মহান মুক্তিযুদ্ধের বিশিষ্ট ডেপুটি চিফ অব স্টাফ এবং সাবেক বিমান বাহিনী প্রধান এয়ার ভাইস মার্শাল এ কে খন্দকার আজ সকালে বার্ধক্যজনিত কারণে ইন্তেকাল করেছেন। তিনি সকাল ১০:৩৫ মিনিটে পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করেন (ইন্না-লিল্লাহ ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। বিষয়টি নিশ্চিত করেছে আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর)।
এ কে খন্দকারের জন্মগ্রহণ করেছিলেন ১৯৩০ সালের ১ জানুয়ারি। তার পিতার কর্মস্থল ছিল রংপুর শহর, যেখানে তার জন্ম। তার বাড়ি পাবনা জেলার বেরা উপজেলার ভারেঙ্গা গ্রামে। তার পিতা, খন্দকার আব্দুল লতিফ, ব্রিটিশ শাসনামলে ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন, আর তার মাতা, আরেফা খাতুন, একজন আদর্শ গৃহিণী। চার ভাই ও এক বোনের মধ্যে তিনি তৃতীয় সন্তানের।
পারিবারিক নিয়তিতে তার শিক্ষাজীবনের সূচনা হয় বগুড়া শহরে। তিনি সেখানে বগুড়া কর্ণেশন স্কুলে কিছুদিন লেখাপড়া করেন। ভারত বিভাগের সময়, ১৯৪৭ সালে, মালদা জেলা স্কুল থেকে ম্যাট্রিকুলেশন সম্পন্ন করেন।
১৯৫২ সালের সেপ্টেম্বর মাসে পাকিস্তান বিমান বাহিনী (পিএএফ) থেকে তিনি তার কমিশন লাভ করেন, পাইলট অফিসার হিসেবে। ১৯৫৫ সাল পর্যন্ত তিনি ফাইটার পাইলট হিসেবে কাজ করেন এবং পরে ফ্লাইং ইন্সট্রাক্টর হিসেবে দায়িত্ব পালন শুরু করেন। পাকিস্তান এয়ার ফোর্স অ্যাকাডেমি পর্যন্ত সেই সময় তিনি ছিলেন।
ফ্লাইং ইন্সট্রাক্টর স্কুলে ১৯৫৮ সাল পর্যন্ত তিনি ফ্লাইট কমান্ডার হিসেবে কাজ করেন। এরপর ১৯৬০ সালে তিনি জেট ফাইটার কনভার্শন স্কোয়াড্রনের ফ্লাইট কমান্ডার হিসেবে দায়িত্ব নিতে চলেন, যা তিনি ১৯৬৫ সাল পর্যন্ত চালিয়ে যান। পাশাপাশি ট্রেনিং উইং-এর অফিসার কম্যান্ডিং হিসেবে তিনি ১৯৬৬ সাল পর্যন্ত কর্মরত ছিলেন। ১৯৬৯ সাল অবধি পিএএফ প্ল্যানিং বোর্ডের প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব পালন করেন। এরপর, তিনি সেকেন্ড ইন কমান্ড হিসেবে ঢাকার পিএএফ বেসে দায়িত্ব পান।
এ কে খন্দকার উইং কমান্ডার হিসেবে তার দায়িত্ব পালনকালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে তিনি মুক্তিযুদ্ধের ডেপুটি চিফ অব স্টাফ হিসেবে দায়িত্ব নেন। ১৯৭১ সালের ২১ নভেম্বর তিনি গ্রুপ ক্যাপ্টেনে পদোন্নতি পান, বাংলাদেশের আন্তঃসরকারি সিদ্ধান্ত অনুযায়ী। তিনি তৎকালীন যুদ্ধকালীন সরকার থেকে জেনারেল এম এ জি ওসমানীর ব্যক্তিগত ডেপুটি ইন চার্জ বা উপ-প্রধান সেনাপতির দায়িত্বও পান।
তার মৃত্যুতে দেশের সামরিক ইতিহাসের এক গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় শেষ হলো। তাঁর পরিবার, সহকর্মী ও দেশবাসী গভীর শোক প্রকাশ করেছেন।

