‘এ ফ্লাইওভার চট্টগ্রামবাসীর জন্য ঈদ উপহার’ উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন ২০২১ সালের মধ্যে দেশকে ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত করার লক্ষ্যে কাজ করছি। ২০২১ সালে ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত দেশে সুবর্ণ জয়ন্তী পালন করতে চাই।
উন্নয়নের ধারাবাহিকতা রক্ষায় আগামীতেও নৌকায় ভোট দেয়ার আহবান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, অনেক কাজ এর মধ্যে শেষ হয়েছে। অনেক কাজ চলছে। উন্নয়নের এই ধারাবাহিকতা রক্ষায় আগামীতেও জনগণ নৌকায় ভোট দিবেন বলে আশা রাখি।
তিনি শনিবার চট্টগ্রাম মহানগরীর জমিয়াতুল ফালাহ জামে মসজিদ মাঠে সুধী সমাবেশে ৩১টি উন্নয়ন প্রকল্পের উদ্বোধন ও ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন শেষে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ আহবান জানান।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছি। এর মধ্যে রিজার্ভ ১৬ বিলিয়ন ইউএস ডলারে উন্নীত হয়েছে। জনগণের মাথাপিছু আয়ও বেড়েছে। আয় বাড়ার সাথে সাথে জীবনযাত্রার মান উন্নত হয়েছে। ডিজিটাল বাংলাদেশের সুবিধা পৌঁছে দিতে ইউনিয়ন পর্যায়ে চালু করা হয়েছে তথ্যসেবা কেন্দ্র। যেসব এলাকায় বিদ্যুৎ নেই সেখানে বিদ্যুৎ দেয়া হয়েছে। খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনে কাজ করছি। আশ্রায়ন প্রকল্প করে ভূমিহীনদের আবাসনের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
উন্নয়ন প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তার সরকার সপ্তম বার্ষিক উন্নয়ন পরিকল্পনা প্রণয়ন করছে।
তিনি বলেন, অন্যের কাছে ভিক্ষা নয়, আমরা নিজের পায়ে দাঁড়াবো। এজন্য প্রয়োজন সরকারের ধারাবাহিকতা। তিনি চট্টগ্রামের গ্যাস ও বিদ্যুৎ সংকট নিরসনের আশ্বাস দেন।
চট্টগ্রামের উন্নয়ন প্রসঙ্গে বলেন, মাত্র ১ টাকায় খাদ্য গুদাম একটি ইপিজেডকে দিয়ে দেয়া হয়েছিলো। আমরা ক্ষমতায় আসার পর তা উদ্ধার করে অত্যাধুনিক গুদাম ও সাইলো নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছি।
চট্টগ্রামের বহদ্দার হাটে নির্মিত ফ্লাইওভারকে মরহুম আওয়ামী লীগ নেতা এম এ মান্নান ফ্লাইওভার ঘোষণা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এ ফ্লাইওভার চট্টগ্রামবাসীর জন্য ঈদ উপহার।
নতুন ভিত্তিপ্রস্তর করা মুরাদপুর থেকে লালখান বাজার পর্যন্ত যে ফ্লাইওভার নির্মাণ করা হবে তার নাম হবে মরহুম আওয়ামী লীগ নেতা আখতারুজ্জামান চৌধুরী বাবুর নামে।
চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান আব্দুস ছালামের সভাপতিত্বে সুধি সমাবেশে প্রাথমিক ও গণশিক্ষামন্ত্রী আফসারুল আমিন, শিল্পমন্ত্রী দিলীপ বড়ুয়া, ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন এমপি, সংসদ সদস্য নূরুল ইসলাম বিএসসি, সাইফুজ্জামান জাবেদ, চেমন আরা তৈয়ব, মাঈন উদ্দিন খান বাদল, আওয়মী লীগ নেতা উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে শনিবার সকাল সাড়ে ১১টার দিকে জাতীয় মসজিদ জমিয়াতুল ফালাহ ময়দানে পৌঁছে প্রধানমন্ত্রী ডিজিটাল পদ্ধতিতে সুইচ টিপে চট্টগ্রামের ৩১টি উন্নয়ন প্রকল্পের উদ্বোধন করেন। এ প্রকল্পগুলোর মধ্যে রয়েছে- ২৭ কোটি টাকা ব্যয়ে দেওয়ানহাট ফ্লাইওভার নির্মাণ, ৩০ কোটি টাকা ব্যয়ে আরাকান সড়ক উন্নয়ন ও সম্প্রসারণ, ৪০ কোটি টাকা ব্যয়ে অক্সিজেন-কুয়াইশ সড়কের উন্নয়ন ও সম্প্রসারণ, ৬২ কোটি টাকা ব্যয়ে অলি খাঁ মসজিদ থেকে অক্সিজেন পর্যন্ত সড়ক উন্নয়ন ও সম্প্রসারণ, ৪০ কোটি টাকা ব্যয়ে চট্টগ্রাম কলেজ রোডের উন্নয়ন ও সম্প্রসারণ, ৯১ কোটি টাকা ব্যয়ে ঢাকা ট্রাংক রোডের উন্নয়ন ও সম্প্রসারণ, ৪৪ কোটি টাকা ব্যয়ে পাঠানটুলী রোডের উন্নয়ন ও সম্প্রসারণ, ৩০ কোটি টাকা ব্যয়ে সিডিএ গার্লস স্কুল এন্ড কলেজ নির্মাণ, ৪০ কোটি টাকা ব্যয়ে চার হাজার নারী শ্রমিকের ডরমেটরি নির্মাণ, ৪০ কোটি টাকা ব্যয়ে নিউমার্কেটের বি- ব্লকের দশ তলা নির্মাণ প্রকল্প। এছাড়া একই সময়ে প্রধানমন্ত্রী মুরাদপুর থেকে লালখান বাজার পর্যন্ত প্রায় সাড়ে পাঁচ কিলোমিটার দীর্ঘ ফ্লাইওভারের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করবেন। এ প্রকল্পে ব্যয় হবে ৪৬২ কোটি টাকা।
পটিয়া পৌরসভা, রাউজান উপজেলায় ২৫ মেগাওয়াট ডুয়েল ফুয়েল বিদ্যুৎ প্লাণ্ট, রাঙ্গুনিয়া উপজেলায় শেখ রাসেল অ্যাভিয়ারি অ্যান্ড ইকো পার্ক, রাউজানে মহাকবি নবীন চন্দ্র সেন স্মৃতি কমপ্লেক্স, সীতাকুন্ডের কুমিরা ফেরিঘাটের জেটি, মিরসরাই উপজেলা অডিটরিয়াম কাম কমিউনিটি সেন্টার, পটিয়ায় গোবিন্দরখালী সুপার মার্কেট কাম-কমিউনিটি সেন্টার, ফটিকছড়ি উপজেলার ফতেহপুর কমিউনিটি সেন্টার প্রকল্প।
এছাড়া নগরীর বিবিরহাটে আধুনিক খাদ্য পরীক্ষাগার, চান্দগাঁও আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিস ভবন, রিজবিয়া সিদ্দিকীয়া দাখিল মাদ্রাসা বহুমুখী ঘূর্ণিঝড় আশ্রয় কেন্দ্র, বাঁশখালী বহুমুখী ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্র, পশ্চিম বাঁশখালী উপকূলীয় ডিগ্রি কলেজ বহুমুখী ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্র, পটিয়া পৌরসভা বাস টার্মিনাল ও পটিয়া পৌর অডিটরিয়ামের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করবেন।
দুপুরে চট্টগ্রাম সেনানিবাস দরবারে অংশগ্রহণ ও বিকালে ভাটিয়ারি মিলিটারি একাডেমিতে বঙ্গবন্ধু কমপ্লেক্সের উদ্বোধন শেষে প্রধানমন্ত্রীর ঢাকা ফেরার কথা রয়েছে।