ জনসহ মোট ৫৪ জন প্যারাট্রুপার আকাশ থেকে পতাকাসহ ফ্রি ফল জাম্প করে। এটি সম্ভব হলে এটি বাংলাদেশি ইতিহাসে প্রথমবারের মতো এত বিশাল সংখ্যক পতাকাসহ এই ধরনের অবতরণ, যা এখনো গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসে স্থান পায়নি। এই রেকর্ডটি অর্জন বাংলাদেশের জন্য একটি বিশাল স্বাধীনতা ও গৌরবের উপলক্ষ হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে এটি বাংলাদেশের সক্ষমতা ও উত্তরণের আলোকোজ্জ্বল দিক তুলে ধরে। একইসাথে, দেশের সরকার ও জনগণের মধ্যে জাতীয় গৌরব, আত্মবিশ্বাস ও একতা আরও দৃঢ় করবে এই আয়োজন।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতি, উপদেষ্টা পরিষদের সদস্যরা, বিদেশি কূটনীতিকগণ, সশস্ত্র বাহিনীর প্রধানগণ এবং অন্যান্য অতিথিবৃন্দ।
অতিরিক্তভাবে, দেশের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থান যেমন চট্টগ্রাম, খুলনা, মোংলা, পায়রা বন্দর, ঢাকার সদরঘাট ও নারায়ণগঞ্জের পাগলায় নৌবাহিনী পরিচালিত জাহাজগুলো সকাল ১২টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত সাধারণের জন্য দর্শনের জন্য উন্মুক্ত রাখা হয়। তাছাড়া, সামরিক জাদুঘরসহ তিন বাহিনীর অন্যান্য জাদুঘরগুলো বিনা টিকেটে সবাইকে দেখার সুযোগ দেয়। এ সব আয়োজন বাংলাদেশের জাতীয় ঐতিহ্য ও সাহসীকতা প্রদর্শনের এক অনন্য দৃষ্টান্ত।

