আসন্ন ঈদুল ফিতরের পর রাজপথে কতটা সক্রিয় হচ্ছেন বিএনপির নেতাকর্মীরা- এমন প্রশ্ন দলে ঘুরপাক খাচ্ছে। তবে এ বিষয়ে সরাসরি কোনও মন্তব্য করছেন না দলের নীতিনির্ধারকরা। সিনিয়র নেতাদের কেউ কেউ আন্দোলনে কঠোর হওয়ার আহ্বান জানালেও প্রকৃত অর্থে রাজপথে প্রকাশ্য হওয়ার বিষয়টি এখনও সিদ্ধান্তহীন। তবে নগর থেকে তৃণমূলের নেতাকর্মীরা বলছেন, দলের হাইকমান্ড যেকোনও সময় কর্মসূচি ঘোষণা দিলেই রাজপথে নেমে আসবেন তারা।
বিএনপির নেতারা বলছেন, ঈদের পরে আন্দোলন সফল করার লক্ষ্যে রমজান মাসে দল ও বিএনপির বিভিন্ন অঙ্গসংগঠন গোছানোর কাজ চলছে। কেন্দ্রীয় নেতারা বিভিন্ন জেলায় সফর করে দলের তৃলমূল পর্যায়ে কোনও সাংগঠনিক সমস্যা থাকলে তা সমাধানের উদ্যোগ নিচ্ছেন। সারাদেশে বিএনপির ৮১টি সাংগঠনিক জেলা রয়েছে। এরমধ্যে যেসব জেলার আহ্বায়ক কমিটি রয়েছে সেগুলো পূর্ণাঙ্গ কমিটি করে লন্ডনে পাঠানো হচ্ছে। সেখান থেকে অনুমোদনের পরে তা ঘোষণা করা হবে। ইতোমধ্যে ১৫টি জেলার পূর্ণাঙ্গ কমিটি প্রস্তুত করা হয়েছে।
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘পুরো রমজান মাস আমরা দল এবং অঙ্গসংগঠনগুলো গোছানোর কাজ শেষ করছি। রমজানে ইফতারকে কেন্দ্র করে অনেক ধরনের রাজনীতি হয়। তাই রমজানে আমাদের রাজনীতি ছিল সংগঠন গোছানোর। সেই লক্ষ্যে নেতারা নিজ নিজ নির্বাচনি আসনে ইফতার মাহফিলে অংশ নিয়েছেন। এছাড়া স্থানীয়ভাবে দলের মধ্যে কোনও সমস্যা থাকলে তা সমাধান করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে ঢাকা মহানগর বিএনপি, ছাত্রদল, যুবদলের বিভিন্ন জেলার কমিটিও করা হয়েছে। তাই আশা করি ঈদের পরে খালেদা জিয়ার মুক্তি এবং সরকারবিরোধী যে আন্দোলন শুরু হবে তাতে সফল হবো।’
বিএনপির ঢাকা বিভাগের সাংগঠনিক সম্পাদক ফজলুল হক মিলন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘বর্তমান অবৈধ সরকারের সময় শেষ হয়ে আসছে। তারা এখন ভীত হয়ে খালেদা জিয়াকে কারাগারে আটকে রেখেছে। আগামী নির্বাচন ও আন্দোলন একই সূত্রে গাঁথা। তাই আশা করছি ঈদের পরে যে আন্দোলন তাতে জনগণকে সম্পৃক্ত করে আমরা সফল হবো। আন্দোলনে নেতাকর্মীরাও মাঠে থাকবে।’
ঢাকা মহানগর বিএনপি নেতারা বলছেন, আগামী দিনের সরকারবিরোধী আন্দোলন সফল করতে ঢাকা মহানগর বিএনপি সব ধরনের প্রস্তুতি শেষ করছে। ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির ২৫টি থানা এবং ৫৮ ওয়ার্ডের কমিটি করা হয়েছে। ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সব থানা ওয়ার্ডের কমিটিও প্রস্তুত করা আছে। যেকোনও সময় ঘোষণা আসতে পারে।
ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির সাধারণ সম্পাদক কাজী আবুল বাশার বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আগামী দিনের আন্দোলনকে মাথায় রেখে সব থানা এবং ওয়ার্ডের কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে। ঈদের পরে কেন্দ্র থেকে যেসব কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে, তা সফল করতে আমরা মাঠে থাকবো।’
ছাত্রদলের দফতর সম্পাদক আবদুস সাত্তার পাটোয়ারী জানান, ‘এখন পর্যন্ত ২৪টি জেলায় ছাত্রদলের আংশিক কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে। সব মিলিয়ে ৭৪টি সাংগঠনিক জেলায় কমিটি করেছি।’
দলটির দায়িত্বশীল একাধিক সূত্রে জানা যায়, বিএনপির অঙ্গসংগঠন যুবদলের ৩০টি জেলার কমিটি করা হয়েছে। এছাড়া পর্যায়েক্রমে স্বেচ্ছাসেবক দল, মুক্তিযোদ্ধা দল, শ্রমিক দল, জাতীয়তাবাদী সাংস্কৃতিক সংস্থার কমিটি ঘোষণা করা হবে।
ছাত্রদলের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মামুন অর রশিদ মামুন বলেন, ‘বিএনপির সব আন্দোলনে ছাত্রদল সক্রিয় ছিল। আগামী দিনের যেকোনও আন্দোলন সংগ্রামে আরও বেশি সক্রিয় থাকার জন্য সারাদেশে জেলা ও মহানগর পর্যায়ের কমিটি গঠন করা হয়েছে।’
বিএনপির সূত্রগুলো বলছে, আগামী জুন-জুলাই নিয়মতান্ত্রিক শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের মাধ্যমে পার করা হবে। কারণ, দীর্ঘসময় ধরে আন্দোলন টেনে নেওয়ার মতো সাংগঠনিক সক্ষমতা এ মুহূর্তে বিএনপির নেই। তবে এ সময়ের মধ্যে সরকারের সঙ্গে কোনও ধরনের সমঝোতা না হলে জুলাইয়ের দিকে কঠোর আন্দোলনের যাওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে। তবে বিভিন্ন আলোচনা সভায় বিএনপির নেতারা বলছেন, আইনি প্রক্রিয়ায় খালেদা জিয়াকে মুক্ত করা সম্ভব নয়। তাকে মুক্ত করতে হবে আন্দোলনের মাধ্যমে। তবে বিএনপির চলমান আন্দোলন দিয়ে তাকে মুক্ত করা এবং নিরপেক্ষ সরকার দাবি আদায় করা সম্ভব নয়। তাই আমাগীতে কর্মসূচির ধরন পরিবর্তন করে কঠোর আন্দোলনে গড়ে তোলা হবে।
রাজশাহীর মেয়র ও মহানগর বিএনপির সভাপতি মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘স্বৈরাচারী সরকার আদালত থেকে প্রশাসন সব জায়গা নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে গেছে। তারা বিএনপির আন্দোলনকে রাজনৈতিকভাবে মোকাবেলা না করে প্রশাসন দিয়ে করে। এরপরও আমরা ঈদের পরে কঠোর আন্দোলনে প্রস্তুতি নিচ্ছি। সেই আন্দোলনে নেতাকর্মীদের যেন ক্ষতি না হয় সেদিকে দৃষ্টি দিয়ে তা কীভাবে সামাজিক আন্দোলন গড়ে রূপান্তর করা যায় সেই চেষ্টা থাকবে।’