সিঙ্গাপুর জেনারেল হাসপাতালে (এসজিএইচ) চিকিৎসাধীন ওসমান হাদি হাদির শারীরিক পরিস্থিতি এখনো সংকটাপন্ন। দেশের শীর্ষ নিউরোসার্জনদের সর্বশেষ মূল্যায়নের অনুযায়ী, তার ব্রেনের ইস্কেমিক পরিবর্তন ও ব্রেনের ফোলা বা এডেমা এখনও কমেনি। এটি এক দুঃশ্চিন্তার কারণ হিসেবে দেখা হচ্ছে।
মঙ্গলবার (১৬ ডিসেম্বর) দুপুরে সিঙ্গাপুরে হাদির চিকিৎসা পরিস্থিতি নিয়ে সংবাদমাধ্যমকে অবহিত করেন ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের নিউরো সার্জন এবং তার চিকিৎসায় যুক্ত ডা. আব্দুল আহাদ। তিনি জানান, ওসমান হাদি এখনও জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে অবস্থান করছেন। দেশের নিউরোসার্জনদের মূল্যায়নে বের হয়েছে, তার ব্রেনের ইস্কেমিক পরিবর্তন এবং ব্রেনের ফোলা আমাদের সাধারণ প্রত্যাশার চেয়ে বেশি দীর্ঘস্থায়ী হয়েছে। ফলে চিকিৎসার জন্য সংযত এক নির্দিষ্ট সময়ের (টাইম উইন্ডো) দিকে নজর রাখা গুরুত্বপূর্ণ।
ডা. আহাদ আরও জানান, সিঙ্গাপুর জেনারেল হাসপাতালের ইমার্জেন্সি ইউনিটে ভর্তি হওয়ার পর থেকেই নিউরোসার্জারি ও ক্রিটিক্যাল কেয়ার টিম একযোগে তার চিকিৎসা চালিয়ে যাচ্ছে। ব্রেনের সিটি স্ক্যান রিপোর্টে দেখা গেছে, তার বמאל পাশের ইস্কেমিক পরিবর্তন একই অবস্থায় রয়ে গেছে। পাশাপাশি, ব্রেনে এখনও ফোলা বা এডেমা বিদ্যমান। ব্রেন স্টেমে আঘাতের কারণে মস্তিষ্কের ভেন্ট্রিকুলার সিস্টেমে চাপ সৃষ্টি হয়েছে, যা চিকিৎসকদের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ।
চিকিৎসকদের বরাতে ডা. আহাদ জানিয়েছেন, বর্তমানে হাদির কিডনি, হৃদয় ও ফুসফুস কৃত্রিম ভেন্টিলেশনের মাধ্যমে সচল রাখা হয়েছে। তার জিসিএস স্কোরে কোনো পরিবর্তন দেখা যায়নি; অর্থাৎ, তার নিউরোলজিক্যাল রেসপন্স এখনও অপরিবর্তিত। এই মুহূর্তে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো সময়। ব্রেন ইনজুরির ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট একটি সময় বা ‘টাইম উইন্ডো’ রয়েছে, এর মধ্যে যদি তার শরীর প্রতিরূপকভাবে সাড়া দেয়, তাহলে তার পরবর্তী অবস্থার উন্নতির সম্ভাবনা বেড়ে যায়। চিকিৎসকর উল্লিখিত এই সময়সীমার মধ্যে হাদির শরীরের কোনও পরিবর্তন হতে থাকলে, তা পর্যবেক্ষণ করে সামনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
হাদির ফুসফুসের সর্বশেষ স্ক্যান অনুযায়ী এখনও রক্তের উপস্থিতি দেখা যাচ্ছে, যা পূর্বের মতোই রয়েছে। এই কারণেই বাংলাদেশে থাকাকালীন তার বুকের মধ্যে চেস্ট ড্রেন যোগ করা হয়েছিল। সিঙ্গাপুরে চিকিৎসা চলাকালীনও শ্বাসপ্রশ্বাসের এই জটিলতা বজায় রয়েছে।
সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রচারিত খবর অনুযায়ী হাদির শরীরের উন্নতি বা চোখের খোলা নিয়ে গুজব ছড়ানো হয়, যা চিকিৎসকদের পক্ষ থেকে সম্পূর্ণ অপ্রত্যাশিত ও ভুল বলে জানানো হয়েছে। তাদের তথ্য অনুযায়ী, তার অবস্থা এখনো স্থিতিশীল, অর্থাৎ আগের জায়গাতেই আছে মাত্র। জ্ঞান ফেরার বিষয়ে চিকিৎসকরা এখনি কোনো নিশ্চিত ভবিষ্যদ্বাণী করতে পারছেন না।
উল্লেখ্য, ওসমান হাদি গত ১২ ডিসেম্বর দুপুর আড়াইটার দিকে পুরানা পল্টনের বক্স কালভার্ট রোডে একটি ব্যাটারিচালিত রিকশায় থাকা অবস্থায় মোটরসাইকেল আরোহীরা তাকে গুলি করে। প্রথমে তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়, পরে আমজাদ খান এভারকেয়ার হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়। গতকালই তার উন্নত চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুরের অ্যাম্বুলেন্সে করে দুই হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়।

