মধ্যবিত্তরা অনেক বছর ধরেই সঞ্চয়পত্রকে আস্থার তিন অংকের নিরাপদ বিনিয়োগ এবং মাসিক আয়ের অন্যতম উৎস হিসেবে দেখে আসছেন। তবে বর্তমানে সরকারের আর্থিক নীতির পরিবর্তনের কারণে এই বিনিয়োগের ওপর বর্তমান মুনাফার হার কমানোর ঘোষণা আসছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রের খবর অনুযায়ী, আগামী ১ জানুয়ারির মধ্যে সরকারের অর্থ বিভাগ নতুন করে সঞ্চয়পত্রের সুদের হার কমানোর প্রস্তাব তৈরি করছে। এই প্রস্তাবটি অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদের অনুমোদনের জন্য তাঁর দপ্তরে জমা দেওয়া হয়েছে। অনুমোদনের পর তা অর্থ মন্ত্রণালয়ের অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ (আইআরডি) পাঠানো হবে এবং তারা একটি পরিপত্র জারি করবে। এই পরিবর্তনের ফলে সঞ্চয়পত্রের বর্তমান সর্বোচ্চ সুদের হার ১১.৯৮ শতাংশ থেকে প্রায় ০.৫ শতাংশ কমে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এর ফলে আয়ের হার যেমন কমবে, তেমনই বিনিয়োগকারীদের লাভের অংশও কমে আসবে। গত ছয় মাসে একাধিক সুদের হার কমানোর ঘোষণা দেওয়া হলেও, এবার নতুন এই প্রস্তাব সঞ্চয়পত্রের প্রবৃদ্ধিকে কিছুটা ঠেলা দেবে বলে ধারণা করছেন অর্থনৈতিক বিশ্লেষকরা। বিশেষ করে সাড়ে সাত লাখ টাকার কম বিনিয়োগে মুনাফার হার বেশি থাকলেও, ডজনখানেক বেশি হলে তা অনেকটাই কমে যাবে। প্রধানত, গত ৩০ জুনের পর থেকে সরকার তার আয় ও ঋণ ব্যবস্থাপনার অংশ হিসেবে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বর্তমানে, বিভিন্ন ধরনের সঞ্চয়পত্রে সুদের হার ৯.৭২ থেকে ১১.৯৮ শতাংশের মধ্যে। নতুন প্রস্তাব অনুযায়ী, এই হার গড়ে ০.৫ শতাংশ কমে যেতে পারে, তবে বিনিয়োগের পরিমাণ অনুযায়ী পরিবর্তন আসবে। একদিকে, ছয় মাস আগের চেয়ে সুদের হার কমার ফলে সাধারণ মানুষের আস্থা কিছুটা কমতে পারে, অন্যদিকে, সরকারের ঋণের পরিমাণ ও অর্থনীতি নিয়ন্ত্রণে এই পরিবর্তন ইতিবাচক দিকেও যেতে পারে। দেশে বিভিন্ন ধরণের সঞ্চয়পত্রের মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় হলো পরিবার সঞ্চয়পত্র, যেখানে ৫ বছরের মেয়াদের পর, সাড়ে সাত লাখ টাকার কম বিনিয়োগের ক্ষেত্রে মুনাফার হার ১১.৯৩ শতাংশ থাকবে এবং বেশি বিনিয়োগে ১১.৮০ শতাংশ। গত ১ জুলাইয়ের আগে এই হার ১২ শতাংশের বেশি ছিল। পেনশনার সঞ্চয়পত্র, বাংলাদেশ সঞ্চয়পত্র, ডাকঘর সঞ্চয় ব্যাংক ইত্যাদি বিভিন্ন ধরণের উপকরণেও হার অপরিবর্তিত থাকছে বা সামান্য পরিবর্তন হবে বলে জানা গেছে। সরকারি সূত্র বলছে, ২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রথম চার মাসে, জুলাই থেকে অক্টোবর, সঞ্চয়পত্র বিক্রি থেকে সরকার টাকায় ২৩৬৯ কোটি টাকা ঋণ সংগ্রহ করেছে। এর আগে ২০২৪-২৫ অর্থবছরে সরকার ঋণের পরিমাণ ছিল ঋণাত্মক প্রায় ছয় হাজার কোটি টাকা। অক্টোবর শেষে এই ঋণের স্থিতি দাঁড়িয়েছে তিন লাখ ৪১ হাজার কোটি টাকার বেশি। সরকারের এই ধাপগুলো দেশীয় অর্থনীতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে কিছুটা হলেও সাহায্য করছে।

