দেশজুড়ে ধাপে ধাপে তাপমাত্রা কমছে এবং শীতের তীব্রতা বাড়ছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, চলতি সপ্তাহে তাপমাত্রা আরও নেমে যেতে পারে ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে, যাত্তে পড়তে পারে তীব্র শৈত্যপ্রবাহের আশঙ্কা। শনিবার (২৭ ডিসেম্বর) আবহাওয়া অফিস গণমাধ্যমকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।
আবহাওয়াবিদরা জানিয়েছেন, বিভিন্ন পূর্বাভাস অনুযায়ী, আগামী মঙ্গলবার (৩০ ডিসেম্বর) পর্যন্ত দেশের তাপমাত্রা আরও কমতে পারে। মূল কারণ হিসেবে তারা উপমহাদেশীয় উচ্চচাপ বলয়ের প্রভাবকে দেখছেন, যা পরিস্থিতি আরও কঠিন করে তুলতে পারে। এই উচ্চচাপ বলয়ের বর্ধিত অংশ এখন পশ্চিমবঙ্গ ও তার আশপাশের অঞ্চলে অবস্থান করছে।
শনিবার সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত জানানো হয়েছে, মধ্যরাত থেকে সকাল পর্যন্ত সারা দেশে মাঝারি থেকে ঘন কুয়াশা পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। কোথাও কোথাও কুয়াশার কারণে কিছুটা সময় দেখার সমস্যা হতে পারে। রাতের তাপমাত্রা সামান্য বাড়তে থাকলেও দিনব্যাপী তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে। এই কুয়াশাচ্ছন্ন আবহাওয়ার কারণে বেশ কিছু অঞ্চলে ঠান্ডা অনুভূতি আরও বাড়তে পারে।
সারাদেশের আবহাওয়ার পূর্বাভাস অনুযায়ী, শনিবার সন্ধ্যা ৬টা থেকে রবিবার সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত মধ্যরাতের দিকে দেশের উত্তরাঞ্চল ও নদী অববাহিকায় মাঝারি থেকে ঘন কুয়াশা পড়তে পারে। অন্যত্র হালকা থেকে মাঝারি কুয়াশা থাকার সম্ভাবনা রয়েছে। এই সময়ে রাতে ও দিনে তাপমাত্রা স্থির থাকতে পারে।
সোমবার সন্ধ্যার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, আবারও মধ্যরাত থেকে সকাল পর্যন্ত দেশের উত্তরাঞ্চল ও নদী অববাহিকার কিছু অংশে মাঝারি থেকে ঘন কুয়াশা পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। দেশের অন্য অংশে হালকা থেকে মাঝারি কুয়াশার উপস্থিতি থাকতে পারে, এবং তাপমাত্রা সামান্য কমতে পারে। দিনের তাপমাত্রাও কিছুটা নিম্নমুখী হতে পারে। বিশেষত এই কয়েক দিন অস্থায়ীভাবে আকাশের অবস্থাও শুষ্ক থাকবে।
গত কয়েক দিন ধরে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে যেমন যশোরে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। শুক্রবার সকালে এই জেলাটিতে তাপমাত্রা আরও কমে গিয়েছিল। সঙ্গে বাতাসের আদ্রতা ছিল প্রায় ৯৫ শতাংশ। হিমেল হাওয়ায় শৈত্যপ্রবাহের কারণে জনজীবন চরমভাবে অস্থির হয়ে পড়েছে। ঠান্ডার কষ্টে কাঁপছে মানুষ ও প্রাণীও, বিশেষ করে খেটে-খাওয়া মানুষরা হচ্ছে সবচেয়ে বেশি বিপর্যস্ত।
আবহাওয়াবিদ হাফিজুর রহমান বলেন, দেশের কোথাও শীতের তীব্রতা না থাকলেও তাপমাত্রা কমে যাওয়ায় শীত অনুভূতি বেশি হচ্ছে। তিনি আশাবাদী, এই ঠান্ডা বাড়তি কয়েক দিন থাকবে এবং নতুন বছর শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে শীত আরও জেঁকে বসবে। তবে, এখনই কোনো বিশাল শৈত্যপ্রবাহের পূর্বাভাস নেই।
নাজমুল হক বলেন, দেশের অন্তত দুই থেকে তিনটি অঞ্চলে তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে নেমে আসার কারণে শীতের প্রকৃতি খুবই স্পষ্ট হয়ে উঠছে।
অভিজ্ঞ আবহাওয়াবিদ ড. মো. ওমর ফারুক জানিয়েছেন, এবারের শীতের তীব্রতা খুব বেশি অনুভূত হচ্ছে। তিনি ব্যাখ্যা করেন, যদি সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন তাপমাত্রার মধ্যে পার্থক্য ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে পড়ে, তবে শীতের অনুভূতি বেশি হয়। আর এই পার্থক্য যদি ৫ ডিগ্রি 이하 হয়, তাহলে হাড় কাঁপানো শীত জেঁকে বসবে।
তিনি আরও বলেন, রংপুর, দিনাজপুর ও তেঁतুলিয়ায় এই পার্থক্য ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে থাকায় জনজীবন প্রায় স্থবির হয়ে পড়েছে। ঢাকায়, বগুড়া ও সিলেটে এই পার্থক্য ১৩ ডিগ্রির নিচে এসে গেছে। এই পরিস্থিতিতে শীতের প্রকোপ আরও বাড়তে পারে।

