তাত্ত্বিকভাবে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন থাকলেও বাংলা নাটকে ধূমপানের রমরমা দৃশ্য প্রকাশের ঘটনা উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। সম্প্রতি ৪০ মিনিটের একটি নাটকে ৮০টির বেশি ধূমপানের দৃশ্য দেখা গেছে, যা আইন লঙ্ঘনের পাশাপাশি সাংস্কৃতিক বিকৃতির সূচক। মাদকদ্রব্য ও নেশা নিরোধ সংস্থা মানস এই বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে মোকাবেলার আহ্বান জানিয়েছে।
১৭ ডিসেম্বর মানসের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, নাটকে ধূমপানের দৃশ্য প্রচার ইতিমধ্যেই নিষিদ্ধ থাকলেও অনেক নাটক এই নিয়মের অমান্য করছে। সংস্থার পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে, সম্প্রতি মুক্তিপ্রাপ্ত ওয়েবফিল্ম ‘নয়া নোট’ এবং নাটকগুলো যেমন ‘বিজনেসম্যান’, ‘তোকে খুঁজি’, ‘এমন দিনে তারে যায় বলা’, ‘শর্টকাট’সহ বেশ কয়েকটি নাটকে ধূমপানের আধিক্য লক্ষ্য করা গেছে। এসব নাটকের মধ্যে ‘বিজনেসম্যান’ নাটকে একটিই দৃশ্য ৪০ মিনিটের মধ্যে ৮০ বার ধূমপানের দেখানো হয়েছে। সর্বমোট, উল্লেখিত পাঁচটি নাটকে মোট ১৮৭ বার ধূমপানের দৃশ্য ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। বিশেষ করে তরুণ দর্শকদের আকর্ষণের জন্য জনপ্রিয় শিল্পীদের মাধ্যমে এসব দৃশ্য কৌশলগতভাবে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে। অনেকসময় ব্র্যান্ড প্রমোশনের জন্য সিগারেটের প্যাকেজ ও ব্র্যান্ডের উদাহরণও দেখানো হয়। এসব নাটকের ট্রেইলার ও প্রচারমূলক সামগ্রীতেও ধূমপানের দৃশ্য দেখা গেছে।
মানসের সভাপতি অধ্যাপক ড. অরূপরতন চৌধুরী বলেন, ‘আজকের দিনে ভালো গল্পনির্ভর বাংলা নাটক কমে গেছে। বেশিরভাগ নাটকই মানসম্মত নয় এবং নেতিবাচকতা প্রচার করছে। ধূমপান, মদ্যপান, ভাষার অপপ্রয়োগ ও সহিংসতা এসব নাটকের অন্যতম বৈশিষ্ট্য। সোশ্যাল মিডিয়ায় এই ধরনের খণ্ড অংশগুলো ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ছে, যা কিশোর-তরুণদের নজর কেড়ে নিচ্ছে। এর ফলে ব্যক্তি, পরিবার ও সমজ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এই অস্থিরতার মধ্যে কার্যক্রম বন্ধ ও দায়িত্বশীলতা অবলম্বনের প্রয়োজন রয়েছে।’
আরও জানানো হয়, ওটিটি প্ল্যাটফর্মে প্রচারের জন্য নির্দিষ্ট কোন বিধিনিষেধ নেই। অনেক নাটক কেবল এই প্ল্যাটফর্মের জন্য তৈরি হচ্ছে, পোস্ট-প্রকাশের পরেও কিছু নাটক টেলিভিশনে প্রচার হয়। এর মধ্যে কাহিনির প্রয়োজন দেখিয়ে নির্মাতারা আইন অমান্য করে চলছেন। এর ফলে দেশি ও বিদেশি তামাক কোম্পানিগুলোর সুবিধা হচ্ছে, যারা তরুণদের কাছে জনপ্রিয় কিছু নাটকের মাধ্যমে তামাকের পণ্য প্রচার করছে। ভবিষ্যতে এটি ধূমপানের প্রবণতা বৃদ্ধি করতে পারে।
মানসের পক্ষ থেকে দাবি জানানো হয়, আগামী প্রজন্মের সচেতনতা ও নিরাপত্তার জন্য দ্রæত তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন আরও কঠোর করা, ওটিটি নীতিমালা চূড়ান্ত করা ও একটি স্পষ্ট গাইডলাইন প্রণয়নের প্রয়োজন।
উল্লেখ্য, ‘ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার (নিয়ন্ত্রণ) আইন, ২০০৫’ এর ধারা-৫ (ঙ) অনুযায়ী, বাংলাদেশে কোনও সিনেমা, নাটক বা প্রামাণ্যচিত্রে তামাকজাত দ্রব্যের দৃশ্য প্রচার বা প্রদর্শন করা যাবে না। এটি স্পষ্ট করে দেওয়া হয়েছে যে, কোনও মাধ্যমে তা ফলপ্রসূ রূপে উপস্থাপন বা বর্ণনা করা যাবে না।

